পলি ‍উরমিগার, সেকালের ব্যাটিং স্তম্ভ

ছেলেও বাবার মত বাধ্য হয়ে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে বিএসসি ডিগ্রী লাভ করেন। তবে স্রষ্টা প্রদত্ত প্রতিভাকেই বা কী করে অস্বীকার করবেন। কলেজের হকি ও ফুটবল দলে বেশ আধিপত্য ছেলের। তবে সেগুলো শুধুই ভালোলাগা থেকে। তাঁর আসল নেশা যে ওই ক্রিকেট ব্যাটটা। যেই ব্যাটের কীর্তিতে হয়ে উঠবেন ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা।

বিংশ শতাব্দীর শুরুর দশক গুলোতে বোম্বের ক্রিকেটে পারসি সম্প্রদায়ের বেশ দাপট। তবে কাপড়ের ব্যবসায়ী বাবা ছেলের পড়াশোনার ব্যাপারে ভীষণ সিরিয়াস।

ছেলেও বাবার মত বাধ্য হয়ে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে বিএসসি ডিগ্রী লাভ করেন। তবে স্রষ্টা প্রদত্ত প্রতিভাকেই বা কী করে অস্বীকার করবেন। কলেজের হকি ও ফুটবল দলে বেশ আধিপত্য ছেলের। তবে সেগুলো শুধুই ভালোলাগা থেকে। তাঁর আসল নেশা যে ওই ক্রিকেট ব্যাটটা। যেই ব্যাটের কীর্তিতে হয়ে উঠবেন ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা।

কয়েক দশক বাদে ক্রিকেটীয় অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ পাবেন পদ্মশ্রী পদক। যার নামে ভারতের একটি জাতীয় বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টের নামকরণ করা হবে; পলি উমরিগার ট্রফি। তিনি ভারতের ব্যাটিং গ্রেট পলান রতনজি উমরিগার।

পারসিদের হয়েই ১৯৪৪ সালে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তাঁর। সেই সময় বোম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনায়কের দায়িত্বেও ছিলেন তিনি। ১৯৪৮ সালের অক্টোবরে সম্মিলিত বিশ্ববিদ্যালয় দলের হয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলতে নামেন উমরিগার। সেই ম্যাচে ১১৫ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। এর ফল স্বরূপ ২২ বছর বয়েসে তাঁর দুই মাস পরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই ভারতের হয়ে অভিষিক্ত হন এই ক্রিকেটার। লম্বা ক্যারিয়ার শেষে ১৯৬২ সালে এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই খেলেন তাঁর শেষ আন্তর্জাতিক টেস্ট ম্যাচও।

তাঁর পরের দুই মৌসুমে কমনওয়েলথের দুটি দল আসে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট খেলার জন্য। সেই দুটি দলের বিপক্ষে যথাক্রমে ২৭৬ ও ৫৬২ রান তোলেন তিনি। সেই সময়ে এক অদম্য সাহসী তরুণকে খুঁজে পায় ভারতীয় ক্রিকেট। মাদ্রাজ টেস্টে ফ্রাঙ্ক ওরেলের বলে পরপর দুটি ছয় মেরে নিজের সেঞ্চুরি পূরণ করেন এই ব্যাটসম্যান।

তবে পরের বছর সফরকারী ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে খুবই বাজে সময় পাড় করেন তিনি। চার টেস্টে মাত্র ১১৩ রান করলে পঞ্চম টেস্টে দল থেকে বাদ পড়েন তিনি। তবে শেষ মুহুর্তে হিমু অধিকারী ইনজুরিরে পড়লে দলে জায়গা পান তিনি। সেই ম্যাচে সাত নম্বরে ব্যাট করতে নেমে খেলেন ১৩০ রানের ইনিংস। ওই ইনিংসে ভর করে ভারত তাঁদের ইতিহাসের প্রথম জয়ের সন্ধান পায়।

১৯৫২ সালে ইংল্যান্ড সফরে গিয়ে আবার খারাপ সময় পাড় করেন তিনি। টেস্টে সাত ইনিংসে ৬.১৪ গড়ে করেছিলেন মাত্র ৪৩ রান। সেই সফরে ফ্রেড ট্রুম্যানের বিপক্ষে রীতিমত ব্যাট হাতে কাঁপতে দেখা যায় তাঁকে। একেবারে আনকোরা ব্যাটসম্যানদের মত এই বোলারকে খেলেছিলেন তিনি। তবে ১৯৫৯ সালে এই ট্রুম্যানের ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই ম্যানচেস্টারে সেঞ্চুরি করেছলেন পলি উমরিগার।

১৯৫৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে তখনকার ভয়ানক ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বিপক্ষে করেন মোট ৫৬০ রান। এতে ছিল দুইটি সেঞ্চুরি ও চারটি আফ সেঞ্চুরি। এবারে সনি রামাদিনের বলে ছয় মেরে পোর্ট অব স্পেনে সেঞ্চুরি করেন তিনি।

১৯৫৫ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতের অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পান তিনি। এরপর টানা তিন বছর মোট আটটি টেস্টে ভারতকে নেতৃত্ব দেন তিনি। এরমধ্যে দুটি টেস্টে নিউজিল্যান্ডকে ইনিংস ব্যবধানে হারায় ভারত। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেই হায়দ্রাবাদে প্রথম ভারতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরি করার কৃতিত্ব গড়েন।

বোলার হিসেবেও বেশ কার্যকর ছিলেন উমরিগার। তাঁর ঝুলিতে ৩৫ টি টেস্ট উইকেট ও আছে। ১৯৬২ সালে যখন অবসর নেন তখন ভারতে হয়ে খেলেছেন মোট ৫৯ টি টেস্ট। সেখানে ৪২.২২ গড়ে করেছেন ৩৬৩১ রান। অবসরের সময় ভারতের ব্যাটিং এর মোটামুটি সব রেকর্ডই ছিল তাঁর দখলে। সেই সময়ে ভারতের সর্বোচ্চ টেস্ট রানের মালিক ছিলেন তিনি। টেস্টে সর্বোচ্চ ১২ টি সেঞ্চুরিরও মালিক ছিলেন তিনি। প্রায় দেড় যুগ পরে উমরিগারের এই রেকর্ড গুলো ভাঙেন ভারতের আরেক কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান সুনীল গাভস্কার।

অবসরের পরেও তিনি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৮ থেকে ১৯৮২ সাল অবধি তিনি ভারতের জাতীয় দলের নির্বাচকমন্ডলীর সভাপতি ছিলেন। অতঃপর দীর্ঘদিন ক্যান্সারের সাথে লড়ে ২০০৬ সালে মুম্বাইয়ে মৃত্যু বরণ করেন তিনি।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...