আড্ডাবাজ এক কিংবদন্তি

গ্যারিঞ্চা যে কারণে রিয়াল মাদ্রিদকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন সেটার কারণটা শুনলে চোখ কপালে উঠতে বাধ্য। গ্যারিঞ্চা ছিলেন প্রচণ্ড রকমের আড্ডাবাজ একজন মানুষ। পুরো নাম ম্যানুয়েল ফ্র্যান্সিসকো দ্যস স্যান্তোস, পরিচিত ছিলেন মানে গ্যারিঞ্চা নামে। খেলা শেষে বন্ধু বান্ধব নিয়ে মদের আড্ডাতেই ব্যস্ত থাকতেন। কাজেই যখন তিনি বুঝতে পারলেন যে মাদ্রিদে গেলে এই বিষয়গুলোকে জলাঞ্জলী দিতে হবে তখন তিনি বিনয়ের সাথে প্রস্তাবটা প্রত্যাখ্যান করলেন।

রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে নাকি তিনি খেলার প্রস্তাব পেয়েছিলেন। তা সে তো অনেক বড় খেলোয়াড়রাই পায়। এটা বড় বিষয় হলেও দূর্লভ কোন বিষয় না। ব্রাজিলের মানে গ্যারিঞ্চা না কি তাদেরকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, সেটাও তো খুব বড় কোন বিষয় না। বড় খেলোয়াড়েরা নিজেদের মতো করে ক্যারিয়ারের পলিকল্পনা করতেই পারেন।

তবে গ্যারিঞ্চা যে কারণে রিয়াল মাদ্রিদকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন সেটার কারণটা শুনলে চোখ কপালে উঠতে বাধ্য। গ্যারিঞ্চা ছিলেন প্রচণ্ড রকমের আড্ডাবাজ একজন মানুষ। পুরো নাম ম্যানুয়েল ফ্র্যান্সিসকো দ্যস স্যান্তোস, পরিচিত ছিলেন মানে গ্যারিঞ্চা নামে। খেলা শেষে বন্ধু বান্ধব নিয়ে মদের আড্ডাতেই ব্যস্ত থাকতেন। কাজেই যখন তিনি বুঝতে পারলেন যে মাদ্রিদে গেলে এই বিষয়গুলোকে জলাঞ্জলী দিতে হবে তখন তিনি বিনয়ের সাথে প্রস্তাবটা প্রত্যাখ্যান করলেন।

ক্যারিয়ার নিয়ে সাংঘাতিক রকমের খামখেয়ালী ছিলেন গ্যারিঞ্চা। একটা সময় কিং পেলের সাথে সেরার প্রতিযোগিতা হতো তার। বলা হয়ে থাকে তিনি নাকি সর্বকালের সেরা ড্রিবলার। সুযোগ পেলেই বল নিয়ে ড্রিবলিং করতেন এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাতে সফলই হতেন। ব্যানানা শটের জন্য বিখ্যাত ছিলেন, এমনকি এই শটে নাকি কর্ণার থেকে গোলও করেছেন।

ক্লাবের হয়ে সিনিয়র প্রথম ম্যাচেই করেছিলেন হ্যাটট্রিক। জাতীয় দলের হয়ে তার অভিষেকের প্রথম তিন মিনিটকে বলা হয় ‘দি গ্রেটেস্ট থ্রি মিনিটস ইন ফুটবল হিস্ট্রি’। ম্যাচ শুরুর এক মিনিটের কম সময়ের মাঝেই বিপক্ষে দলের তিনজনকে কাটিয়ে গোল পোস্টে শট নেন, কিন্তু পোস্টে লেগে বল ফেরত আসে। এর পর মূহুর্তেই পেলেকে একটা পাস দেন, পেলের সেই শটও পোস্টে লেগে ফিরে আসে। এরপরেও আরো কয়েকটা আক্রমণ করে প্রতিপক্ষকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখেন।

তবে তার ক্যারিয়ারের হাইলাইটিং মোমেন্ট হচ্ছে ১৯৬২ এর বিশ্বকাপ। পেলে ইনজুরিতে পড়ার পর দায়িত্ব পড়লো তার কাধে। কোয়ার্টারে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩-২ গোলে জেতা ম্যাচে করলেন ২ গোল আর সেমিতে চিলির বিপক্ষে ৪-২ গোলে জেতা ম্যাচে করলেন আরো ২ গোল। ফাইনালে প্রচন্ড জ্বর নিয়ে খেললেন, নিজে গোল করতে পারেননি কিন্তু জিটো আর ভাভাকে দিয়ে গোল করালেন। বিশ্বকাপ জিতে নিল ব্রাজিল, নিজে জিতলেন গোল্ডেন বল আর গোল্ডেন বুট।

১৯৬৬ বিশ্বকাপও খেলেছিলেন। ইনজুরি নিয়ে খেলেও বুলগেরিয়ার বিপক্ষে ১ টা গোল করেন, কিন্তু পরের ম্যাচে হাঙ্গেরির সাথে ৩-১ গোলে হেরে যায় ব্রাজিল। জাতীয় দলের ক্যারিয়ারে ওই একটাই পরাজয়। এমনি এমনি তো আর কেউ কেউ তাঁকে পেলের চেয়েও ওপরে রাখেন না।

আমাদের প্রজন্ম মনের আনন্দে খেলা রোনালদিনহোর খেলা দেখেছেন। ৬০ এর দশকে গ্যারিঞ্চা ছিলেন তেমনই একজন খেলোয়াড়। ক্ষণজন্মা এই ফুটবলার ১৯৮৩ সালের ২০ জানুয়ারী মাত্র ৪৯ বছর বয়সে মৃত্যূবরণ করেন। ব্রাজিল তাঁর নায়ককে ভোলেনি, রাজধানী ব্রাসিলিয়ার প্রধান ফুটবল স্টেডিয়ামের নাম করণ করা হয়েছে এই গ্যারিঞ্চারই নামে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...