ডিউ টু পিচ কন্ডিশন!

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পরিত্যক্ত হতে দেখা যায় বৃষ্টি, ফ্লাডলাইট কিংবা প্রাকৃতিক নানান বিপর্যয়ে। কিন্তু পিচের কারণে? শুনতে অস্বাভাবিক লাগতে পারে। আজ শোনাবো এমন ম্যাচগুলোর কথা যেগুলো বাতিলের কারণ- ‘ডিউ টু পিচ কন্ডিশন!'

ক্রিকেটের সবচেয়ে আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হলো ‘পিচ’। হোম অ্যাডভান্টেজ নিয়ে স্বাগতিক দল নিজেদের মতো করে পিচ বানিয়ে ধরাশায়ী করে বিপক্ষকে। পিচের গতিবিধি নির্ধারণ করে ম্যাচের গতিপথ। কখনো নিজেদের পাতা পিচের ফাঁদে নিজেরাই কাটা পড়ে। এসব খেলারই অংশ। যেমনটা মাঝে মধ্যে ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পরিত্যক্ত হতে দেখা যায় বৃষ্টি, ফ্লাডলাইট কিংবা প্রাকৃতিক নানান বিপর্যয়ে। কিন্তু পিচের কারণে? শুনতে অস্বাভাবিক লাগতে পারে। আজ শোনাবো এমন ম্যাচগুলোর কথা যেগুলো বাতিলের কারণ- ‘ডিউ টু পিচ কন্ডিশন!’

  • ভারত-শ্রীলঙ্কা (১৯৯৭): নেহরু স্টেডিয়াম, ইন্দোর

ইন্দোরের নেহেরু স্টেডিয়ামে ১৯৯৭ সালের ওই ম্যাচ পরিত্যক্ত হয় দুই দলের সম্মতিতে। খেলার স্থায়িত্ব ছিল তিন ওভারেরও কম! এরমধ্যেই লঙ্কান ওপেনার মাহানামার কাঁধে আঘাত হানে বোলার শ্রীনাথের একটি ডেলিভারি। এতে সে ফিল্ড আম্পায়ারের কাছে আবেদন করে। ম্যাচ রেফারি প্রথমে খেলা এক ঘণ্টার জন্য স্থগিত রাখেন। কিন্তু পিচ এতটাই ক্র্যাকড ছিল যে, ব্যাটিং করা রীতিমতাে দুঃসাধ্য ও বিপজ্জনক হয়ে গিয়েছিল। এরপর তাই খেলা বন্ধ করে দেয়া হয়।

  • ভারত-শ্রীলঙ্কা (২০০৯): ফিরোজ শাহ কোটলা, দিল্লী

২০০৯ সালের ২৭ ডিসেম্বর। টস জিতে লঙ্কানদের ব্যাটিংয়ে পাঠায় ভারত। এক পর্যায়ে ৮৩ রানে পতন ঘটায় ৫ উইকেটেরও। তবু ম্যাচ বাতিল! দিল্লির ফিরোজ শাহ কোটলা স্টেডিয়াম সেদিন ভরা ছিল এলেবেলে ঘাসের আবরণে। বোলিংটা ঠিকঠাক হচ্ছিল না। সাধারণ ডেলিভারিগুলোও যাচ্ছিল খুব স্লোলি। হুটহাট আবার বাউন্সার ওঠে। ক্রিজে থাকা দুই ব্যাটসম্যান জয়াসুরিয়া-দিলশান কষ্টই পাচ্ছিলেন খেলতে। ম্যাচ অফিসিয়ালরা বাধ্য হয়ে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে দেন খেলা।

  • গ্ল্যামারগন-নর্থহান্টস (২০১৫): সোয়াল্ক স্টেডিয়াম, কার্ডিফ

২০১৫ সালের আগস্টে কার্ডিফের সোয়াল্ক স্টেডিয়ামে লিস্ট এ’তে মুখোমুখি গ্ল্যামারগন বনাম নর্থহান্টস। ম্যাচ রেফারি পিচ-কে কি বলে আখ্যা দিয়েছিল জানেন? ‘ডেঞ্জারাস পিচ’ বলে! অস্বাভাবিক বাউন্সি আচরণে পিচ আক্ষরিক অর্থেই হয়ে উঠেছিল ভয়ানক। খেলা চালানো দুঃসাধ্য হয়ে ওঠায় একসময় বন্ধই করতে হয় ম্যাচ!

  • ওয়েস্ট ইন্ডিজ-ইংল্যান্ড টেস্ট (২০০৯): স্যার ভিভ রিচার্ডস ক্রিকেট স্টেডিয়াম, অ্যান্টিগা

অ্যান্টিগার ‘স্যার ভিভ রিচার্ডস ক্রিকেট স্টেডিয়াম’- এ ওয়েস্ট ইন্ডিজ বনাম ইংল্যান্ডের সেকেন্ড টেস্টটা কুখ্যাত ‘শর্টেস্ট টেস্ট ম্যাচ’ হিসেবে! দুই অধিনায়ক গেইল ও স্ট্রাউস-এর সঙ্গে কথা বলে মাঠের দুই আম্পায়ার যখন ম্যাচ বাতিল ঘোষণা করেন তখন স্কোর বোর্ড দেখালো, খেলা হয়েছে মাত্র এক ওভার চার বল! এমনটিই ঘটে ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে।

খেলার মাত্র দ্বিতীয় বলের পর আঘাত হানে বৃষ্টি। ২০ মিনিট বন্ধ থেকে আবার খেলা মাঠে গড়ানোর পর আউট ফিল্ড যেন পরিণত হয় বালির আচ্ছাদনে। বোলারদের বোলিংয়ে সমস্যা আর নিরাপত্তা বিবেচনায় এনে ম্যাচ অফিসিয়ালরা খেলা চালিয়ে যাননি। শুধু তা নয়, এমন কাণ্ডের পর এ মাঠে আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনে স্থগিতাদেশ জারি করে আইসিসি!

  • ওয়েস্ট ইন্ডিজ-ইংল্যান্ড (১৯৯৮): স্যাবাইনা পার্ক, জ্যামাইকা

১৯৯৮ সালের ২৯ জানুয়ারি। টেস্ট ক্রিকেটে নজিরবিহীন একটি দিন। সেদিনই প্রথমবার পরিত্যক্ত হয় কোনো ম্যাচ তাও পিচের কারণে! প্রথম পরিত্যক্ত হওয়া ম্যাচের সঙ্গেও জড়িত ওয়েস্ট ইন্ডিজ-ইংল্যান্ডের নাম। জ্যামাইকার স্যাবাইনা পার্কের ক্রিকেট গ্রাউন্ডে দুই দলের দলপতি ও ম্যাচ রেফারির সঙ্গে কথা বলে দায়িত্বরত আম্পায়ার স্টিভ বাকনার এবং এস ভেংকটরাঘবন মিলে বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় ম্যাচের বয়স সবে ১০ ওভার এক বল!

ইংলিশদের সংগ্রহ তিন উইকেট হারিয়ে ১৭ রান। ওই সময়ের পত্রপত্রিকায় বিশেষজ্ঞজনরা ওই পিচকে আখ্যা দিয়েছিলেন ‘নিকৃষ্ট পিচ’ হিসেবে! খেলার জন্য একেবারেই অনুপযোগী এমন পিচের ব্যর্থতার দায়ভার নিজের কাঁধে নিয়ে তৎকালীন ক্যারিবিয়ান ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি প্যাট রোসেয়িও রাজ্যবাসীর পক্ষ থেকে ক্ষমা চেয়েছিলেন সবার কাছে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...