বোচেল্লির সুরে ফুটবল

ইতালির এক ছোট্ট গ্রামে জন্ম হওয়ার আগেই এই পৃথিবীর সাথে যুদ্ধ করে চলেছেন তিনি। পৃথিবীতে আসার পর সেই যুদ্ধ আরো সহিংস হয়েছে। ছোটবেলার প্রথম প্রেম ফুটবলকেও হারিয়েছেন ভাগ্যের লিখনে। তারপর ওই পিয়ানো, অপেরার সুর হয়ে ফিরে এসেছেন কিংবদন্তি হয়ে। যার সুরে মাতোয়ারা হয়েছে গোটা বিশ্ব। ছোটবেলায় হারানো ফুটবলে ফিরে ফিরে এসেছেন বারংবার। যত কষ্টই দিক, ফুটবল যে আন্দ্রেয়া বোচেল্লির প্রথম প্রেম।

বছরব্যাপী অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়েছে। পর্দা উঠেছে ইউরো ২০২০-এর। ইতালির বিখ্যাত শহর রোমে জমকালো উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে পর্দা উঠে এই আসরের। সেই অনুষ্ঠানে ছিলেন ইতালির জনপ্রিয় এক অপেরা শিল্পি। তাঁর সুরে যেনো মুখোরিত হয়ে উঠেছিল গোটা রোম শহর। সেই সুর পৌছেছে এবারের স্বাগতিক ১১ শহরে, পৌছেছে গোটা বিশ্বেই। ফুটবলপ্রেমীরা এই শিল্পীকে নতুন করে চিনলেও তাঁর সাথে ফুটবলের প্রেমটা যে বহুকালের।

ইতালির এক ছোট্ট গ্রামে জন্ম হওয়ার আগেই এই পৃথিবীর সাথে যুদ্ধ করে চলেছেন তিনি। পৃথিবীতে আসার পর সেই যুদ্ধ আরো সহিংস হয়েছে। ছোটবেলার প্রথম প্রেম ফুটবলকেও হারিয়েছেন ভাগ্যের লিখনে। তারপর ওই পিয়ানো, অপেরার সুর হয়ে ফিরে এসেছেন কিংবদন্তি হয়ে। যার সুরে মাতোয়ারা হয়েছে গোটা বিশ্ব। ছোটবেলায় হারানো ফুটবলে ফিরে ফিরে এসেছেন বারংবার। যত কষ্টই দিক, ফুটবল যে আন্দ্রেয়া বোচেল্লির প্রথম প্রেম।

১৯৫৮ সালে মা-বাবার কোল আলো করে পৃথিবীতে আসার আগেই তাঁকে ছুড়ে ফেলতে বলেছিল ডাক্তাররা। তাঁরা আগেই বুঝেছিলেন বোচেল্লির নিয়তি। কোনো একটি শারীরিক অক্ষমতা নিয়েই পৃথিবীতে আসবেন সেটা তাই আগেই বলে দিয়েছিলেন না ডাক্তার। তবুও বোচেল্লির মা তাঁর সন্তানের মুখ দেখতে চেয়েছিলেন। পৃথিবীতে আসার পর যদি একটা দিন ও বাঁচে তবুও তো তাঁর সন্তান।

মায়ের তীব্র ইচ্ছায় বোচেল্লি অবশেষে পৃথিবীর আলো দেখলেন। তবে ছয় মাস বসেই প্রথম ডাক্তারদের কথার প্রমাণ পেলো পরিবারটি। বোচেল্লি আক্রান্ত হলেন কনজেনিটাল গ্লাউকমায়। তবে এই জটিল অসুখ নিয়েই বড় হতে থাকা বোচেল্লি দিন দিন ভালোবাসতে শুরু করলেন ফুটবলকে। ছয়বছর বয়স থেকে টুকটাক গানও করেন তবে ফুটবল রেখে গানে মনোযোগ দেবার সুযোগ কই।

কিন্তু ১২ বছর বয়সে এই ফুটবলই যেনো কাল হয়ে এলো বোচেল্লির জীবনে। গোলকিপিং করার সময় বল তাঁর চোখে আঘাত করে। ওদিকে তাঁর আগে থেকে বাসা বাঁধা রোগের কারণে আর দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাননি বোচেল্লি। তবে অন্ধ হয়ে নিজেকে বন্দী করে রাখেননি তিনি। ছয় বছর বয়সে শিখা পিয়ানোই এখন তাঁর সঙ্গী। এরপর একে একে শিখেন বাঁশি, সেক্সোফোন, গিটার, ড্রামস ও আরো নানা বাদ্যযন্ত্র।

নিজের গ্রাম থেকেই আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পড়তে থাকে বোচেল্লির সুর। গ্রামের আশেপাশে সেইসময় কনসার্ট ও করতেন তিনি। ১৯৮২-১৯৯৪ এই সময়টার মধ্যে ১৫ টি একক অ্যালবাম বের করেন তিনি। সবমিলিয়ে পুরো পৃথিবী জুড়ে তাঁর অ্যালবামের ৭৫ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়। তাঁর ক্লাসিক্যাল অ্যালবাম স্যাক্রেড অ্যারিয়ান পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি কপি বিক্রি হয়। ১৯৯৪ সালের পর থেকে তাঁর জনপ্রিয়তা যেনো আকাশ ছুঁয়েছিল।

তবে এতকিছুর মাঝেও ফুটবলকে ভোলেননি বোচেল্লি। নিয়মিত রেডিওতে ফুটবলে ধারাভাষ্য শুনতেন। ২০১০ সালে তাঁর পছন্দের দল ইন্টার মিলন যখন চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জিতলো তখন বোচেল্লি উন্মাদনা দেখে কে। এছাড়া ২০০৬ ও ২০১০ বিশ্বকাপেও দেখা গেছে এই অপেরা শিল্পীকে। এবছর ইউরোও মাতালেন তাঁর সুরে। ফুটবলে তিনি বারবার ফিরে আসবেনই। ফুটবলটা খেলতে না পারার আক্ষেপ হয়তো অপেরা সুরেই জানান দেন এই কিংবদন্তি।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...