দ্য গ্রেট প্রেশার হ্যান্ডলার

শুধু ব্যাটিং কেন, বল হাতেও দারুণ ইফেক্টিভ ছিলেন সাইমো। অফ স্পিন, মিডিয়াম পেস দুটোই পারতেন। ফিফথ বোলার হিসেবে রেগুলার ব্রেকথ্রুও এনে দিতেন। তাছাড়া ফিল্ডার হিসেবেও সাইমো ছিলেন সময়ের সেরাদের একজন। জন্টি রোডস, হার্শেল গিবস, রিকি পন্টিং, মোহাম্মদ কাইফদের সাথে সমস্বরে উচ্চারিত হত সাইমন্ডসের নামটাও।

২০০৩, ২০০৭ বিশ্বকাপ এবং ২০০৬ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিজয়ী অস্ট্রেলিয়া দলের অপরিহার্য সদস্য, ওয়ানডে ক্রিকেটের সেরা ইম্প্যাক্ট খেলোয়াড়দের একজন হলেন অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস। তাঁর হার্ড হিটিং অ্যাবিলিটি, বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রান তোলার ক্ষমতা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। ওয়ানডেতে প্রায় ৪০ গড়ে, ৯২ স্ট্রাইক রেটে সাইমন্ডসের সংগ্রহ ৫০৮৮ রান। হাঁকিয়েছেন ছয়টা সেঞ্চুরি, ৩০টা হাফ সেঞ্চুরি।

শুধু ব্যাটিং কেন, বল হাতেও দারুণ ইফেক্টিভ ছিলেন সাইমো। অফ স্পিন, মিডিয়াম পেস দুটোই পারতেন। ফিফথ বোলার হিসেবে রেগুলার ব্রেকথ্রুও এনে দিতেন। তাছাড়া ফিল্ডার হিসেবেও সাইমো ছিলেন সময়ের সেরাদের একজন। জন্টি রোডস, হার্শেল গিবস, রিকি পন্টিং, মোহাম্মদ কাইফদের সাথে সমস্বরে উচ্চারিত হত সাইমন্ডসের নামটাও।

সাইমন্ডসের স্পেশালিটি ছিল বিগ ম্যাচে, বিগ অকেশনে, দলের ক্রাইসিস মোমেন্টে জ্বলে ওঠার ক্ষমতা। আমার মতে অ্যাডাম গিলক্রিস্টের পর সাইমন্ডসই ছিলেন ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়ার সবচাইতে ইম্প্যাক্টফুল প্লেয়ার। মাইকেল বেভানের মত ‘ফিনিশার’ না হলেও সাইমন্ডসের প্রেশার হ্যান্ডল করার দক্ষতা ছিল অতুলনীয়।

যদিও, সব কিছুই এখন অতীত। মাত্র ৪৬ বছর বয়সেই জীবন নদীর ওপারে চলে গেছেন তিনি। এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি বিদায় বলেন পৃথিবীকে। চলে গেলেও তাঁর কীর্তিগুলো টিকে গেছে। সাইমন্ডস কেন বিগ স্টেজ পারফরমার সেটা বোঝাতে আমি কয়েকটা উদাহরণ দিচ্ছি।

  • ২০০৩ বিশ্বকাপ, গ্রুপ পর্যায়, প্রতিপক্ষ পাকিস্তান

সাইমন্ডস যখন নামলেন, অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ৮৫/৪। সেখান থেকে দলীয় সংগ্রহটাকে তিনি নিয়ে গেলেন ৩১০ রানে। ওয়াসিম, ওয়াকার, শোয়েব, সাকলাইনদের পিটিয়ে করলেন ১২৫ বলে অপরাজিত ১৪৩! অস্ট্রেলিয়া জিতল ৮২ রানে।

  • ২০০৩ বিশ্বকাপ, সেমিফাইনাল, প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা

মাত্র ৫১ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া তখন মারাত্মক চাপে। এমন সময় নেমে সাইমন্ডস করলেন ১১৮ বলে অপরাজিত ৯১ রান। ২১২ রানের মোটামুটি ফাইটিং একটা স্কোর দাঁড় করাল অস্ট্রেলিয়া। শেষ পর্যন্ত জিতল ৪৮ রানে।

  • ২০০৪ ভিবি সিরিজ, ফাইনাল, প্রতিপক্ষ ভারত

৪২তম ওভারে অস্ট্রেলিয়ার রান ২৪৮/৪। ছয়ে নেমে সাইমন্ডস উপহার দিলেন ৩৯ বলে ৬৬ রানের ক্যামিও। ৩৫৯ রানের পাহাড় গড়ল অস্ট্রেলিয়া। জবাবে ইন্ডিয়া অলআউট হয় মাত্র ১৫১ রানে!

  • ২০০৪ ভিডিওকন কাপ, ফাইনাল, প্রতিপক্ষ পাকিস্তান

লো স্কোরিং ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া করেছিল ১৯২/৭। পাঁচ নম্বরে নামা সাইমন্ডসের ব্যাট থেকে আসে ৩৬ বলে ৪১। তারপর ৭ ওভার বোলিং করে মাত্র ২৫ রানে নেন ২ উইকেট। পাকিস্তান অলআউট হয় ১৭৫ রানে।

  • ২০০৫ সিবি সিরিজ, ফাইনাল, প্রতিপক্ষ পাকিস্তান

এনাদার লো স্কোরিং থ্রিলার। সাইমন্ডস যখন নামলেন, অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ৫৩/৩। খেললেন ১০১ বলে ৯১ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। অস্ট্রেলিয়া পেল ২৩৭ রানের পুঁজি। পাকিস্তান হেরেছিল মাত্র ১৮ রানে।

  • ২০০৫-০৬ চ্যাপেল হ্যাডলি ট্রফি, সিরিজ নির্ধারণী দ্বিতীয় ওয়ানডে, প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড

অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ তখন ৫০/৩, আট ছক্কা বারো চারে সাইমন্ডস করলেন ১২৭ বলে ১৫৬! দলীয় স্কোর নিয়ে গেলেন ৩২২ রানে। হাই স্কোরিং থ্রিলারে শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া জিতেছিল মাত্র ২ রানে!

  • ২০০৬ ভিবি সিরিজ, ফাইনাল, প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা

অস্ট্রেলিয়ার রান ১০/৩। সাইমন্ডস নেমে করলেন ১২৭ বলে ১৫১! দলীয় সংগ্রহটা (৩৬৮/৫) চলে গেল ধরাছোঁয়ার বাইরে। জবাবে শ্রীলঙ্কা অলআউট মাত্র ২০১ রানে।

  • ২০০৬ ডিএলএফ কাপ, ফাইনাল, প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ

অস্ট্রেলিয়ার রান ৮০/৩। সাইমন্ডস নেমে করলেন ৫২ বলে ৫৯, দলকে এনে দিলেন ২৪০ রানের লড়াকু পুঁজি। জবাবে উইন্ডিজ অলআউট ২১৩ রানে।

  • ২০০৬ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, সেমিফাইনাল, প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড

অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ১২৩/৪। সাইমন্ডস নেমে করলেন ৫৮ বলে ৫৮। অস্ট্রেলিয়ার দেয়া ২৪১ রানের টার্গেটে কিউইরা থামল ২০৬ রানে।

  • ২০০৭ সালের ওয়ানডে সিরিজ, প্রতিপক্ষ ভারত

দ্বিতীয় ওয়ানডে, কোচি: সাইমন্ডস ৮৩ বলে ৮৭, ম্যাচ সেরা।

তৃতীয় ওয়ানডে, হায়দ্রাবাদ: সাইমন্ডস ৬৭ বলে ৮৯, ম্যাচ সেরা।

ষষ্ঠ ওয়ানডে, নাগপুর: সাইমন্ডস ৮৮ বলে অপরাজিত ১০৭, ম্যাচ সেরা।

সিরিজ: অস্ট্রেলিয়া (৪-২)

সিরিজ সেরা: অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস (৩৬৫ রান)

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...