স্কটল্যান্ডের পঞ্চপাণ্ডব

একদিনের ক্রিকেটে জিম্বাবুয়ে, শ্রীলঙ্কা, ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও আফগানিস্তানের মত টেস্ট খেলিয়ে দেশকে হারিয়ে বিশ্বমঞ্চে মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টায় স্কটিশ ক্রিকেট। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও ‘বড়’-দের হারাতে বদ্ধপরিকর স্কটল্যান্ড একদিনের ক্রিকেটে আরো ধারাবাহিক হয়ে আর সেই ব্র্যান্ডের ক্রিকেটটাকে ধরে রেখে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার আশায় বিভোর।

ইংল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের পরে ইউরোপের ক্রিকেটে আরো দুই শক্তি হয়ে উঠে আসতে চাওয়া স্কটল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডস আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ইদানীং ক্রমাগত ছাপ ফেলে চলেছে। এর মধ্যে স্কটল্যান্ড বিশ্বকাপের মত মঞ্চে কোনোদিনই দারুণ কিছু করতে না পারলেও ২০১৬ সাল থেকেই এক অন্য ব্র্যান্ডের ক্রিকেট উপহার দিয়ে চলেছে।

একদিনের ক্রিকেটে জিম্বাবুয়ে, শ্রীলঙ্কা, ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও আফগানিস্তানের মত টেস্ট খেলিয়ে দেশকে হারিয়ে বিশ্বমঞ্চে মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টায় স্কটিশ ক্রিকেট। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও ‘বড়’-দের হারাতে বদ্ধপরিকর স্কটল্যান্ড একদিনের ক্রিকেটে আরো ধারাবাহিক হয়ে আর সেই ব্র্যান্ডের ক্রিকেটটাকে ধরে রেখে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার আশায় বিভোর। এই স্কটিশ দলের যে পাঁচজন দলের চালিকাশক্তি হয়ে অন্যমাত্রা যোগ করেছেন সেই পঞ্চপান্ডবদের থাকছেন এবারের আয়োজনে।

  • কাইল কোয়েৎজার

স্কটল্যান্ড ক্রিকেটে ব্যাটিংয়ের এক বড়ো ভরসা কোয়েৎজার, স্কটিশ ক্রিকেট সার্কিটে যাঁর আদরের নাম ‘কোস্তা’। বর্তমান স্কটিশ দলের অধিনায়ক, যিনি ২০১৭ সালে অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর প্রথম ম্যাচেই জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে অনবদ্য শতরান করে প্রথম কোনো টেস্ট খেলিয়ে দেশের বিরুদ্ধে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে জয় ছিনিয়ে আনেন।

তার আগে ২০১৫ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তাঁর অনবদ্য ১৫৬ রানের ইনিংসটি মাঠে মারা যায়, দলের বোলিং ব্যর্থতার জন্য। ২০১৮ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে স্কটল্যান্ডের ঐতিহাসিক ওয়ানডে জয়েও ৫৮ রানের দারুন ইনিংস খেলেন কোয়েৎজার। ব্যাট হাতে দুর্দান্ত কোয়েটজার ফিল্ডিংএও দলের অন্যতম সেরা, ২০০৯ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তাঁর ধরা একটি ক্যাচ অন্যতম সেরার মর্যাদা পায়।

সাদা বলের দুই ফরম্যাটেই ৬০ এর মতো ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞ কোয়েটজার অ্যাসোসিয়েট জগতের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান, একদিনের ক্রিকেটে ৪৩ গড়ে চার সেঞ্চুরি সমেত প্রায় আড়াই হাজার রান ও টি-টোয়েন্টিতে প্রায় ২৬ গড়ে ১৫০০ রান তারই প্রমান দেয়।

  • ক্যালাম ম্যাকলিওড

মিডিয়াম ফাস্ট বোলার হিসাবে ক্যারিয়ার শুরু করা ম্যাকলিওড বর্তমানে স্কটিশ দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। ভাগ্যিস বোলিং অ্যাকশনে সমস্যা হওয়ায় ব্যাটিংয়ে মনোযোগ দিয়েছিলেন, না হলে একদিনের ক্রিকেটে আট সেঞ্চুরি সমেত দুই হাজারের ওপর রান করা ম্যাকলিওডকে পাওয়া থেকে বঞ্চিতই হতো ক্রিকেট বিশ্ব।

২০১৮ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৩৭১ রানের পাহাড় গড়ে স্কটল্যান্ডের ঐতিহাসিক জয়ের প্রধান কান্ডারি ছিলেন তিনি, ৯৪ বলে ১৪০ রানের অসাধারণ ইনিংসটি ইংল্যান্ড বোলাররা যত দ্রুত পারেন ভোলার চেষ্টা করবেন। ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা এই ইনিংসটি খেলা ম্যাকলিওড তাঁর সর্বোচ্চ রান করেন কানাডার বিরুদ্ধে, ১৭৫।

ডারহাম, সাসেক্স, ডার্বিশায়ারের মতো ইংলিশ কাউন্টি দলগুলোতে চুটিয়ে খেলেছেন ম্যাকলিওড। কুড়ি বিশের ক্রিকেটেও ঝড় তুলতে ওস্তাদ এই হার্ডহিটিং ব্যাটসম্যান আগামী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেরাটা দেওয়ার অপেক্ষায়।

  • রিচি বেরিংটন

দক্ষিণ আফ্রিকান বংশোদ্ভত স্কটিশ অলরাউন্ডার বেরিংটন দলের অন্যতম বড় ভরসা। ব্যাট বা বল হাতে যখন তখন ম্যাচ ঘোরাতে ওস্তাদ বেরিংটন ২০০৮ সালে অভিষেক হওয়ার পর থেকেই দলের মিডল অর্ডারের স্তম্ভ ও মাঝের ওভারে উইকেট তোলার এক ভরসার নাম। কোনো টেস্ট খেলিয়ে দলের বিরুদ্ধে প্রথম জয়ের নায়ক বেরিংটন।

২০১০ সালে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তাঁর শতরানেই স্কটল্যান্ড প্রথমবার হারায় কোনো টেস্ট খেলিয়ে দেশকে। অনবদ্য শতরান করে প্রায় একার হাতে হারান বাংলাদেশকে। সে বছরেই ভারতীয় ‘এ’ দলের বিরুদ্ধে লিস্ট ‘এ’ ম্যাচে দলের বিপর্যয়ের মুখে একা কুম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে আবারো শতরান করে জয় ছিনিয়ে আনেন রাহানে, ধাওয়ান, পুজারা, মানিশ পান্ডেদের বিরুদ্ধে।

সাদা বলের দু’ধরণের ক্রিকেটেই শতরান থাকা বেরিংটন একদিনের ক্রিকেটে প্রায় ২০০০ রান ও ৩০এর বেশি উইকেটের অধিকারী হলেও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ঝড় তোলায় ওস্তাদ। ১৩০-এর ওপর স্ট্রাইক রেট এ রান করা বেরিংটন স্লগ ওভারে বল হাতেও ম্যাচের মোড় ঘোরাতে পারেন। স্কটিশ মিডল অর্ডারের সবচেয়ে বড় ভরসার হাত হয়ে পরবর্তী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেকে প্রমান করতে মুখিয়ে বেরিংটন।

  • জর্জ মুনসে

গ্লস্টারশায়ার দ্বিতীয় একাদশের হয়ে টি টোয়েন্টিতে গত মৌসুমে ২৫ বলে শতরান করে আলোড়ন ফেলে দেওয়া মুনসে স্কটল্যান্ডের হয়ে সাদা বলের ক্রিকেটেও ইদানীং নিয়মিত ঝলসাচ্ছেন। সুইচ হিট, রিভার্স সুইপ, স্কুপের মত শটে অত্যন্ত দক্ষ এই বাম হাতি ব্যাটসম্যান স্কটিশদের টি-টোয়েন্টিতে এক অন্য ব্রান্ডের ক্রিকেটে সাড়া ফেলেছেন।

নেদারল্যান্ডের বিরুদ্ধে গত বছর ৪১ বলে শতরান করে সেই আগ্রাসী ব্রান্ডকেই আরো উস্কে দিচ্ছেন বছর ২৭-এর এই ব্যাটসম্যান। বর্তমানে টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দ্বিতীয় দ্রুততম শতরানের মালিক ইংলিশ কাউন্টি ক্রিকেটেও নিয়মিত মুখ। লেস্টারশায়ার, হ্যাম্পশায়ারের মতো কাউন্টি দলের হয়ে দুর্দান্ত খেলা মুনসের কাছে বিশ্ব ক্রিকেট তাঁর সেরাটা আরো বেশি করে পাওয়ার অপেক্ষায়।

  • সাফায়ান শরিফ

২০১৮ সালে বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ারে ক্রিস গেইলকে বিভ্রান্ত করে আউট করা শরিফ স্কটিশ বোলিংয়ের সবচেয়ে বড় ভরসা। ইনিংসের শুরুতে তাঁর নিয়ন্ত্রিত সুইং বোলিং ও ডেথ ওভারে তাঁর ইয়র্কার এক বড় অস্ত্র। ৪০ এর মত একদিনের ম্যাচে ৬৪ উইকেট তোলা শরীফ টি-টোয়েন্টিতেও ৫০ উইকেটের মালিক।

ইংল্যান্ডের ইয়র্কশায়ার এ জন্ম নেওয়া শরীফ গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ারে ১৩ উইকেট নিয়ে অন্যতম সেরা বোলার ছিলেন। ২০১৮ বিশ্বকাপের কোয়ালিফায়ারে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে অনবদ্য বোলিং করে ৫ উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচ টাই করতে প্রধান ভূমিকা নেন তিনি, সে বছরেই ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক জয়ে শেষ ওভারে শরীফের দুর্দান্ত বোলিং বড় ভূমিকা নিয়েছিল। আগামী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও স্কটল্যান্ড দলের পেস বিভাগে তুরুপের তাস হতে চলেছেন সাফায়ান শরীফ।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...