বিগ ম্যান, বিগ সিক্সেস

আগের ওভারে হ্যাটট্রিক করা আকিলা ধনঞ্জয়াও ফিরলেন ষষ্ঠ ওভারে। আকিলা যখন শেষ মুহূর্তে ফিল্ডারদের একবার দেখে নিচ্ছেন তখন পোলার্ড তাঁর হাতের তলা থেকে ব্যাট টা নামিয়ে পিচটা একটু দেখে নিলেন। ওই মেরুণ টুপিটা আবার একটু খুলে বেশ শক্ত করে মাথায় পরে নিলেন। তারপরের ছয় বলে এক মহাকাব্য লিখেছেন ক্যারিবিয়ান এই ক্রিকেটার।

বেশ অনেকটা সময় পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ তাঁদের পুরো শক্তির দলকে এক ছাদের নিচে নিয়ে এসেছে। বরাবরই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিয়ে একটু বেশি সিরিয়াস ক্যারাবিয়ানরা। বোর্ডও তাই তাঁদের সেরা খেলোয়াড় দের এই বিশ্বকাপের আগে খুঁজে খুঁজে নিয়ে আসে।

কেননা তাঁদের সেরা খেলোয়াড়েরা সারাবছর বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলতে ব্যস্ত থাকেন। এবারো তাই হয়েছে। ক্রিস গেইল, কাইরন পোলার্ডেরা আবারো দলে ফিরেছেন, ওই মেরুণ জার্সির হয়ে ফিরেছেন।

আর ক্যারাবিয়ান এই ক্রিকেটাররা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ফিরবেন অথচ কোনো ধামাকা হবে না তা কী করে হয়। যদিও শ্রীলংকার বিপক্ষে ১৩২ রানের ছোট লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ঝড়ো শুরু পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ওপেনার ইভেন লুইসের ঝড়ো ১০ বলে ২৮ রানে ভর করে ওদের সংগ্রহ তখন বিনা উইকেটে ৫২ রান।

তখন সবে মাত্র চতুর্থ ওভারের খেলা শুরু হলো। সেই চতুর্থ ওভারেই উলটো ঝড় তুলে ফেললেন শ্রীলঙ্কার স্পিনার আকিলা ধনঞ্জয়া। ওভারের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ বলে উইকেট নিয়ে করে ফেললেন হ্যাটট্রিক। সাজঘরে ফিরে গেলে ইভেন লুইস, ক্রিস গেইল ও নিকোলাস পুরান।

সবাই হয়তো আশা করছিল এবার লঙ্কান সিংহরা চেপে বসবে। তবে সেই সময় ব্যাট হাতে মাঠে প্রবেশ করলেন আরেক ক্যারিবীয় স্টার কিরণ পোলার্ড। সেই চিরায়িত দৃশ্য ,হাতের মাঝে ব্যাটটা নিয়ে একটা মেরুণ টুপি পরে বাইশ গজে আসলেন তিনি।

আগের ওভারে হ্যাটট্রিক করা আকিলা ধনঞ্জয়াও ফিরলেন ষষ্ঠ ওভারে। আকিলা যখন শেষ মুহূর্তে ফিল্ডারদের একবার দেখে নিচ্ছেন তখন পোলার্ড তাঁর হাতের তলা থেকে ব্যাট টা নামিয়ে পিচটা একটু দেখে নিলেন। ওই মেরুণ টুপিটা আবার একটু খুলে বেশ শক্ত করে মাথায় পরে নিলেন। তারপরের ছয় বলে এক মহাকাব্য লিখেছেন ক্যারিবিয়ান এই ক্রিকেটার।

  • প্রথম ডেলিভারি

টিতে হাটু গেড়ে বল সজোরে পাঠিয়ে দিলেন লং অন দিয়ে। আকিলা একবার ক্যাচ বলে চিৎকার করলেও পরে তিনি পিছনে ফিরে দেখলেন বলের দূরত্ব কতটা। পোলার্ডের হাটু গাড়া সেই শটের পরিণতী শুধুই ছয়।

  • দ্বিতীয় ডেলিভারি

এবার একদম স্ট্রেইট এন্ড ক্লিয়ার। একদম জায়গায় দাঁড়িয়ে এবার বল পাঠিয়েছেন আকিলার মাথার উপর দিয়ে। এবার আকিলার শুধুই তাকিয়ে থাকা, সেই ধবধবে সাদা বলটায় কোথায় গিয়ে থামবে।

  • তৃতীয় ডেলিভারি

এবার অফ স্ট্যাম্পের বাইরের পিচ করা বলটাও একদম জায়গায় স্থির দাঁড়িয়ে পাঠিয়ে দিলেন লং অফের উপর দিয়ে। সে কী বিশাল ছক্কা। দ্যা বিগ ম্যান, দ্যা বিগ সিক্স।

  • চতুর্থ ডেলিভারি

এবারো ঠিক প্রথম বলের মত হাটু গেড়ে ঠিক সুইপ করার মত স্লগ ওভার দিয়ে ছয়। এন্টিগা স্টেডিয়ামের সীমানা এই বল ছুঁতে পারেনা। ওভারের চতুর্থ বল, পোলার্ডের চতুর্থ ছক্কা।

  • পঞ্চম ডেলিভারি

পোলার্ডের এই ছয়ের মিছিল থামানোর জন্য বোধহয় এবার আকিলা ধনঞ্জয়া অফ স্ট্যাম্পের প্রায় দুই ফুট বাইরে একটা শর্ট পিচ বল ছুড়লেন। তাতে পোলার্ডের কী বা যায় আসে বলুন। এত বাইরের বলটি ঘুরিয়ে আবারো পাঠালেন লং অনের উপর দিয়ে।

  • শেষ বল

ওভারের শেষ বলে আবারো স্লগ ওভারের উপর দিয়ে বিশাল ছক্কা দিয়ে ইতি টানলেন তাঁর মহাকাব্যের। যেই মহাকাব্যে তাঁর অংশীদার বিশ্ব ক্রিকেটে শুধু দু’জন।

এর আগে ২০০৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপে হার্শেল ও সে বছরই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যুবরাজ সিং ছয় বলে ছয় ছক্কা মারার কীর্তি করেন। পোলার্ডের এই ঝড়ো ইনিংসে ভর করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৪ ওভারের তাঁদের টার্গেট টপকে যায়। এই জয়ে তারা তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...