যত কাণ্ড বল টেম্পারিংয়ে!

প্রতিপক্ষের উইকেট পড়ছেনা, বলে স্যুইং হচ্ছেনা, মাঠের খেলোয়াড় বল বিকৃত করে জোরপূর্বক এসব আদায়ের চেষ্টা করছেন, এমন ঘটনা ঘটেছে বেশ কয়েকবার। আইসিসির আচরণবিধিতেও বল বিকৃতি নিয়ে আছে নীতিমালা, আছে শাস্তি। সেই বল বিকৃতির বেশ কিছু ঘটনা জেনে নিলে কেমন হয়?

বল টেম্পারিং – বাংলায় বললে হয় বল বিকৃতি। এই বল বিকৃতির কাণ্ড নিয়ে কম ইতিহাস দেখেনি ক্রিকেট। প্রতিপক্ষের উইকেট পড়ছেনা, বলে স্যুইং হচ্ছেনা, মাঠের খেলোয়াড় বল বিকৃত করে জোরপূর্বক এসব আদায়ের চেষ্টা করছেন, এমন ঘটনা ঘটেছে বেশ কয়েকবার। আইসিসির আচরণবিধিতেও বল বিকৃতি নিয়ে আছে নীতিমালা, আছে শাস্তি। সেই বল বিকৃতির বেশ কিছু ঘটনা জেনে নিলে কেমন হয়?

  • আফ্রিদির কামড়

২০০৯-১০ সালের দিকে এই ঘটনা বেশ সাড়া ফেলেছিল। অস্ট্রেলিয়া সফরের এক ম্যাচে ফিল্ডিং করতে গিয়ে আফ্রিদি বল ধরে সোজা কামড় বসিয়ে দেন। সেই দৃশ্য তখন সরাসরি দেখা গেছিল টেলিভিশনে।

পার্থের এই কাণ্ডের পর আফ্রিদিকে দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞাও দেওয়া হয় আর অনুসন্ধান চালানো হয় এতে দলের আর কেউ জড়িত কিনা। সেই অনুসন্ধানে অবশ্য আফ্রিদি ছাড়া আর কারো দায় খুঁজে পাওয়া যায়নি। শোনা যায়, এই ঘটনার পর সতীর্থদের সাথে আফ্রিদির কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়েছিল।

  • আম্পায়ার ড্যারেল হেয়ার যখন নাছোড়বান্দা

নাহ, মুত্তিয়া মুরালিধরণকে ‘নো’ খলনায়ক ড্যারেল হেয়ার কোন বল টেম্পারিং করেননি। বরং তিনি বল টেম্পারিংয়ের দায় দিয়েছিলেন। ২০০৬ সালে ওভালের সে ম্যাচে আম্পায়ার পাকিস্তান দলকে বল টেম্পারিংয়ের দায়ে মাঠেই অভিযুক্ত করে।

ড্যারেল হেয়ারের সেই অভিযোগের পর মাঠে থাকা পাকিস্তানি অধিনায়ক ইনজামাম উল হক ক্ষিপে হয়ে ওঠেন আর দলবল নিয়ে মাঠ ছেড়ে চলে যান। পরে সে ম্যাচে ইংল্যান্ডকে জয়ী ঘোষণা করা হয়। ইনজামাম উল হক অবশ্য পরে দল নিয়ে মাঠে নেমেছিল – কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়।

  • আছে শচীন টেন্ডুলকারের নামও

২৪ বছরের ক্যারিয়ারে শচীন টেন্ডুলকারের ভাবমূর্তি ক্রিকেটে বেশ পরিচ্ছন্ন বলা যায়, শুধুমাত্র ঐ একটি ঘটনা ছাড়া। ২০০১ সালের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের ঘটনা। বল টেম্পারিংয়ের দায়ে টেন্ডুলকারকে অভিযুক্ত করেন ম্যাচ রেফারি মাইক ডেনিস।

 

 

এতে টেন্ডুলকারকে ম্যাচ ফি’র ৭৫ শতাংশ জরিমানা করা হয়, সাথে এক টেস্টের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। শচীন টেন্ডুলকার অবশ্য এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন তিনি আদতে বলে লেগে থাকা কাদা পরিষ্কার করছিলেন, কিন্তু মাইক ডেনিস তা মানতে ছিলেন নারাজ। এতে বিসিসিআইও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে আর শেষ ম্যাচ না খেলেই দলটা দেশে ফিরে আসে। এ ঘটনার পর ভারতে ডেনিসের কুশপুত্তলিকাও পোড়ানো হয়।

  • ফাফ ডু প্লেসিসের লঘু সাজা

২০১৬ সালের হোবার্ট টেস্টের ঘটনা। ফাফ ডু প্লেসিসকে টেলিভিশন ক্যামেরাতে দেখা যায় তিনি তাঁর মুখের চুইংগাম দিয়ে বলকে পরিষ্কার করছেন। এতে বলের এক পাশ চকচকে হয়ে বলের স্যুইং করার প্রবণতা বেড়ে যাবে।

এই ঘটনার পর ম্যাচ রেফারি ফাফকে শুনানিতে ডেকে পাঠান আর বল টেম্পারিংয়ের দায়ে অভিযুক্ত করেন। অবশ্য ম্যাচ ফি কর্তন ছাড়া খুব বড় কোন শাস্তি ফাফকে পেতে হয়নি।

  • আথারটনের অপরিষ্কার হাত

বল টেম্পারিংয়ের এই কাণ্ডটা অনেক আগের- ১৯৯৪ সালের। সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক মাইক আথারটনকে সে ম্যাচে দেখা যায় তিনি পকেটে হাত ঢুকিয়ে কিছু একটা বের করছেন আর সেই অজানা বস্তুটা বলের ওপর লাগাচ্ছেন।

আথারটনের দাবি অবশ্য তাঁর হাত গরমে ঘেমে যাচ্ছিল বলে তিনি পকেটে হাত দিয়ে কিছু একটা দিয়ে হাত মোছার চেষ্টা করছিলেন। বলাই বাহুল্য, আথারটনের এ ব্যাখ্যা কারো মন ভরায়নি , তাকে এ দায়ে দায়ী হতেই হয় আর শেষ অব্দি শাস্তি হিসেবে দুই হাজার পাউন্ড জরিমানা করা হয়।

  • স্যান্ডপেপার স্ক্যান্ডাল

বল টেম্পারিংয়ের সবচাইতে সাড়া জাগানো ঘটনা বলতে বললে মনে হয় এ ঘটনার কথাই সামনে আসবে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সে ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার ওপেনার ক্যামেরন ব্যানক্রফটকে দেখা যায় বলের ওপর স্যান্ডপেপারম জাতীয় কিছু ঘষতে।

পরে অবশ্য জানা যায়, এটা ছিল দলের লিডারশিপ গ্রুপের সিদ্ধান্ত যে গ্রুপে আসলে ডেভিড ওয়ার্নার আর স্টিভেন স্মিথ ছাড়া কেউই ছিল না। এ টেম্পারিংয়ের শাস্তি হিসেবে স্মিথ আর ওয়ার্নারকে এক বছর ক্রিকেট থেকে দূরে থাকতে হয়। কোচ ড্যারেন লেহম্যানও পদত্যাগ করেন এই ঘটনার জের ধরে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...