আশীর্বাদের আলো হয়ে জ্বলছেন মুজারাবানি

চ্যালেঞ্জটা নিয়েছিলেন মুজারাবানি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে তাঁর ওপর নজর ছিল। আর ক্যারিয়ারের মাত্র দ্বিতীয় টেস্টেই সবটুকু আলো কাড়লেন এই দীর্ঘদেহী ফাস্ট বোলার। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটে এই উদীয়মান তারকার হাতের ম্যাজিকের এক ঝলক দেখা গেলো আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে।

টাকাসিংহা- জিম্বাবুয়ের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট ক্লাব। হারারের এই ক্লাবটির প্রোডাকশন হলেন ব্লেসিং মুজারাবানি। ব্লেসিং মানে আশীর্বাদ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিনি সত্যিই জিম্বাবুয়ের জন্য এখন এক আশীর্বাদের দাম।

জিম্বাবুয়ে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে ক’দিন আগেই সুপার ওভারে পাকিস্তানকে বধ করেছেন। সেটাও আবার পাকিস্তানের মাটিতে গিয়ে। কিন্তু সে তো সীমিত ওভারের ক্রিকেট। টেস্ট তো ভিন্ন ফরম্যাট, ভিন্ন চ্যালেঞ্জ।

চ্যালেঞ্জটা নিয়েছিলেন মুজারাবানি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে তাঁর ওপর নজর ছিল। আর ক্যারিয়ারের মাত্র দ্বিতীয় টেস্টেই সবটুকু আলো কাড়লেন এই দীর্ঘদেহী ফাস্ট বোলার। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটে এই উদীয়মান তারকার হাতের ম্যাজিকের এক ঝলক দেখা গেলো আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে।

১২ ওভারে ৪৮ রানে ৩ মেইডেনসহ ৪ উইকেট! আবুধাবিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে করা মুজারাবানির বোলিং ফিগার। অধিনায়ক তাকে আরো বেশ কিছু ওভার করালে হয়তো দেখা পেয়ে যেতেন টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম ফাইফর।

ইনিংসের প্রথম বলেই অভিষিক্ত আব্দুল মালিককে বোল্ড করে যাত্রা শুরু করেন তিনি। এরপর নিয়াইচুকে সাথে নিয়ে গুড়িয়ে দেন আফগানদের টপ অর্ডার। টাকাসিংহা ক্রিকেট ক্লাব থেকে জিম্বাবুয়ে জাতীয় দলে এসে সুনাম কুড়াচ্ছেন এই ২৪ বছর বয়সী তরুণ পেসার।

এই টাকাসিংহা ক্রিকেট ক্লাব থেকেই উঠে এসেছিলেন জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের আরেক নক্ষত্র টাটেন্ডা টাইবু। মুজারাবানির আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার যে ক্ষুদা ছিলো তাতেই তাইবু আকৃষ্ট হয়েছেন।

টাইবু বলেন, ‘এটা নি:সন্দেহে বলতে পারি তাঁর উচ্চতা প্রথমে আমাকে তাঁর পেস ও বাউন্স নিয়ে আশাবাদী করে। তরুণ খেলোয়াড় হিসেবে সে অনেক শান্ত ও নম্র। সামর্থ্য অনুযায়ী সে তার সমসাময়িকদের মধ্যে সেরা ছিলো না তবে তার যে পরিবর্তনের প্রতি একটা ক্ষুধা ছিলো। একটা ইচ্ছাশক্তি ছিলো নিজের জীবন পরিবর্তনের। সে জীবনে যেসব কিছুর মধ্যে দিয়ে গিয়েছে, সেগুলো সে হয়তো পুনরায় আনতে চাইবে না তার জীবনে।’

তাইবুর তরুণ উজ্জ্বল খেলোয়াড় হিসেবে প্রমাণ করে মুজারাবানি। ২০১৭ সালে ঘরোয়া ক্রিকেটে রাইজিং স্টার দলের হয়ে সুযোগ হয় তার৷ এরপর একই বছর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে একই বছর ২৬ ডিসেম্বর বক্সিং ডে তে অভিষেক হয় টেস্ট ক্রিকেটে৷

পরের বছর জানুয়ারীতেই ত্রিদেশীয় সিরিজে অভিষেক হয় ওয়ানডেতে রঙিন পোশাকে। বাংলাদেশের বিপক্ষে সেই সিরিজে প্রথম ওয়ানডে খেলেন তিনি। চোখের পলক না ফেলতেই পরের মাসে অভিষেক হয় টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও! ৫ই ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হয় মুজারাবানির।

২০১৮ সালে বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ারে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) তাঁকে জিম্বাবুয়ের সেরা উদীয়মান তারকা হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর কলপ্যাক চুক্তিতে তিন বছরের জন্য ইংল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেট ক্লাব নর্দাম্পটনশায়ারের সাথে যুক্ত হন মুজারাবানি!

কাউন্টি ক্রিকেট শেষে আবারো জিম্বাবুয়ে দলে ফেরেন তিনি। ৩ নভেম্বর ২০২০, পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচ দিয়ে জাতীয় দলে ফিরেন এই তরুণ তুর্কি। শেষ ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো পাঁচ উইকেট শিকার করেন তিনি।

বয়স মাত্র ২৪! এখনি নিজের প্রতিভা আর সামর্থ্য দেখিয়ে দাপুটে বোলিং করে যাচ্ছে মুজারাবানি। ডুবতে থাকা জিম্বাবুয়েকে আরেকবার পথ দেখানোর চেষ্টায় তিনি সফল হবেন কিনা সেটা সময়ই বলে দিবে। তবে যোগ্য সমর্থন আর উৎসাহ পেলে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটে হয়তো যুক্ত হবে আরেক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাতে ক্রিকেটে জিম্বাবুয়ের দুর্দিনও কিছুটা কাটতে পারে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...