উড়ন্ত-দুরন্ত সব ফিল্ডিং গ্রেট

ফিল্ডিংয়ের জন্টি রোডসের বাইরে অন্য কারো নাম উল্লেখ করতে গেলে সবাইকে অনেক ভাবতে হবে এবং অনেক পরিসংখ্যান ঘাটতে হবে। কারণ আমরা ক্রিকেটে ব্যাটিং, বোলিংয়ের মত ফিল্ডিংয়ের মত গুরুত্বপূর্ন বিষয় এতো ভালোভাবে বিবেচনা বা খেয়াল করি না।

সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান কে, এ নিয়ে তর্ক আছে। সর্বকালের সেরা বোলার কে, এ নিয়েও তর্কের শেষ নেই।  একেক জন একেক জনের নাম বলবে। কিন্তু এই ঘটনাটা যদি সেরা ফিল্ডার কে সেই ক্ষেত্রে বিবেচনা করতে হয় তাহলে সবাই কোনো কিছু না ভেবেই উত্তর দিবে জন্টি রোডসের নাম।

ফিল্ডিংয়ের জন্টি রোডসের বাইরে অন্য কারো নাম উল্লেখ করতে গেলে সবাইকে অনেক ভাবতে হবে এবং অনেক পরিসংখ্যান ঘাটতে হবে। কারণ আমরা ক্রিকেটে ব্যাটিং, বোলিংয়ের মত ফিল্ডিংয়ের মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এতো ভালোভাবে বিবেচনা বা খেয়াল করি না।

ক্রিকেট বিশ্বে জন্টি রোডসের মূল পরিচিত তাঁর ফিল্ডিং দক্ষতার কারণে। এখন পর্যন্ত ক্রিকেট বিশ্বে তাঁর সমমানের কোনো ফিল্ডার আসেনি। তবে তাঁর কাছাকাছি মানের অনেক ফিল্ডারই আছেন ক্রিকেট বিশ্বে। কিছু কিছু ক্রিকেটার আছেন যারা মাঠের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় দাঁড়িয়ে বেশ ভালো ফিল্ডিং করতেন বা করেন। আর তাঁরা মাঠের ওই জায়গা গুলোতেই দাঁড়িয়েই নিজেদের ফিল্ডিং পরিসংখ্যানকে বেশ সমৃদ্ধ করেছেন। এই রকম কিছু ক্রিকেটারদেরকে নিয়ে খেলা ৭১ এর আজকের এই আয়োজন।

  • গ্রায়েম স্মিথ – প্রথম স্লিপ (দক্ষিণ আফ্রিকা)

দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম সেরা অধিনায়ক হলেন গ্রায়েম স্মিথ। অধিনায়ক হিসেবে দক্ষিণ আফ্রকাকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ১০৯ টেস্ট। সবচেয়ে কম বয়সী অধিনায়ক হিসেবে টেস্টে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। এছাড়াও অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি টেস্ট জয়ের রেকর্ডও তাঁর দখলে।

অধিনায়কত্বের পাশাপাশি ব্যাটিং রেকর্ডটাও বেশ ঈর্ষা জাগানিয়া। তবে ফিল্ডিংয়েও কম যেতেন না গ্রায়েম স্মিথ। তিনি বেশি ফিল্ডিং করতেন প্রথম স্লিপে। তাকে বিবেচনা করা হত প্রথম স্লিপের সেরা ফিল্ডার হিসেবে। শুধু প্রথম স্লিপের সেরা ফিল্ডার নন, বিশ্বের অন্যতম সেরা ফিল্ডার হিসেবে বিবেচনা করা হয় তাকে।

ক্রিকেটের তিন সংস্করণ মিলিয়ে তিনি ক্যাচ নিয়েছেন ২৯২ টি। ইনিংস প্রতি হিসেবে করলে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ০.৬৪৩। টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের মধ্যে যারা স্লিপে ফিল্ডিং করেন বা করতেন তাঁদের জন্য স্মিথকে অনুসরণীয় বিবেচনা করা যায়।

প্রথম স্লিপে অন্য যেসব ক্রিকেটার সেরা ফিল্ডার হিসেবে বিবেচিত হতে পারেন তাঁদের মধ্য অন্যতম হলেন স্টিফেন ফ্লেমিং, রস টেইলর, মাহেলা জয়াবর্ধনে, রাহুল দ্রাবিড় প্রমুখ।

  •  মার্ক ওয়াহ – দ্বিতীয় স্লিপ (অস্ট্রেলিয়া)

ওয়াহ ভাইদের মধ্যে ছোটো জন হলেন মার্ক ওয়াহ। তিনি সাধারণত ফিল্ডিং করতেন দ্বিতীয় স্লিপ পজিশনে। এই পজিশনে সাধারণত ফিল্ডাররা অনেক ভয়ে থাকে। কারণ এখানে ফিল্ডিংয়ে অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হয়, না হলে ক্যাচ মিস হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। কিন্তু এই পজিশনে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যভাবে দাঁড়িয়ে ক্যাচ নিতেন তিনি।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সব সংস্করণ মিলিয়ে মোট ২৮৯ টি ক্যাচ ধরেছেন মার্ক ওয়াহ। এর বেশিরভাগ ক্যাচ তিনি ধরেছেন দ্বিতীয় স্লিপে দাঁড়িয়ে। পেসারদের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্লিপে দাঁড়াতেন তিনি। স্পিন বোলিংয়ের সময় তিনি দাঁড়াতেন সিলি পয়েন্ট অঞ্চলে। মার্ক ওয়াহের ইনিংস প্রতি ক্যাচ নেবার হার ০.৫৯২।

মার্ক টেইলরের অবসরের পর দ্বিতীয় স্লিপ থেকে সরে এসে প্রথম স্লিপে দাঁড়ানো শুরু করেন তিনি।

দ্বিতীয় স্লিপ পজিশনে অন্যান্য যেসব ফিল্ডার বেশ ভালো ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন কার্ল হুপার, জ্যাক ক্যালিস, অ্যালান বোর্ডার, গ্রায়েম হিক এবং অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস।

  • পল কলিংউড – গালি/ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট (ইংল্যান্ড)

নিজের সময়ের অন্যতম আন্ডাররেটেড অলরাউন্ডার হলেন পল কলিংউড। কলিংউডকে তাঁর ব্যাটিং, বোলিং কিংবা অধিনায়কতত্বের থেকে বেশি মনে রাখতে হবে তাঁর ফিল্ডিংয়ের জন্য।

ফিল্ডিংয়ের সময় তাঁকে বেশি দেখা যেত মাঠে গালি অঞ্চলে। এখানে ফিল্ডিং করার সময় বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতেন তিনি। এছাড়াও মাঝে মাঝে তাঁকে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট অঞ্চলেও ফিল্ডিং করতে দেখা যেত।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সব সংস্করণ মিলে তিনি নিয়েছেন ২১৭ টি ক্যাচ। ইনিংস প্রতি ক্যাচের সংখ্যা ছিলো ০.৬০৯ টি। এছাড়াও একমাত্র ইংলিশ অধিনায়ক হিসেবে আইসিসির ট্রফি জিতেছেন তিনি।

ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট এবং গালি অঞ্চলে অন্যতম সেরা ফিল্ডার ছিলেন যথাক্রমে মাইক হাসি এবং স্টিভ ওয়াহ।

  • রিকি পন্টিং – ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট (অস্ট্রলিয়া)

অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসের অন্যতম সেরা অধিনায়ক ছিলেন রিকি পন্টিং। অস্ট্রেলিয়াক দুইটি বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন অধিনায়ক হিসেবে। ব্যাটসম্যান হিসেবেও বিশ্বের অন্যতম ব্যাটসম্যান তিনি। টেস্ট এবং ওয়ানডে দুই সংস্করণেই দশ হাজারের উপর রান করেছেন তিনি।

ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ফিল্ডিংয়েও বেশ ভালো ছিলেন রিকি পন্টিং। তিনি ফিল্ডিংয়ে কতটা বেশি কার্যকরী ছিলেন তাঁর প্রমান হলো পরিসংখ্যান। তিনি তাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ৮০ টি রান আউট করেছেন এবং সাথে ৩৬৪ টি ক্যাচ নিয়েছেন। ইনিংস প্রতি তাঁর ক্যাচ নেবার পরিমাণ ছিলো ০.৫০৭।

রিকি পন্টিং বেশি ফিল্ডিং করতেন ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট অঞ্চলে। এই পজিশনে সেরা ফিল্ডার ছিলেন বিশ্বের অন্যতম সেরা ফিল্ডার জন্টি রোডস। জন্টি রোডসের পরেই এই পজিশনে সেরা ফিল্ডার হলেন রিকি পন্টিং।

ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট অঞ্চল ছাড়াও তাঁকে সিলি পয়েন্ট এবং স্লিপেও ফিল্ডিং করতে দেখা যেত। এইসব জায়গায় ফিল্ডিং করার সময় তাঁর পাশে থাকতেন অস্ট্রলিয়া দলে তারই অধিনায়কত্বের উত্তরসূরি মাইকেল ক্লার্ক। এছাড়াও পয়েন্ট অঞ্চলে দাঁড়িয়ে বিপক্ষে দলের ক্রিকেটারদের স্লেজিং করতেও বেশ দক্ষ ছিলেন রিকি পন্টিং।

ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট অঞ্চলের অন্যতম সেরা ফিল্ডার ছিলেন জন্টি রোডস এবং তিলকারত্নে দিলশান।

  • এবি ডি ভিলিয়ার্স – কাভার (দক্ষিণ আফ্রিকা)

দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরি, সেঞ্চুরি এবং দেড়শ করার রেকর্ড আছে এবি ডি ভিলিয়ার্সের। তাঁর ব্যাটিং সামর্থ্য নিয়ে কোনো দিন কারো মনে কোনো ধরনের প্রশ্ন ছিলো না। তিনি বিশ্বের অন্যতম সেরা মারকুটে ব্যাটসম্যান। তিনি ক্যারিয়ারে অনেক দিন উইকেট কিপিং করেছিলেন। পরবর্তীতে উইকেট কিপিং ছেড়ে দিলে তিনি সবচেয়ে বেশি ফিল্ডিং করেছেন কাভার অঞ্চলে।

দক্ষিণ আফ্রিকা দলে মার্ক বাউচারের অবসর এবং কুইন্টন ডি ককের অভিষেকের মধ্যবর্তী সময়ে সেরা উইকেট রক্ষক ছিলেন ডি ভিলিয়ার্স। এক টেস্টে সবচেয়ে বেশি ১১ ক্যাচ ধরার রেকর্ড আছে এবি ডি ভিলিয়ার্সের।

ফিল্ডিংয়ে তিনি ক্যাচ ধরেছেন ২১৭ টি। ইনিংস প্রতি ক্যাচ ধরেছেন ০.৬৩২ টি করে। এবি ডি ভিলিয়ার্স বেশ ভালো বল থ্রো করতে পারেন। ডি ভিলিয়ার্স সব সময় ৩০ গজ বৃত্তের মধ্যে ফিল্ডিং করতে পছন্দ করেন। কাভার অঞ্চলের অন্যতম সেরা ফিল্ডার হলেন মোহাম্মদ আজহারউদ্দীন, মাইকেল ক্লার্ক এবং হার্শেল গিবস।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...