ধোনির রাগ-বৃত্তাত্ত

মহেন্দ্র সিং ধোনিকে লোকে ডাকে ‘ক্যাপ্টেন কুল’ নামে। ঠাণ্ডা মেজাজের এই মানুষটাই অবশ্য বেশ ক’বার ম্যাচ চলাকালেই ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। সে সব ঘটনা অনেক বিতর্কেরও জন্ম দিয়েছে।

ভারতের ইতিহাসের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক তিনি। আইসিসির তিনটি বড় শিরোপার সবগুলোই তিনি জিতেছেন অধিনায়ক হিসেবে। সেই অর্থে তিনি বিশ্ব ক্রিকেটের ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা অধিনায়ক। মহেন্দ্র সিং ধোনিকে লোকে ডাকে ‘ক্যাপ্টেন কুল’ নামে। ঠাণ্ডা মেজাজের এই মানুষটাই অবশ্য বেশ ক’বার ম্যাচ চলাকালেই ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। তারই কিছু নজীর নিয়ে আমাদের এবারের আয়োজন।

  • মুস্তাফিজকে ধাক্কা

২০১৫ বিশ্বকাপের পরের ঘটনা। বাংলাদেশ সফরে এসেছে ধোনির ভারত। সিরিজের প্রথম ওয়ানডেটা সর্বার্থেই স্মরণীয় হয়ে রইলো। অভিষেকেই পাঁচ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে জেতালেন মুস্তাফিজুর রহমান। তবে, সেটা ছাপিয়ে বেশি আলোচিত হল ধোনির অখেলোয়াড়সুলভ এক আচরণ।

ভারতের ব্যাটিংয়ের ২৫ তম ওভারে রান নিতে গিয়ে মুস্তাফিজকে ধোনি কনুই দিয়ে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেন। মুস্তাফিজ চলে এসেছিলেন তাঁর রান নেওয়ার পথে। সেই ঘটনায় মুস্তাফিজকে মাঠের বাইরে গিয়ে ফিজিও’র সেবা নিয়ে ফিরতে হয়। ধোনি ও মুস্তাফিজ দু’জনকেই ম্যাচ শেষে জরিমানা করা হয়।

বাংলাদেশ সেই জবাবটা অবশ্য ম্যাচের পর নয়, দেয় পরের ওভারেই। সাকিব আল হাসানের বলে উইকেটের পেছনে মুশফিকুর রহিমের হাতে ক্যাচ তুলে দেন ধোনি। সাকিব-মুশফিকদের উৎযাপনেই স্পষ্ট ছিল যে মধুর প্রতিশোধ নেওয়া হয়ে গেছে।

তবে, একটা ব্যাপার না বললেই নয় – পুরো ব্যাপারটাই ছিল ‘পার্ট অব দ্য গেম’। খেলার মধ্যে এমন হতেই পারে। মাঠের ঘটনাকে মাঠে রেখেই সাজঘরে ফেরেন ক্রিকেটাররা।

  • আম্পায়ারের ওপর চড়াও

২০১২ অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ওয়ানডে ম্যাচ, বোলার তখন সুরেশ রায়না। মাইক হাসিকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলে সাজঘরে পাঠান ধোনি। তৃতীয় আম্পায়ার আউটও দিয়েছিলেন। সেই মতো প্যাভিলিয়নেও ফিরে যাচ্ছিলেন হাসি। তখনই ফিল্ড আম্পায়ার বিলি বাউডেন তাঁকে ফিরিয়ে আনেন।

এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ ধোনির সঙ্গে বিলির তর্ক হয়। বিলি বলেন, ‘আসলে তৃতীয় আম্পায়ার জানিয়েছেন হাসি আউট নন। সংকেত দিতে ভুল করায় ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তাই ফিরিয়ে আনা হচ্ছে হাসিকে।’

  • মাঠে ঢুকে খবরদারি

২০১৯ সালের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ। ১৫২ রানের টার্গেটে শেষ ওভারে জয়ের জন্য ১৮ রান দরকার পড়ে চেন্নাইয়ের। ইংল্যান্ডের বেন স্টোকসের শেষ ওভারের প্রথম বলেই ছক্কা মারেন চেন্নাইয়ের রবীন্দ্র জাদেজা। তৃতীয় বলে আউট হন ধোনি। শেষ তিন বলে জয়ের জন্য দরকার আট রান।

তখনই মিশেল স্যান্টনারের বিপক্ষে একটা ফুলটস করেন বেন স্টোকস। আম্পায়ার প্রথমে ‘নো’ ডাকলেও পরে ব্যাটসম্যানরা কয়েকবার জায়গা বদল করে নেওয়ার পর সিদ্ধান্ত পাল্টান তিনি। তখনই ক্ষোভে ফেটে পড়েন অধিনায়ক ধোনি। মাঠে ঢুকে আম্পায়ারের সাথে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি।

সেই মুহূর্তের সাক্ষী রইল জয়পুরের সোয়াই মান সিংহ স্টেডিয়াম। ধোনির ম্যাচ ফির ৫০ শতাংশ জরিমানা করা হয়। তবে, শ্বাসরুদ্ধকার সেই ম্যাচের শেষ বলে স্যান্টনারের ছক্কায় জিতে যায় চেন্নাই।

  • সতীর্থ বোলারের ওপর ক্ষোভ

কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে ম্যাচ। ১২ বলে ২৯ রান দরকার পাঞ্জাবের। ধোনি আনলেন দীপক চাহারকে। এই ওভারের শুরুতেই পরপর দুটি নো বল করেন চাহার ৷ মানে কোনো ‘লিগ্যাল’ ডেলিভারির আগেই আট রান চলে গেল পাঞ্জাবের বোর্ডে। প্রথমে বিশাল এক ফুলটসে চার হজম করেন, পরের বলে আবারো ফুলটস, এবার আসলো আরো দুই রান।

ব্যাস! ধোনির রাগ হওয়ার জন্য এটুকুই যথেষ্ট ছিল। বোলারকে গিয়ে শাসিয়ে দিয়ে আসেন ৷ বেশ ভয় পেয়ে যান চাহার ৷ তবে, সেই ভয়ে অবশ্য কাজ হয়েছিল। পুরো ওভারে এরপর আর মাত্র পাঁচ রান হজম করেন চাহার। নেন ডেডিভ মিলারের গুরুত্বপূর্ণ উইকেট।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...