ফখর কী আউট ছিলেন!

এখন বাভুমার কথাকে স্বাক্ষ্য হিসেবে নিলে কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার ফেঁসে যাওয়ার কথা। কারণ, বাভুমা বলছেন, এটা ডি কক ‘বুদ্ধির’ কাজ করেছেন। তার মানে, তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে কাজটা করেছেন। আর তেমন হলে তো শাস্তি প্রাপ্য।

এই ব্যাপারটা নিয়ে আগেও অনেকবার বিশ্ব ক্রিকেট কেঁপেছে।

ক্রিকেট আইনেও পরিষ্কার শাস্তিযোগ্য অপরাধ-ফেক ফিল্ডিং। এরকম কিছু করা হলে ব্যাটসম্যান আউট হবেন না। উপরন্তু জরিমানা হবে ফিল্ডিং দলের। আবার এই বিতর্কে কাঁপছে ক্রিকেট দুনিয়া। এবারের বিতর্কের বিষয় দক্ষিণ আফ্রিকা ও পাকিস্তান ম্যাচে ফকর জামানের রান আউট।

ক্রিকেট দুনিয়ার একটা অংশের ধারণা, ফখর জামানকে আফ্রিকান উইকেটরক্ষক কুইন্টন ডি কক ফেক ফিল্ডিংয়ের শিকার করেছেন। অতএব ফখর আউট হবেন না। অনেকে এখানে ক্রিকেট চেতনার বিষয় টেনে আনছেন। এখানে অবশ্য ক্রিকেট চেতনা নিয়ে কথা বলার কিছু নেই। সত্যিই ডি কক ফেক ফিল্ডিং করলে সেটা সরাসরি আইনেরই পরিপন্থি।

আগে বোঝা যাক, ফেক ফিল্ডিং ব্যাপারটা কী?

ফেক ফিল্ডিং হলো এমন একটা ব্যাপার, যাতে আপনি বল হাতে নিয়ে অভিনয় করবেন যে, আপনার হাতে বল নেই। বা এর উল্টোটাও হতে পারে যে, আপনার হাতে বল নেই, কিন্তু আপনি অভিনয় করলেন, আপনার হাতে বল আছে। এর ফলে বিভ্রান্ত হয়ে ব্যাটসম্যান রান নিতে গেলো বা রান থেকে বিরত রইলো। দুই ক্ষেত্রেই আপনি শাস্তি পাবেন।

আইসিসির আইনে এ ব্যাপারে পরিষ্কার নির্দেশনা দেওয়া আছে।

এমসিসি আইনের ৪১.৫.১ ধারায় বলা আছে, ‘কোনো ফিল্ডার ইচ্ছাকৃত কথা বা আচরণ দিয়ে বল ডেলিভারি হয়ে যাওয়ার পর যে কোনো ব্যাটসম্যানকে বিরক্ত, অনুপ্রাণিত বা বাধাগ্রস্থ করলে, সেটা আইনবিরোধী কাজ হবে।’

এই আইন ভঙ্গের শাস্তিও আছে। আইসিসির আইন অনুযায়ী কোনো ফিল্ডার এরকম কাজ করলে তার দলকে ৫ রান জরিমানা করা হবে এবং সম্পন্ন রান যোগ করা হবে এবং বলটি হিসাব করা হবে না।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ফখর কী তাহলে এই আইন অনুযায়ী অন্যায়ের শিকার হয়েছেন?

আমরা চোখে যেটা দেখেছি, তা হলো ডি কক একটা অভিনয় করেছেন। বল যখন ডিপ থেকে থ্রো করা হয়েছে, তখন ডি কক অভিনয় করেছেন যে, বলটা নন স্ট্রাইকার এন্ডে আসছে। ফলে ফখর জামান দ্বিতীয় রান নেওয়ার সময় নিজের স্ট্যাম্পের দিকে না তাকিয়ে নন স্ট্রাইকার এন্ডে যেতে থাকা হাসান রউফের নিরাপত্তা দেখছিলেন ঘুরে তাকিয়ে। এদিকে বল আসলে তার প্রান্তেই আসায় তিনি আউট হয়ে যান; কারণ ডি ককের আচরণে তিনি ‘বিভ্রান্ত’ হয়েছিলেন।

স্রেফ এই দৃশ্য বলে যে, ফখর অন্যায়ের শিকার হয়েছেন। তবে ঘটনা তো চোখের দেখাতেই শেষ নয়। ঘটনার আরও দিক আছে। প্রথমে আমরা ফখর জামানের নিজের কথা শুনি।

ফখর এখানে কুইন্টন ডি ককের কোনো দোষ দেখছেন না। তিনি বলেছেন, ‘দোষ আমারই ছিল, আরেক প্রান্তে হারিস রউফকে দেখতেই ব্যস্ত ছিলাম আমি। আমার মনে হয়েছিল, সে ক্রিজ থেকে একটু দেরিতে বেরিয়েছে, কাজেই বিপদে পড়বে সে। বাকিটা ম্যাচ রেফারির দেখার দায়িত্ব। তবে আমি মনে করি না কুইন্টনের দোষ আছে।’

এবার একটু দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়কের স্বাক্ষ্য শোনা যাক। তিনি কিন্তু আবার ‘অভিনয়’-এর দাবিটা উড়িয়ে দেননি। বুঝে হোক, না বুঝে হোক, বাভুমা বলছেন, ডি কক অভিনয় করছেন। আর এটাকে অধিনায়ক গুন হিসেবে দেখছেন, ‘কুইনি (ডি কক) বেশ বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছে। কেউ কেউ হয়তো এটি নিয়ে সমালোচনা করতে পারে যে খেলাটির চেতনার সঙ্গে যায় না। তবে আমাদের জন্য উইকেটটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ। জামান (ফখর) লক্ষ্যের কাছে এগিয়ে যাচ্ছিল। হ্যাঁ, কুইনি বেশ চতুর ছিল এখানে।’

এখন বাভুমার কথাকে স্বাক্ষ্য হিসেবে নিলে কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার ফেঁসে যাওয়ার কথা। কারণ, বাভুমা বলছেন, এটা ডি কক ‘বুদ্ধির’ কাজ করেছেন। তার মানে, তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে কাজটা করেছেন। আর তেমন হলে তো শাস্তি প্রাপ্য।

আচ্ছা, আমরা এই আউট নিয়ে এতো কথা বলছি কেনো?

এই আউটটা না হলে কী পাকিস্তান জিতে যেতো? এই আউট না হলে কী ফখর জামান ডাবল সেঞ্চুরি পেয়ে যেতেন?

হ্যা, এখানেই আসল কথাটা। এই আউটটা না হলে কিন্তু ম্যাচের  দৃশ্য বদলে যেতে পারতো এবং ফখর মোটামুটি নিশ্চিতভাবেই ডাবল সেঞ্চুরি করে ফেলতেন।

ওই ওভারটার সেটা ছিলো প্রথম বল। ওভারে পাকিস্তানের জয়ের জন্য দরকার ছিলো ৩১ রান। এখন শাস্তি হলে পাকিস্তান কোনো বল ছাড়াই ৭ রান (জরিমানা ও দৌড়ের) পেয়ে যেতো। মানে, ৬ বলে তখন পাকিস্তানের দরকার ছিলো ২৪ রান। বুঝতে পারছেন, হিসাব কেমন বদলে যেতে পারতো?

তবে কথা হচ্ছে, হিসাব বদলাক আর নাই বদলাক, অন্যায় তো অন্যায়। এখন আইসিসি তো চিরকালের নির্বাক দর্শক। দেখা যাক, এই ব্যাপারটায় অন্তত একটু নড়েচড়ে কথা বলে কি না তারা!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...