বিপ টেস্ট, ইয়ো ইয়ো টেস্ট: কেন, কিভাবে?

ফিটনেস টেস্টে না উৎরে গেলে কোন ক্রিকেটারকেই, ভুল বললাম, কোন খেলোয়াড়কেই যেকোন ম্যাচে নেওয়া হয় না। তবে সেই ফিটনেস টেস্টেরও প্রকার আছে, আছে পদ্ধতির ভিন্নতা। সেগুলোই জেনে নেব আজ!

একজন ক্রিকেটার দলে থাকবেন নাকি থাকবেন না তা নির্ভর করে তার পারফর্ম্যান্স এর উপর। কিন্তু বাংলাতে একটা প্রবাদ আছে, ‘প্রথমে দর্শনধারী, এরপর গুণবিচারী।’

পারফর্ম্যান্স পরিমাপ হল সেই গুণ বিচারের প্রক্রিয়া। তাহলে দর্শনধারী প্রক্রিয়াটা কি? উত্তর হল ফিটনেস টেস্ট!

ফিটনেস টেস্টে না উৎরে গেলে কোন ক্রিকেটারকেই, ভুল বললাম, কোন খেলোয়াড়কেই যেকোন ম্যাচে নেওয়া হয় না। তবে সেই ফিটনেস টেস্টেরও প্রকার আছে,আছে পদ্ধতির ভিন্নতা। সেগুলোই জেনে নেব আজ!

  • বিপ টেস্ট

ফিটনেস টেস্টের মধ্যে বাংলাদেশে বহুল জনপ্রিয় হল বিপ টেস্ট বা বিপ শাটল রান টেস্ট! এই টেস্ট আসলে মূলত ক্রিকেটারদের দম ধরে রাখার প্রক্রিয়া। একজন ক্রিকেটার ব্যাট বল ও প্যাড নিয়ে কতটুকু দম ধরে রাখতে পারেন তার বিচার প্রক্রিয়াই হল বিপ টেস্ট।

বিপ টেস্ট, বাংলাদেশের সিনিয়র ক্রিকেটাররা অংশ নিচ্ছেন

তবে এই বিপ টেস্ট শুধুই ক্রিকেটে ব্যবহার করা হয় এমনটা ভাবলে কিন্তু ভুল হবে। হকি, ভলিবল, বাস্কেটবল এমনকি অস্ট্রেলিয়ান আর্মিতেও প্রচলন আছে বিপ টেস্টের।

  • কিভাবে করা হয়?

বিপ টেস্ট প্রক্রিয়াটি একেবারেই সোজা। লম্বালম্বি ভাবে ২০ মিটার দূরত্বে দুটো দাগ কাটা থাকে এখানে। এরপর একজন ক্রিকেটারকে এই দুই প্রান্তের মাঝে শাটল হাতে দৌড়াতে হয়। বিপ টেস্ট শুরুর ৫ সেকেন্ড আগে ট্রেইনার ‘৫ সেকেন্ড’ সূচক একটি সিগনাল দেন এবং এতে ক্রিকেটারটি দৌড়ের জন্যে টেক অফের প্রস্তুতি নেয়। এই ৫ সেকেন্ড পর ৩ টা বিপ শব্দের মাধ্যমে ক্রিকেটারদের দৌড় শুরু হয়।

বিপ টেস্টে মোট ২১ টা লেভেল আছে। প্রতি লেভেলেই শাটলের সংখ্যার তারতম্য আছে। সময় যত গড়ায়, লেভেল যত বাড়ে, এই শাটলের সংখ্যা প্রতি লেভেলেই তত বাড়তে থাকে। তবে ক্রিকেটারকে এই শাটল হাতে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পৌছাতে হয় নির্দিষ্ট একটা সময়ের মধ্যে। এই সময় শেষে একটি ‘বিপ’ শব্দ করা হয়। বোঝাই যাচ্ছে, ক্রিকেটারকে শাটল নিয়ে অপর প্রান্তে পৌছাতে হবে ওই বিপ শব্দের আগেই! তবে অপর প্রান্তে পৌছে থেমে গেলেই হবে না, সেখান থেকে শাটল সংখ্যা বৃদ্ধি করে ক্রিকেটারকে আবার দৌড় দিতে হবে, টেক অফ ছাড়াই।

যদি কোন ক্রিকেটার বিপ শব্দের আগে পরপর দুইবার অপর প্রান্তে পৌছাতে না পারে তবে তার টেস্ট শেষ বলে ধরা হয়। টেস্টের স্কোর নির্ণয় করতে শেষবার যে অসফল হলেন বিপ শব্দের আগে পৌছাতে, সেই রানিং টুকু ধরা হয় না, ধরা হয় শেষবার সফলভাবে যখন পৌঁছেছিলেন সেটুকু।

পাকিস্তান দলের বিপ টেস্ট

বিপ টেস্টে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের সবচেয়ে ভাল গড় স্কোর ছিল ইংল্যান্ডে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সময়টাতে। সে সময় দলের খেলোয়াড়দের গড় স্কোর ছিল ১১.৫, যা কিনা বিপ টেস্টের মানদন্ডে যথেষ্ট ভাল একটি স্কোর!

  • ইয়ো ইয়ো টেস্ট

বাংলাদেশ ক্রিকেটে সিলেকশনের ক্ষেত্রে বহুদিন ধরেই এই বিপ টেস্টের প্রচলন আছে। তবে ভারতীয় ক্রিকেটে ফিটনেস্ট টেস্টের জন্যে বিপ টেস্ট ব্যবহার করা হয়না; তারা করে ইয়ো ইয়ো টেস্ট!

ইয়ো ইয়ো টেস্ট আসলে মূলত বিপ টেস্টের একটি ‘উন্নত রূপ’। বিপ টেস্ট প্রক্রিয়াটিকেই একটু জটিল আর সংশোধন করে নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইয়ো ইয়ো টেস্ট’। এখন সেই সংশোধনটুকু কি?

  • কীভাবে হয়?

বিপ টেস্টের মতই এখানেও ২০ মিটার দূরত্বে দুটো প্রান্তবিন্দু থাকে এবং এখানেও দুটো ‘বিপ’ শব্দের মাঝখানের সময়ের মধ্যে একজন ক্রিকেটারকে প্রান্তবিন্দু ছুঁয়ে আসতে হয়। তবে বিপ টেস্টের ক্ষেত্রে ক্রিকেটারের দৌড়ের গতি ধর্তব্য হয়না, কিন্তু ইয়ো ইয়ো টেস্টের ক্ষেত্রে একজন ক্রিকেটার কি গতিতে দৌড়াচ্ছে সেটি বিবেচনায় আনা হয় এবং স্কোর নির্ধারণে এটি বড়সড় একটা ভূমিকা রাখে।

বিপ টেস্টের মতই এখানেও ‘লেভেল’ থাকে। তবে এখানে লেভেল উন্নতির সাথে সাথে ‘বিপ’ শব্দের ফ্রিকোয়েন্সি বাড়তে থাকে। নাহ, শব্দের হার্জ ফ্রিকোয়েন্সি বোঝাতে চাইনি, বোঝাতে চেয়েছি। আগে দুটো ‘বিপ’ শব্দের মাঝে যে সময়টুকু দেওয়া হত, এখন তার চাইতে আরো কম সময় দেওয়া হয়। বিপ টেস্টের মতই এখানেও পরপর দু’বার ব্যর্থ হলে টেস্ট শেষ করা হয়।

ভারতীয় দলের ইয়ো ইয়ো টেস্ট

ইয়ো ইয়ো টেস্টের ক্ষেত্রে ১৬.১ স্কোরের কম হলে তাকে ভারতীয় ক্রিকেটে আর বিবেচনায় নেওয়া হয়না। ২০১৮ এর জুলাইতে যে কারণে পারফরম্যান্স এর চূড়ায় থাকার পরও আম্বাতি রাইডুকে ইংল্যান্ড সফরের ওয়ানডে দল থেকে বাদ পড়তে হয়।

ক্রিকেটে ফিটনেস টেস্টের জন্যে মূলত ‘বিপ টেস্ট’ আর ‘ইয়ো ইয়ো টেস্ট’ কেই প্রাধান্য দেওয়া হয়। তবে অন্যান্য খেলার ক্ষেত্রে ফিটনেস টেস্টের ভিন্নতা থাকে। যেমন, যেসব খেলায় ‘ফ্লেক্সিবিলিটি’ কে প্রাধান্য দেওয়া হয়, তাতে ‘সিট অ্যান্ড রিচ’ টেস্টকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। এতে মূলত পেশির নমনীয়তা পরিমাপ করা হয়।

এরকম আরো সাত প্রকার ফিটনেস টেস্ট আছে বিভিন্ন ধরণের খেলার জন্যে। সেগুলো হলো: হ্যান্ডগ্রিপ স্ট্রেংথ টেস্ট, হোম পুশআপ টেস্ট, স্কিনফোল্ডস টেস্ট, ভার্টিক্যাল জাম্প টেস্ট, ইলিনয়েস অ্যাগিলিটি টেস্ট, হোপ সিট-আপ টেস্ট, লং জাম্প টেস্ট।

তবে যত প্রকারই থাকুক, সেই টেস্টে উতরাতে না পারলে আপনাকে দল থেকে বাদ পড়তেই হবে!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...