পাঁচটি ট্রফি, অনন্ত আক্ষেপ

তাঁর ক্যারিয়ারে অর্জনের শেষ নেই যেমন, আক্ষেপেরও কমতি নেই। দু’টি বিশ্বকাপ আর তিনটি আইপিএল শিরোপা - মোট পাঁচটি বড় ট্রফি জয়ের পরও তিনি ভারতের ইতিহাসেরই অন্যতম বড় আক্ষেপ।

ভারতীয় দলে ভাইয়ের মত এত জনপ্রিয় কিংবা গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার কখনই ছিলেন না ইউসুফ পাঠান। অন্তত, জাতীয় দলের জন্য সেটাই ছিল সত্যি। কিন্তু ইনিংসের শেষ দিকে দ্রুত রান তোলায় বেশ পটু ছিলেন ইউসুফ পাঠান। ক্রিকেটের রঙিন পোশাকের জন্য ছিলেন সঠিক একজন অলরাউন্ডার।

ইনিংসের শেষের দিকে ব্যাট হাতে ঝড় তোলার পাশাপাশি বল হাতেও কার্যকর একজন অফ স্পিনার ছিলেন ইউসুফ পাঠান। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএলে) এই দুইয়ের গুণে হয়ে উঠেছিলেন অনন্য। আইপিএল কিংবদন্তি বললে বাড়িয়ে বলা হয় না মোটেও।

টুইটারে দেয়া এক বার্তায় সব ধরনের ক্রিকেট থেকে বিদায় নেয়ার ঘোষণা দেন ইউসুফ পাঠান।  বিদায় বার্তায় ৩৮ বছর বয়সী ইউসুফ পাঠান টুইটে জানান, ‘আমি অফিসিয়ালি সব ধরনের ক্রিকেটকে বিদায় জানাচ্ছি। আমি আমার পরিবার,বন্ধু,সমর্থক এবং দেশের সকল মানুষকে ধন্যবাদ জানাই। কারণ তাঁরা আমাকে সব সময় সমর্থন জুগিয়েছে। আমি নিশ্চিত ভবিষ্যতে এই সমর্থন আমাকে উৎসাহ যোগাবে।’

প্রথম নজরে আসেন ১৯৯৯-২০০০ সালে বিজয় মার্চেন্ট টুর্নামেন্টে বারোদা অনূর্ধ্ব- ১৬ দলের প্যারফর্মেন্সের মাধ্যমে। এর পর বারোদা অনূর্ধ্ব- ১৯ এবং দক্ষিণ জোন অনূর্ধ্ব- ১৯ দলের হয়ে পারফর্মেন্স করতে থাকেন। এর পর বারোদা রঞ্জি দলে ডাক পান ২০০১-০২ সালে সৌরাষ্ট্রের বিপক্ষে। কিন্তু এর পরও বারোদা রঞ্জি দলের হয়ে নিয়মিত হতে পারেননি। ২০০৪-০৫ মৌসুমের আগে বারোদা রঞ্জি দলে যাওয়া-আসার মধ্যেই ছিলেন ইউসুফ পাঠান।

২০০৬-০৭ মৌসুমে রঞ্জি ট্রফি, ওয়ানডে টুর্নামেন্ট দেওধর ট্রফি এবং ঘরোয়া টি-টোয়েন্টিতে দ্রুত রান তোলার সামর্থ্যের মধ্যে ডাক পান ২০০৭ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। এরপর কিছুটা নিয়মিত হতে শুরু করেন তিনি। কিন্তু বিশ্বকাপের ফাইনালের আগে কোনো ম্যাচেও সুযোগ পাননি তিনি।

জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন ৫৭ ওয়ানডে এবং ২২ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। ৫৭ ম্যাচে ব্যাট হাতে করেছেন ৮১০ রান এবং বল হাতে নিয়েছেন ৩৩ উইকেট। ব্যাট হাতে দুইটি শতক এবং তিনটি অর্ধ -শতক করেছিলেন। তবে, সামর্থ্য অনুযায়ী কখনো খেলতে পারেননি জাতীয় দলে।

২০১০ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩১৬ রানের লক্ষ্যে বাটিং করতে নেমে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি হাঁকান তিনি। এই ফর্ম তিনি নিয়ে যান ২০১১ সালের শুরুতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজে। সেখানেও ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি হাঁকান। কিন্তু ২০১১ বিশ্বকাপে সেই ফর্ম ধরে রাখতে পারেননি ইউসুফ পাঠান।

টি-টোয়েন্টিতে ২২ ম্যাচে ব্যাট হাতে করেছেন ২৩৬ রান। স্ট্রাইক রেট ১৪৬.৫৮। অপরদিকে বল হাতে নিয়েছিলেন ১৩ উইকেট।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বেশ সফল না হলেও ঘরোয়া ক্রিকেটে বেশ সফল ছিলেন ইউসুফ পাঠান। বিশ্বের অন্যতম সেরা টি-টোয়েন্টি লিগ আইপিএলে খেলেছেন রাজস্থান রয়্যালস, কলকাতা নাইট রাইডার্স এবং সানরাইজার্সের হয়ে। আইপিএলে তিনটি শিরোপা জিতেছিলেন ইউসুফ পাঠান। আইপিএলে খেলেছেন ১৭৪ ম্যাচ। সেখানে ব্যাট হাতে করেছেন ৩২০৪ রান এবং বল হাতে নিয়েছেন ৪২ উইকেট। কলকাতার আইপিএল শিরোপা জয়ের অন্যতম কারিগর ছিলেন ইউসুফ পাঠান।

বাংলাদেশেও ক্লাব ক্রিকেট খেলেছেন। ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে দেখা গিয়েছে তাঁকে। তাঁর ক্যারিয়ারে অর্জনের শেষ নেই যেমন, আক্ষেপেরও কমতি নেই। দু’টি বিশ্বকাপ আর তিনটি আইপিএল শিরোপা – মোট পাঁচটি বড় ট্রফি জয়ের পরও তিনি ভারতের ইতিহাসেরই অন্যতম বড় আক্ষেপ।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে হয়তো আরও অনেক কিছু দেয়ার ছিল ইউসুফ পাঠানের। কিন্তু জাতীয় দলে সুযোগ না পাওয়া এবং বয়সের কারণে হয়তো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে নিজের সম্পূর্ণটুকু দিতে পারেননি। অন্য কোনো ভূমিকায় ক্রিকেটকে নিজের সম্পূর্ণটুকু দিবেন এই অপেক্ষায় ক্রিকেট প্রেমীরা।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...