সংগ্রামী-ধুরন্ধর-সব্যসাচী
শোয়েব আখতার উইকেট পাওয়া কোথায় শিখেছে? – তাঁর জন্য মিড অন বা অফে দাঁড়িয়ে থাকতেন ‘টু ডব্লিউ’ ওয়াসিম-ওয়াকারের একজন। ওয়াসিম বা ওয়াকারকে এই প্রশ্ন করলে তাঁরা দেখিয়ে দিবেন ইমরান খানকে। জহির খানের জন্য তেমন কেউ ছিলেন না। হ্যাঁ, বোলিং কোচ অবশ্যই ছিলেন, কিন্তু সে তো কেবলই কৌশল শেখানোর জন্য – ম্যাচ সিচুয়েশন তো ভিন্ন ব্যাপার। সেটা বুঝে উইকেট পাওয়ার উপায়টা রপ্ত করেছিলেন জহির, সেটাও তার ১৩০ কিলোমিটার/ঘণ্টার গতি দিয়েই।
মহেন্দ্র সিং ধোনির চোখে তিনি ছিলেন ‘সময়ের সবচেয়ে চতুর ফাস্ট বোলার’। অধিনায়ক হিসেবে মাহির চরিত্রের সাথেই এই প্রশংসা ব্যাপারটা যায় না। তবুও, তিনি নিজের সহজাত সেই গণ্ডি ভাঙতে বাধ্য হয়েছিলেন জহির খানের সুবাদে। নিজের অস্ত্রশালার সেরা অস্ত্রের জন্য একটু-আকটু নিজেকে ভাঙাই যায।
আর ধোনির এই জহির খানের ওপর কৃতজ্ঞ না হয়ে উপায়ও নেই। কারণ, যখন অধিনায়কত্ব পান তখন অনিল কুম্বলে অবসর নিয়ে ফেলেছে, হরভজন সিংও ক্ষয়িষ্ণু। তখন জহিরই এগিয়ে নিয়েছেন ভারতের পেস বোলিংয়ের পতাকা। বিশেষ করে পুরনো বলে রিভার্স স্যুইংয়ের দক্ষতা তাঁকে অনন্য করে তুলেছিল।
জহির খান হলেন ভারতের ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী পেসার। তিনি ছিলেন সংগ্রামী বোলার, সব্যসাচী বোলার। বড় মঞ্চের বড় পারফরমার তিনি। ২০.২২ গড়ে বিশ্বকাপে পান ৪৪ উইকেট। এখানে জাভাগাল শ্রীনাথের সাথে ভারতের সাথে যৌথ ভাবে আছেন দ্বিতীয় স্থানে। ২০১১ বিশ্বকাপে ভারতের জয়েও ‘আনসাং হিরো’ ছিলেন এই জহির।
শোয়েব আখতার উইকেট পাওয়া কোথায় শিখেছে? – তাঁর জন্য মিড অন বা অফে দাঁড়িয়ে থাকতেন ‘টু ডব্লিউ’ ওয়াসিম-ওয়াকারের একজন। ওয়াসিম বা ওয়াকারকে এই প্রশ্ন করলে তাঁরা দেখিয়ে দিবেন ইমরান খানকে। জহির খানের জন্য তেমন কেউ ছিলেন না। হ্যাঁ, বোলিং কোচ অবশ্যই ছিলেন, কিন্তু সে তো কেবলই কৌশল শেখানোর জন্য – ম্যাচ সিচুয়েশন তো ভিন্ন ব্যাপার। সেটা বুঝে উইকেট পাওয়ার উপায়টা রপ্ত করেছিলেন জহির, সেটাও তার ১৩০ কিলোমিটার/ঘণ্টার গতি দিয়েই।
জহির বরং উল্টোটা করতেন, তিনি তরুণদের জন্য মেন্টরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেন মিড অফ বা মিড অনে দাঁড়িয়ে। তিনি ভারতের বোলিংয়ে পরিপূর্ণ করতেন। ওই সময়ে তিনি সেই সাহসটা যুগিয়েছিলেন বলেই এখন ভারতে জাসপ্রিত বুমরাহ, ভূবনেশ্বর কুমারদের মত পেসারদের ছড়াছড়ি। তিনি একটা সেতু ছিলেন, যেটা জাভাগাল শ্রীনাথ কিংবা ভেঙ্কটেশ প্রসাদদের সাথে একালের মেলবন্ধন ঘটিয়েছে।
জহির ব্যাটসম্যানদের দুর্বলতা বুঝতেন। বলা ভাল, তিনি এটা বুঝতে বিস্তর কাজ করতেন। তাই গ্রায়েম স্মিথ কিংবা কুমারা সাঙ্গাকারা – সবাই তাঁর জালে আটকা পড়তো। এসজি, ডিউকস কিংবা কোকাবুরা – তিন রকম বলেই মাস্টার ছিলেন জহির। এখানে ডেল স্টেইনের আসার আগ পর্যন্তই কেউই জহিরকে ছাড়িয়ে যেতে পারেননি। সমতায় আসতে পেরেছিলেন জেমস অ্যান্ডারসন।
১৪ বছরের লম্বা ক্যারিয়ার তাঁর। টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে তাঁর উইকেট সংখ্যা ১১৯। এমনকি ভারতের মত স্পিন নির্ভর কন্ডিশনেও তিনি তিনবার পাঁচ উইকেট-সহ পেয়েছেন ১০৪ টি উইকেট। ৯২ টেস্টে ৩১১ উইকেট পাওয়া জহিরের যোগ্যতাটা এখানেই পরিস্কার।
ক্যারিয়ারে আক্ষেপও কম নয়, সিরিজের প্রথম টেস্ট খেলতে পারবেন না – এমনটা এক সময় নিয়মে পরিণত হয়েছিল। তাঁর জন্য খুবই হতাশাজনক ব্যাপার ছিল। কাঁধ, হ্যামস্ট্রিং, পিঠ-সহ নানারকম রহস্যময় ইনজুরিতে ভুগে ক্যারিয়ার ছোট হয়েছে তাঁর। এর বড় একটা কারণ হল – তিনি তাঁর সামর্থ্যের চেয়ে অনেক বেশি সার্ভিস দিয়েছেন ভারতকে। মানুষের শরীর তো, মেশিন তো আর নন!
ধোনির কথা দিয়ে শুরু করেছিলাম। ধোনি দিয়েই ইতি টানি। ক্যাপ্টেন কুল একবার বলেছিলেন, ‘জহির খান হল ভারতীয় বোলিং আক্রমণের শচীন টেন্ডুলকার।’ আর সব কিছু ভুলে যান, ধোনির মত কেউ যখন কারো ব্যাপারে এমন মন্তব্য করেন, তখন যে কেউই আসলে নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হন!