‘রিয়াল মাদ্রিদে যাচ্ছি না’

সেলিব্রিটিদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য বিখ্যাত জর্ডি এই সাক্ষাতকারে মেসির ছোটবেলা, ব্যক্তিগত জীবন এবং বার্সেলোনার সাথে টানাপোড়েনের কথা তুলে এনেছেন। কথা হয়েছে মেসি কোন ক্লাবে যাবেন বা যাবেন না, তা নিয়েও।

গত ক দিন ধরেই বিখ্যাত স্প্যানিশ সাংবাদিক জর্ডি এভোলের সাথে লিওনেল মেসির ইন্টারভিউয়ের জন্য অপেক্ষা চলছে। অবশেষে গতকাল রাতে প্রকাশ হয়েছে এই সাক্ষাতকার।

সেলিব্রিটিদের সাক্ষাতকার নেওয়ার জন্য বিখ্যাত জর্ডি এই সাক্ষাতকারে মেসির ছোটবেলা, ব্যক্তিগত জীবন এবং বার্সেলোনার সাথে টানাপোড়েনের কথা তুলে এনেছেন। কথা হয়েছে মেসি কোন ক্লাবে যাবেন বা যাবেন না, তা নিয়েও।

  • ছোটবেলা নিয়ে

শৈশবে আমি বেশ লাজুক ছিলাম। আমার চাওয়া পাওয়া কেবল ফুটবল কে ঘিরেই ছিল। বল, বুট, জার্সি। এবং আমার মা আমাকে খুশি করার জন্য সবকিছু করতে চেষ্টা করতেন । এমনও হয়েছে যে আমি কিছু চেয়েছি যা হয়ত অনেক দামি, যেমন লিগের অফিসিয়াল বল; আমার বাবা মা আমাকে খুশি করার জন্য সম্ভাব্য সর্বোচ্চ টা দিয়েছেন।

  • বার্সেলোনায় আসা

বার্সেলোনাতে আসা আমার জন্য সহজ ছিল না। ১৩ বছর বয়স ছিল মাত্র । নিজের দেশ, পরিবার, সবকিছুকে পেছনে ফেলে একটা সম্পূর্ন নতুন জায়গা। যেখানে কেউ আমাকে চেনে না, সেখানে আসা সহজ ছিল না মোটেই। আমি অনেক লাজুক ছিলাম। তবে কেবল আমার স্বপ্নপূরণ নিয়ে ভাবতাম কেবলমাত্র।

  • নিজের স্বভাব

আমি শুরু থেকেই লাজুক। মিডিয়া তে খুব বেশি কথা বলি না। তবে কাছের মানুষের সাথে কথা বলতে বেশ স্বচ্ছন্দ বোধ করি।

  • কাদের পছন্দ করেন

ক্রীড়াঙ্গনে আমি অনেককেই পছন্দ করি। এই যেমন টেনিসে নাদাল, ফুটবলে ক্রিস্টিয়ানোর নাম আসতে পারে। আরও অনেকেই আছে।

  • বার্সেলোনা কী?

বার্সেলোনা আমার জীবন। এটি আমাকে সব দিয়েছে। অনেক কিছু শিখিয়েছে।

  • বার্সেলোনায় এখন

আমি এখন ঠিক আছি। যদিও ভালো বোধ করতে কিছু সময় লাগলো। আমি এখনও বার্সেলোনার হয়ে সম্ভাব্য সবগুলো শিরোপার জন্য লড়াই করতে চাই । তবে ক্লাব কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বার্সেলোনার মতন ক্লাবের এই অবস্থার মধ্য দিয়ে যাওয়া উচিত ছিল না। এ অবস্থা আসলে সবার জন্যেই কঠিন।

  • সমালোচনায় কান দেন?

লোকে কী বলে সেটা নিয়ে আমি খুব বেশি চিন্তা করি না। প্রত্যেকেরই আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি থাকবে, এটাই স্বাভাবিক ।

  • সাম্প্রতিক ঘটনা

সম্প্রতি বিভিন্ন বিষয়েই কষ্ট পেয়েছি আসলে। খেলাধূলার বাইরে অন্য বিষয়েও।

  • ভালোবাসা

আমি আগেও বলেছি, আমি কৃতজ্ঞ থাকবো তাদের প্রতি, যারা আমাকে সব সময়ে ভালোবাসা দিয়েছে, সমর্থন দিয়েছে।

  • ম্যারাডোনার মৃত্যু

ম্যারাডোনার মৃত্যুর খবরটা আমি বিশ্বাস করতে পারিনি। খবরটা আমি বাড়িতে বসেই শুনি। আমার বাবার থেকে একটা সংবাদ পাই এরকম এবং টেলিভিশন চালু করে সব কিছু জানতে পেলাম। আমরা কেউ বিশ্বাস করতে পারিনি যে, ডিয়েগো নেই। এটা অবিশ্বাস্য। তাঁর প্রতি গোল উৎসর্গের বিষয়টা? নিউওয়েল ওল্ড বয়েজের থেকে আমাকে জার্সিটা দেয়া হয়েছিল। আমি জানতাম আমাকে গোল করতে হবে। এবং গোল করতে পেরেছিলামও।

  • রাজনীতি

আমি রাজনীতি নিয়ে কথা বলাটা পছন্দ করি না তেমন। তবে আমার দেশের জন্য সেরাটা দিতেই চাই। আমি চাই আমার দেশের মানুষ গুলো খুশি হোক।

  • দর্শকশূন্য মাঠ

এ বছর বিশেষ কারণে দর্শকশূন্য মাঠে খেলার অনুভূতি অন্যরকম। এটা অনেক কঠিন। অনুভূতিটা খুব খারাপ। মনে হয় যেনো সব শীতল হয়ে গেছে।

  • বায়ার্নের বিপক্ষে ম্যাচটা

বায়ার্নের বিপক্ষে হার টা অনেক কষ্টের ছিল বেশ। এমন না যে আমি কখনও হারিনি। অনেক হেরেছি। কিন্তু এই ম্যাচটা যেভাবে খেলেছি বা যে ফলাফল হয়েছে সেটা কষ্টকর । তবে আমাকে এটা মেনে নিতে হবে। মুহূর্তগুলো কঠিন ছিল সত্যি। আমি বিশ্বসেরা হবার চিন্তা নিয়ে খেলি না। আমি চাই আমার দল জিতুক এবং লক্ষ্য থাকে নিজেকে উজাড় করে দেয়া।

  • বার্সেলোনা ছাড়া নিয়ে কাণ্ড

আমি কিন্তু বার্তেম্যুকে আগেও বলেছি ক্লাব ছাড়ার বিষয়ে । কিন্তু তিনি নেতিবাচক ছিলেন। আমার একটা পরিবর্তনের দরকার ছিলো। ব্যুরোফ্যাক্সের মাধ্যমে এটি অফিসিয়ালি ঘোষণা না করে উপায় ছিল না আসলে। বার্তাম্যু আমাকে বেশ কিছু জিনিসে প্রতারিত করেছেন। এমন অনেক কিছু তিনি বলেছেন যেন আমিই ভিলেন হিসেবে উপস্থাপিত হই। অনেক মিথ্যা বলেছেন শেষ কয়েক বছরে। এ বিষয়ে আর বিস্তারিত না যাই।

  • সিদ্ধান্তটা কতো কঠিন ছিলো?

আমি যখন ক্লাব ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেই, সেটা আমার জন্যে মোটেই সহজ ছিল না। আমার বাচ্চা কিংবা পরিবার কেউই চাচ্ছিল না। কিন্তু আমার মনে হচ্ছিল এটাই আমার জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত সেই সময়ে। আমি চাইলে তো বিনামূল্যেই চলে যেতে পারতাম। আদালতে গেলে রায় আমার পক্ষেই হতো। একজন নয় বেশ কয়েকজন আইনজীবীও আমাকে তাইই বলেছেন। কিন্তু আমি ক্লাব কে আদালতে প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করাতে চাই নি।

  • সুয়ারেজের চলে যাওয়া

সুয়ারেজকে যেভাবে যেতে দেয়া হয়েছে বা বাধ্য করা হয়েছে তা স্রেফ পাগলামি মনে হয়েছে আমার কাছে। তাও এমন একটি ক্লাবে যা আমাদের মতই একই লক্ষ্যে লড়াই করছে ।

 

  • বার্সেলোনার অবস্থা আসলে কী?

ক্লাবের এখন যা অবস্থা তা আসলেই কঠিন। এই মুহূর্তে ভালো খেলোয়াড় কেনার মতন টাকা নেই ক্লাবের । নেইমার কে দরকার। তাকে আনার মতন সামর্থ্য ক্লাবের এখন আছে বলে মনে করি না। নতুন যে প্রেসিডেন্ট হয়ে আসবেন, তাঁর জন্য সহজ ও হবে না। বুদ্ধিমত্তার সাথে কাজ করতে হবে এইসব ব্যাপারে।

  • এম এস এনের (মেসি-সুয়ারেজ-নেইমার) বর্তমান সম্পর্ক

আমাদের মধ্যে আলাদা হোয়াটসএপ গ্রুপ আছে। আমরা সম্পর্ক রক্ষা করি, খেলার বাইরেও আমাদের মধ্যে বেশ আলাপ চলে।

  • গার্দিওয়ালার সাথে যোগাযোগ

গার্দিওলার সাথে আমার সর্বশেষ চ্যাট কখন হয়েছিল তা খেয়াল নেই। তবে আমাদের কথা হয়। তাঁর সাথে আবার কখন দেখা বা একসাথে কাজ করা হবে সেটা বলা মুশকিল। আমার কাছে সে সবসময় ই স্পেশাল। কোচ হিসেবে গার্দিওলা, লুইস এনরিকে দুজনই সেরা। অনেক কিছু শিখেছি তাদের থেকে।

  • কোম্যানের সাথে সম্পর্ক

কোম্যানের সাথে আমার সম্পর্ক ভালো, আমার মনে হয় উনি ভালই কাজ করছেন। নতুনদেরকে সুযোগ দেয়া হচ্ছে। রাতারাতি সব বদলে যাবে না।ধীরে ধীরে অনেক কিছুই উন্নত হচ্ছে ।

  • ক্লাব নির্বাচন নিয়ে

ক্লাবের ইলেকশন বা এরকম কিছুর প্রতি আমি কোন আলাদা মন্তব্য করতে পারব না। লোকে বলবে আমি ক্লাবকে নিয়ন্ত্রণ করি; যা মোটেই সত্যি না। আমি চাই এমন কেউ জিতে আসুক, যে ক্লাবকে জেতানোর জন্য আসে।

  • আপনি তো ক্লাব মেম্বার?

হ্যাঁ। তবে ভোট দেবো কি না, নিশ্চিত নই। আমি এসবে জড়াতে চাই না।

  • জাভি আসলে বার্সেলোনায় থাকবেন?

সেটা এই মুহূর্তে বলা মুশকিল। জুনের আগে কিছু বলা যাচ্ছেও না । আমি কোন ক্লাবের সাথে নেগোসিয়েশনে যাচ্ছিও না। জুন আসুক, তারপরে দেখা যাবে । তখন কি হবে আমি তা এখন ই বলতে পারছি না। কারণ আমি নিজেও যে এখনও জানি না। আমি তো আমেরিকাতেও খেলব বলে এক সময় ভাবতাম। কিন্তু আমি জানি না কী হবে। রিয়াল মাদ্রিদ কিংবা এটলেটিকো মাদ্রিদে অন্তত যাচ্ছি না। আমি যদি ক্লাব ছাড়িও সেটা চাই সম্ভাব্য সবথেকে ভালো উপায়েই হোক। এবং ফিরেও যদি আসি ক্লাবের জন্যে কিছু করতে সচেষ্ট হবো। বার্সেলোনা যে কোন খেলোয়াড়ের থেকেই ঊর্ধ্বে তা আমার জন্যেও প্রযোজ্য।

  • বর্তমান সতীর্থদের সাথে সম্পর্ক

ড্রেসিংরুমে সাধারণত ক্লাবে যারা অনেক দিন ধরে আছে স্বাভাবিকভাবেই তারা বন্ধু হয়েই যায়। তবে সবার সাথেই আমার সম্পর্ক ভালো। অনেকে তো এটাও বলে যে আমি ক্লাবের ড্রেসিং রুম ও নিয়ন্ত্রণ করি। এমন কি আর্জেন্টিনাতেও এই কথা হতো। বাস্তবে আমি আসলে এমন কিছু পছন্দ করি না।

  • গ্রিজম্যানের সাথে সম্পর্ক

গ্রিজম্যানের সাথে আমার সম্পর্ক বেশ উষ্ণ। আমরা একসাথে ড্রিংকও করি প্রায়ই।

  • বাসায় সময় কাটে যেভাবে

এখন আমি প্লে স্টেশন নিয়ে কম খেলি। থিয়াগো বেশি খেলে ইদানিং। ও একটু লাজুক গোছের। খুব বেশি লোকের সাথে কথা বলা পছন্দ করে না। তবে সে মানিয়ে নিচ্ছে। মাতেও বরং নিজে নিজে সবকিছু ভালো ম্যানেজ করে নিতে পারে।

  • প্লে স্টেশনে কখনো ক্রিস্টিয়ানোকে দলে নিয়েছেন?

না। কখনো না।

  • বাচ্চাদের স্কুলের গার্জিয়ানদের হোয়াটসএপ গ্রুপে আছেন?

না। ওটা আমার স্ত্রী দেখে।

  • কান্না করেছেন কখনো?

আমি কেঁদেছি কখনও কখনও। খেলার বাইরের কিছু নিয়েও। সাইকোলজিস্ট এর সাথে কনসাল্টেশন টা আমার করা হয়নি। যদিও এন্তেলিয়া আমাকে এ ব্যাপারে বলেছেও। কিন্তু আমি সবকিছু নিজের মধ্যে রেখে দিতে চেয়েছি, কখনও সাইকোলজিস্টের শরণাপন্ন হওয়া হয়নি। তবে সম্ভবত প্রয়োজন ছিলো।

  • অবসরের পর কী?

রিটায়ারমেন্টের পরে কি হবে তা জানি না। আমি নিজেকে কোচ হিসেবে এখনই দেখতে পাই না। হয়ত স্পোর্টিং ডিরেক্টর হিসেবে ভাবি, তবে নিশ্চিত নই।

  • চলতি বছরের খেলা

হ্যা, এই বছরের সূচিটা খেলোয়াড়দের জন্য বেশ কঠিনই। কেউ খেলোয়াড়দের কথা চিন্তা না করে অর্থনীতিকে প্রাধান্য দেয় বরং। এই নিষ্ঠুর বছর টা শেষ হোক। আগামী বছরটা সবার জন্যেই ভালো কিছু নিয়ে আসুক।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...