হে আমার আগুন…

দিনের শেষে ভারতীয় ক্রিকেটকে এই দুই প্রজন্মই তো ভরিয়ে দিয়েছে। তাই এভাবে দেখতে ভালো লাগে না লোকটাকে। অচিরেই ‘ধোনি ধোনি!’ চিৎকারটার সাথে কানকে জাতীয়তাবাদ শিখিয়েছি আমরা অনেকগুলো বছর ধরে, এই যে একটা লোক, বৃদ্ধ লোক, মাঠে নামলেই গোটা দেশ আশা করে আছে, পারলে ও-ই পারবে- এটা তো একদিনে হয়নি। তবে একথাও সত্যি- ‘You either die a hero, or you live long enough to see yourself become the villain.’

আমার আগুন হল সৌরভ গাঙ্গুলি, বীরেন্দ্র শেবাগ, রাহুল দ্রাবিড়, ভিভিএস লক্ষ্মণ – এই নামগুলো। মিড নাইন্টিসে জন্মানো আমার মতো একটা প্রজন্মের কাছে এই নামগুলো একেবারেই শুধু ক্রিকেটারের নাম না। আমাদের যাপনের নাম।

সেই ছোটো ট্রাম্পকার্ড থেকে খাতার মলাটের ওপর নেমপ্লেট, হিরো হোণ্ডা থেকে এমআরএফ কিংবা ব্রিটানিয়া, ২০০৩ বিশ্বকাপ, ন্যাটওয়েস্ট, অজি সফরগুলো, ফাঁকা রাস্তায় জহিরের বোলিং স্টাইল কপি করা থেকে সাহারা ইন্ডিয়ার প্রথম সেই হালকা নীল জার্সি, পন্টিং-এর স্প্রিং লাগানো ব্যাটের রহস্য থেকে সৌরভের বাপি বাড়ি যা- ফেসবুকীয় দুনিয়ার অনেক দূরে এই সবকিছু একটা প্রজন্মকে ধারণ করেছে।

আর সেই প্রজন্ম যখন তার সুপারস্টারদের একেবারে সাদামাটা ভাবে চলে যাওয়াটা চোখের সামনে দেখে তখন একটা অদ্ভুত রাগ-ক্রোধ-ঘৃণা জন্মায়। আর সেই রাগের আগুনেই আমি মহেন্দ্র সিং ধোনিকে দেখেছিলাম আজ থেকে ১২-১৩ বছর আগে। মনে হয়েছিল- এই লোকটার যেন কখনো ভালো না হয় যে দলের সিনিয়রদের এভাবে বের করে দিতে পারে।

তারপর নীল দরিয়ায় অনেক জল বয়ে গেছে। এই লোকটাই তিনটি আইসিসি ট্রফি এনে দিয়েছেন আসমুদ্রহিমাচলে। সেই রাগের আগুনের ভেতর সমস্ত অভিমান পুড়ে গিয়ে নিজেই আগুন হয়ে উঠেছেন মাহি। ক্রমে ক্রমে আমাদের রেলগাড়িও শৈশব-কৈশোর পেরিয়ে এসে গেছে যৌবনে। এ বয়সে তো আর অভিমান জমিয়ে রাখা যায় না।

যখন দেখি ভারতের সাদা বলের সর্বশ্রেষ্ঠ ফিনিশার হ্যান্ড আই কো-অর্ডিনেশনের অভাবে একটাও ব্যাটে বলে জমাতে পারছেন না, যখন দেখি বয়সের ভারে একটা মানুষের বিস্তৃত কাঁধটা যা ভারতকে ধারণ করল এতগুলো দিন তা ঝুঁকে যাচ্ছে- তখন সমাপতনের কথা মনে পড়ে, মনে পড়ে ১২-১৩ বছর আগের দিনগুলো। তবে সে আর অভিমান হয়ে আসে না, ভালবাসা হয়ে আসে।

দিনের শেষে ভারতীয় ক্রিকেটকে এই দুই প্রজন্মই তো ভরিয়ে দিয়েছে। তাই এভাবে দেখতে ভালো লাগে না লোকটাকে। অচিরেই ‘ধোনি ধোনি!’ চিৎকারটার সাথে কানকে জাতীয়তাবাদ শিখিয়েছি আমরা অনেকগুলো বছর ধরে, এই যে একটা লোক, বৃদ্ধ লোক, মাঠে নামলেই গোটা দেশ আশা করে আছে, পারলে ও-ই পারবে- এটা তো একদিনে হয়নি। তবে একথাও সত্যি- ‘You either die a hero, or you live long enough to see yourself become the villain.’

শেষটা এভাবে হোক চাইব না। শুধু আমার ছেলেবেলার সেই দুষ্টু লোকটাকে এটুকুই বলব-

প্রতিদিন সূর্য ওঠে, তোমায় দেখবে বলে

হে আমার আগুন, তুমি আবার ওঠো জ্বলে

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...