ডাউন আন্ডারের ‘পান্টার দ্য গ্রেট’

তিনি অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। দ্বিতীয় স্থানে আছেন অবশ্য এক ভারতীয়। তিনি হলেন স্বয়ং শচীন টেন্ডুলকার। শচীন করেন ১৮০৯ রান। তবে, শচীনের এই রান করতে খেলতে হয় ২০ টেস্ট, আর পন্টিং খেলেন শচীনের চেয়ে পাঁচ টেস্ট কম। ইনিংসের পার্থক্যটাও এখানে উল্লেখযোগ্য, শচীনের ৩৮ টি ইনিংসের বিপরীতে পন্টিং খেলেন ২৬ ইনিংস। বোঝাই যাচ্ছে, পরিচিত কন্ডিশনে ভারতের বিপক্ষে কতটা প্রতাপশালী ছিলেন ‘দ্য পান্টার’।

ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার টেস্ট সিরিজকে ‘বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি’ বলার সূচনা ১৯৯৬ সালে। দুই সাবেক গ্রেটের নামে এই সিরিজের নাম করণের আগেই সেই ১৯৪৭ থেকে শুরু করে ১৯৯৬ – এর আগ অবধি দু’দল খেলেছে ৫০ টি টেস্ট। মানে ৪৯ বছরে ৫০ টি টেস্ট।

১৯৯৬-৯৭ মৌসুম থেকে ২০১৮-১৯ অবধি দু’দল মোট ১৪ টি বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি খেলেছে। সবগুলো আসরের মধ্যে একটু বেশিই যেন আমেজ ছড়িয়েছিল ২০০৩-০৪ মৌসুম। সেই মৌসুমটা কিছু অভাবনীয় ব্যাটিং কীর্তি দেখার সুযোগ করে দিয়েছিল দর্শকদের।

এর মধ্যে প্রথমেই বলতে হবে রিকি পন্টিংয়ের কথা। সিডনিতে তিনি ২০০৩ সালে ২৫৭ রানের অতিমানবীয় ইনিংস খেলেন। অজিদের সাবেক এই অধিনায়ক অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে তো বটেই, ক্রিকেটের ইতিহাসেই অন্যতম সেরা এক ব্যাটসম্যান। অনন্য ব্যাটিং, কিংবদন্তি নেতা – রিকি পন্টিংয়ের ব্যাপারে এই দু’টি প্রসঙ্গ না টানলেই নয়।

আর ভারতের বিপক্ষে দেশের মাটিতে তাঁর ব্যাট বরাবরই হয়ে উঠতো তলোয়ার। তিনি ১৯৯৯ থেকে ২০১২ – এই সময়ে ভারতের বিপক্ষে ডাউন আন্ডারে খেলেন ২৬ টি টেস্ট ইনিংস। করেন ১৮৯৩ রান। গড়টা অস্বাভাবিক – ৮৬.০৪!

তিনি অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। দ্বিতীয় স্থানে আছেন অবশ্য এক ভারতীয়। তিনি হলেন স্বয়ং শচীন টেন্ডুলকার। শচীন করেন ১৮০৯ রান। তবে, শচীনের এই রান করতে খেলতে হয় ২০ টেস্ট, আর পন্টিং খেলেন শচীনের চেয়ে পাঁচ টেস্ট কম।

ইনিংসের পার্থক্যটাও এখানে উল্লেখযোগ্য, শচীনের ৩৮ টি ইনিংসের বিপরীতে পন্টিং খেলেন ২৬ ইনিংস। বোঝাই যাচ্ছে, পরিচিত কন্ডিশনে ভারতের বিপক্ষে কতটা প্রতাপশালী ছিলেন ‘দ্য পান্টার’। করেন সাতটি সেঞ্চুরি ও সমান সংখ্যক হাফ সেঞ্চুরি।

সেরা ইনিংস ছিল মেলবোর্নের ওই ২৫৭ রান। সেবার তৃতীয় টেস্টের ঘটনা, বক্সিং ডে টেস্ট। পন্টিং মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এমসিজি) রানের পাহাড়ে ওঠেন। বীরেন্দ্র শেবাগের এক প্রায় ডাবল সেঞ্চুরির (১৯৫ রান) সুবাদে প্রথম ইনিংসে ৩৩৬ রান করে ‘প্রিন্স অব ক্যালকাটা’ খ্যাত সৌরভ গাঙ্গুলির ভারত।

জবাবে অস্ট্রেলিয়া করে ৫৫৮। থ্যাঙ্কস টু পন্টিং। ম্যাচটায় সেখানেই ব্যাকফুটে চলে যায় ভারত। নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ভারত করতে পারে মাত্র ২৮৬। চতুর্থ ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার তাই মাত্র ৯৫ রান তাড়া করতে কোনো সমস্যাই হয়নি। নয় উইকেটের বড় জয় পায় অজিরা। তখনকার সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ অধিনায়ক পন্টিং পান ম্যাচ সেরার পুরস্কার।

পন্টিংকে জবাবটা অবশ্য পরের টেস্টেই দিয়েছিলেন শচীন। সেবার সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এসজিসি) শচীন প্রথম ইনিংসে করেন অপরাজিত ২৪১ রান। সাথে যোগ্য সঙ্গ দেওয়া ভিভিএস লক্ষ্মণ করেন ১৭৮ রান। ভারত সাত উইকেট হারিয়ে যখন ইনিংস ঘোষণা করে তখন, বোর্ডে ৭০৫ রানের পাহাড় জমা হয়েছে।

সেই টেস্টে দু’দলই ব্যাটিংয়ে অনবদ্য ছিল। তাই টেস্ট থেকে ফল বের হয়নি। ড্র হয়। সিরিজও ১-১ ব্যবধানে ড্র হয়। আগের আসরে জয়ের সুবাদে ট্রফি ভারতের হাতেই থেকে যায়।

পন্টিং বা শচীন নন – সেই সিরিজের নায়ক অবশ্য ছিলেন ‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান ওয়াল’। রাহুল দ্রাবিড়ের ২৩৩ রানের ইনিংসের সুবাদেই অ্যাডিলেডে চার উইকেটে জিতেছিল ভারত। যদিও, সেই ম্যাচেও পন্টিংয়ের ২৪২ রানের বিশাল এক ইনিংস ছিল। ডাউন আন্ডারে পন্টিং বরাবরই ছিলেন অন্য জাতের!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...