‘যা কোনোদিন হয়নি, তাই করতে চাই’

হেড কোচ রাসেল ডমিঙ্গো পরিস্থিতি আঁচ করতে পারছেন এবং তিনি মনে করেন টেস্ট ক্রিকেটের জন্য আলাদা পরিবেশ তৈরি করে খেলোয়াড়দের উদবুদ্ধ করতে হবে। তবে আপাতত কোচ মনে করেন সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের আসন্ন নিউজিল্যান্ড সিরিজে খেলোয়াড়েরা মনযোগী হবেন। এই সিরিজটাকে খুব গুরুত্বপূর্ন মনে করছেন ডমিঙ্গো।

তিন ওয়ানডে ও তিন টি-টোয়েন্টি খেলতে প্রায় ছয় সপ্তাহের জন্য নিউজিল্যান্ড সফরে উড়াল দিয়েছে তামিম-মুশফিকরা। কিছুদিন আগে খর্বশক্তির উইন্ডিজের বিপক্ষে ঘরের মাঠে টেস্টে ধরাশায়ী হয়েছে বাংলাদেশ দল। এর জন্য বেশ সমালোচিত হতে হয়েছে বোর্ডসহ খেলোয়াড়দেরও।

হেড কোচ রাসেল ডমিঙ্গো পরিস্থিতি আঁচ করতে পারছেন এবং তিনি মনে করেন টেস্ট ক্রিকেটের জন্য আলাদা পরিবেশ তৈরি করে খেলোয়াড়দের উদবুদ্ধ করতে হবে। তবে আপাতত কোচ মনে করেন সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের আসন্ন নিউজিল্যান্ড সিরিজে খেলোয়াড়েরা মনযোগী হবেন। এই সিরিজটাকে খুব গুরুত্বপূর্ন মনে করছেন ডমিঙ্গো।

নিউজিল্যান্ড সিরিজ, টেস্ট দল এবং সর্বোপরি সাকিব আল হাসানকে নিয়ে ক্রিকেট বিষয়ক গণমাধ্যম ইএসপিএন ক্রিকইনফোতে একান্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন প্রোটিয়া কোট রাসেল ডমিঙ্গো।

নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশ কখনো কোনো ম্যাচ জেতেনি। বড় চ্যালেঞ্জ নিশ্চয়ই?

নিউজিল্যান্ডের মাটিতে কখনোই বাংলাদেশ জয় পায়নি! আমরা জানি এটি অনেক কঠিন একটি সিরিজ হতে যাচ্ছে। এই মূহুর্তে নিউজিল্যান্ড খুব ভালো ক্রিকেট খেলছে। যে বছর থেকে আমি বাংলাদেশের সাথে কাজ করছি লক্ষ্য করেছি ওয়ানডে ক্রিকেটটাই অনেক খেলোয়াড়ের বেশি পছন্দ। আমরা একটি প্রতিদ্বন্ধীতামূলক সিরিজের আশা করছি।

পেসারদেরকে সেখানে খুব বড় একটি ভূমিকা পালন করতে হবে। তো সাদা বলের এই সফরে আপনি কোন ধরনের উন্নতি দেখার জন্য অপেক্ষা করছেন?

আমরা সাকিব আল হাসানকে ছাড়া খুব বেশি ওয়ানডে ক্রিকেট খেলিনি। তাই চেষ্টা করছি একজন অলরাউন্ডার খোজার যে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে টিমটা ব্যালেন্স করতে পারবে।  মিরাজ টেস্টে দেখিয়েছে সে এটা পারবে। কিন্তু আমাদের আরো কিছু অলরাউন্ডার খুজতে হবে যারা আমাদেরকে আরো বেশি অপশন দেবে। এরপর আমাদের সমস্যা হচ্ছে লোয়ার-মিডল অর্ডারে দ্রুত রান করতে পারে এমন একজনকে সেখানে প্রতিষ্ঠিত করা। আমরা বেশ কয়েক মাস ধরেই এই জায়গায় উন্নতির চেষ্টা করে যাচ্ছি।

সে বিবেচনায় সবার উপরে সাইফুদ্দিনের নামটাই সবার আগে মাথায় আসে। চার বছর ধরে সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আছে, তার উন্নতি নিয়ে আপনার চিন্তাগুলো কি?

তার এখনো অনেক কাজ করতে হবে, বিশেষ করে তার ব্যাটিং। সে এখনো নিয়মিত না; যেভাবে সে ব্যাট করে। সে অবশ্য বেশ কিছু ইঞ্জুরি কাটিয়ে ফিরেছে। আমরা চাই তার বলের গতি আরো ঘন্টায় ৫-৬ কি.মি বাড়ুক। আমি মনে করি বোলিং কোচ ওটিস গিবসনও এটা চায়। যদি সে একটানা ১৩২-১৩৬ কি.মি গতিতে বল করতে পারে তাহলে সেটাই আমরা চাইবো। সাদা বলের ক্রিকেটে সে আমাদের জন্য বেশ ভালো একটি প্যাকেজ।

তামিমের জন্য অধিনায়ক হিসেবে কোন বিষয়গুলোকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন? এবং কি মনে করেন বাংলাদেশ সিরিজ জিতবে?

হ্যা অবশ্যই। আমরা মনে করি যেহেতু তাসকিন, হাসান মাহমুদ, মুস্তাফিজ, সাইফুদ্দিন এবং শরিফুলের মতো বেশ কিছু পেসার নিয়ে যাচ্ছি সেহেতু আমাদের পেস এট্যাক বেশ শক্তিশালী হবে। আমরা পেসারদের নিয়ে আগ্রাসীভাবেই খেলতে চাই। আগে বাংলাদেশ দেশের বাইরেও স্পিন নির্ভর হয়েই খেলতে যেতো। সেটির পরিবর্তন করতে চাচ্ছি আমরা। আমরা চাই শুধু স্পিন না, ইনিংসে শুরু কিংবা ইনিংসের মাঝে সব যায়গায়ই সাথে পেসারদের আনতে। এই সিদ্ধান্ত গুলিই খেলার মাঠে তামিমকে নিতে হবে। মাঝে ওভার গুলোতে কিংবা শুরুতে কিভাবে পেসারদের সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে।

আপনি কি মনে করেন আপনি দায়িত্ব নেবার পর দলের কতটুকু উন্নতি হয়েছে (সব ফর্মেটেই)?

আমি খুবই খুশি ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টিতে তারা যেভাবে খেলেছে। ভারতের মাটিতে টি-টোয়েন্টি জেতা এবং ৩য় টি-টোয়েন্টিতে তাদেরকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেওয়া, যেটা আমরা প্রায় জিতে গিয়েছিলাম। আমরা টানা ৬ ওয়ানডে জিতেছি, আমরা শেষ ৬ টি-টোয়েন্টি তেও জয় পেয়েছি যা আমদের জন্য ভালো কামব্যাক। সাদা বলের ক্রিকেটে দল অবশ্যই ভালো অবস্থানে আছে।

টেস্ট ক্রিকেটে যেখানে আমাদের থাকার কথা ছিলো সে তুলনায় আমরা অনেক দূরে আছি। আমাদের টেস্ট দলের অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। আমাদেরকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে কিছু খেলোয়াড়কে যারা টেস্ট ক্রিকেট খেলতে মুখিয়ে থাকবে। যাদের টেস্ট খেলার সামর্থ্য আছে, দক্ষতা আছে এবং ৫ দিন লড়াই করার মতো সামর্থ্য আছে। এটাই আমদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

আমরা জানি উইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ হারার পর সবাই অনেক হতাশ। এখনই সময় সবাইকে দেখানোর যে আমরা টেস্টে কতটা পিছিয়ে আছি। পূর্বে দুই-একটি টেস্ট ছাড়া তেমন কোনো টেস্ট সিরিজ জয়ই নেই। এই ফর্মেটে এখনো অনেক কাজ করতে হবে। আমি মনে করি কোচ ও টিম ম্যানেজমেন্ট এর জন্য এটা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ যে আমাদের টেস্টে উন্নতি করতে হবে। আমার জন্য এটা এক নম্বর ফর্মেট।

উইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট হারের পর দল কিভাবে আচরণ করেছে?

সবাই খুব হতাশ ছিলো পারফরমেন্স নিয়ে। প্রথম টেস্টে চার দিনই আমরা ফেবারিট ছিলাম এবং শেষ দিনে কিছু বাজে সিদ্ধান্তের কারণে আমরা পারিনি। ২য় টেস্টে আমরা ভালো খেলিনি। কোচরাও বেশ আঘাত পেয়েছে। কিন্তু এটাই আন্তর্জাতিক খেলার বৈশিষ্ট্য। আমাদের সামনে সুযোগ আছে নিউজিল্যান্ড সফরে এটাকে মুছে ফেলার। এবং এমন কিছু করা যা আগে কোনো বাংলাদেশী দল নিউজিল্যান্ডের মাটিতে করেনি, এবং সেটা হলো সিরিজ জয়। এটা কঠিন হলেও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।

প্রোফেশনাল ক্রিকেটার হিসেবে তারা জানে কখন তাদেরকে উঠে দাড়াতে হবে। তারা জানে কখন তাদের সবুজ জার্সি গায়ে জড়াতে হবে দু’সপ্তাহের মধ্যেই। তাদের মন মানসিকতা বেশ পরিষ্কার এবং তারা ভবিষ্যতেই ফোকাস করবে, অতীতে নয়।

উইন্ডিজের বিপক্ষে অধিনায়ক মুমিনুল হক কোন কাজটি ভুল করেছে বলে আপনি মনে করেন?

মুমিনুলের এখনো অনেক কিছুই শেখার আছে। কিন্ত সে সঠিক জায়গাতেই আছে। সে দলের উপরই সম্পূর্ণ ফোকাস রেখেছিলো। সে সামনে থেকেই দলকে নেতৃত্ব দিতে চেয়েছিলো। এটা তার জন্য নতুন অভিজ্ঞতা। সে আরো ভালো করবে। আমরা তাকে সমর্থন করি, গাইড করি এবং উপদেশ দেই সে যত ভালো করতে পারে। কিন্তু তাকে তার অধিনায়কত্বের নিজের রাস্তা খুজতে হবে, যেটা এখনো সে উন্নতির চেষ্টা করছে।

এটা এক রকম শুরু। যেটা তার জন্য আরো কঠিন করে দিচ্ছে। যদি সে এক সপ্তাহের ব্যবধানে আরেক টেস্ট খেলতে পারতো তাহলে তার জন্য সহজ হতো। কিন্থ তাকে আরো বেশ কিছু মাস অপেক্ষা করতে হবে পরের টেস্টের জন্য। এটা সহজ না, কিংবা সাধারণ কোনো কাজ না, কিন্তু আমি জানি এটা সে করতে চায় এবং সে এটা করবে বলেই প্রত্যয়ী। আমি তাকে ১০০% সমর্থন করি সে যেই লক্ষ্য সেট করেছে সেটা যেনো অর্জন করতে পারে।

সবশেষে, শ্রীলঙ্কা সিরিজ না খেলে আইপিএলকে বেছে নেওয়ায় আপনি সাকিবের সিদ্ধান্তকে কিভাবে নিচ্ছেন?

কোচ হিসেবে এটা খুবই কঠিন। আমি সবসময়ই চাই সাকিব দলে থাকুক। অপরদিকে, যদি এখানে একজন খেলোয়াড় না খেলতে চায় এবং তার যদি অন্য কোনো লিগ খেলার সুযোগ হয়। এটা খুবই কঠিন তাকে তার কিছু সিদ্ধান্তের উপর বিচার করা। আমি মনে করি এই সিদ্ধান্তটা তার। সে হয়তো অনেকের কাছ থেকে মতামত নিতে পারে তবে এই সিদ্ধান্তটা সম্পূর্ণ তাকেই নিতে হবে। কোচ হিসেবে আমরা তার সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাই। তার জীবন এবং ক্যারিয়ারে এটা আমাদের উচিত হবে না তাকে এই সিদ্ধান্ত দিয়ে বিচার করা।

আমি জানি সে যখন দেশের হয়ে খেলতে চাবে, সে কোন ফর্মেটে খেলবে এসব সিদ্ধান্ত নিয়ে সম্ভবত আমাদের আলোচনা করতে হবে। যেভাবে আমাদের ক্রিকেট এখন যাচ্ছে কেউ কাউকে জোর করে খেলাবে না যেকোনো ফর্মেটেই। আমাদেরকে খেলোয়াড় এবং বোর্ডের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাতে হবে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...