শচীন ও ‘নন-স্ট্রাইকার’ অঞ্জলি!

নব্বই দশকের সময়ের একটা গল্প। ভারতীয় ক্রিকেটাররা তখন মিডিয়ার স্পটলাইট তো বেশ ভালভাবেই কেড়েছেন, কিন্তু এই স্পটলাইট থেকে তাঁদের পরিবারেরা কিভাবে যেন বেঁচে গেছে। মানে বলতে চাইছি, এখন যেমন কেউ সুপারস্টার হলেই আমরা তার জ্ঞাতিগোষ্ঠী সহ চিনে ফেলি, তখন ওরকম ছিল না। আর সেকারণেই সে সময়ে পুরো ভারতের প্রিয়তম হওয়া সত্ত্বেও শচীন টেন্ডুলকারের প্রিয়তমা অঞ্জলীকে খুব কম ভারতবাসীই চিনত। গল্পটা ঐ নব্বই দশকেরই, খুব নির্দিষ্ট করে বললে ১৯৯৮ সালের।

নব্বই দশকের সময়ের একটা গল্প। ভারতীয় ক্রিকেটাররা তখন মিডিয়ার স্পটলাইট তো বেশ ভালভাবেই কেড়েছেন, কিন্তু এই স্পটলাইট থেকে তাঁদের পরিবারেরা কিভাবে যেন বেঁচে গেছে। মানে বলতে চাইছি, এখন যেমন কেউ সুপারস্টার হলেই আমরা তার জ্ঞাতিগোষ্ঠী সহ চিনে ফেলি, তখন ওরকম ছিল না। আর সেকারণেই সে সময়ে পুরো ভারতের প্রিয়তম হওয়া সত্ত্বেও শচীন টেন্ডুলকারের প্রিয়তমা অঞ্জলীকে খুব কম ভারতবাসীই চিনত। গল্পটা ঐ নব্বই দশকেরই, খুব নির্দিষ্ট করে বললে ১৯৯৮ সালের।

  • দ্বৈত-আমন্ত্রণ

১৯৯৮ সালের ২৭ আগস্ট ছিল স্যার ডন ব্রাডম্যানের ৯০তম জন্মদিন। জন্মদিনে তিনি ভাবলেন, তিনি তাঁর প্রিয় ব্যাটসম্যান আর প্রিয় বোলারকে নিমন্ত্রণ জানাবেন। যেই ভাবা সেই কাজ, তিনি শচীন টেন্ডুলকার আর শেন ওয়ার্নকে তাঁর অ্যাডিলেডের বাসাতে নিমন্ত্রণ করলেন। শচীন টেন্ডুলকার যখন সেই নিমন্ত্রণ পেলেন, খুব স্বাভাবিকভাবেই তিনি ভীষণ খুশি হলেন। কিন্তু ব্যাটিং মায়েস্ত্রোর খুশি খুব অল্প সময়ের মাঝেই চিন্তায় রূপ নিল!

শচীন টেন্ডুলকারের চিন্তার কারণ ছিল ‘রাজীব গান্ধী খেল রত্ন অ্যাওয়ার্ড’, যেটা কিনা ছিল ভারতের খেলাধুলার সর্বোচ্চ সম্মাননাসূচক পুরস্কার। সে বছর সে পুরস্কারের জন্যে মনোনীত করা হয়েছিল শচীনকে, আর সেই পুরস্কারের অনুষ্ঠানের তারিখ ছিল ২৯ শে আগষ্ট, ১৯৯৮!

ঠিক ব্রাডম্যানের আমন্ত্রণের একদিন পর!

  • নন-স্ট্রাইকার অঞ্জলি

শচীন টেন্ডুলকার ভাবতে বসলেন। ডন ব্রাডম্যানের আমন্ত্রণ বাতিল করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে তাঁর মধ্যে নেই। কিন্তু রাজীব গান্ধী খেল রত্ন অ্যাওয়ার্ড নিতে যাবেন না, এমনটাও তিনি ভাবেন না। অ্যাডিলেড থেকে সোজা দিল্লীর অনুষ্ঠানে যাওয়া যেত, কিন্তু শচীন তা করতে পারছেন না। কারণ, দিল্লীতে সেই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্যে সরকারের তরফ থেকে নির্দিষ্ট একটি পোশাক দেওয়া হয়েছে। সেই পোশাক ছাড়া শচীন কোনভাবেই সেখানে উপস্থিত হতে পারেন না।

কিন্তু, সেই পোশাক পরতে হলে অ্যাডিলেড থেকে তাঁকে মুম্বাইতে যেতে হবে, এরপর সেখান থেকে দিল্লী। এতে করে তিনি অনুষ্ঠানে হাজিরই হতে পারবেন না। এখন তাহলে উপায়?

উপায় তখন হলেন শচীনের সহধর্মিণী অঞ্জলী। তিনি স্ট্রাইকে থাকা শচীনের নন-স্ট্রাইক প্রান্তের ব্যাটসম্যান হয়ে গেলেন। দুজনে মিলে ঠিক করলেন, শচীন অ্যাডিলেড থেকে সোজা দিল্লীতে আসবেন।  মুম্বাই থেকে শচীনের জন্যে সেই পোশাক নিয়ে যাবেন অঞ্জলি। এরপর শচীন সেখান থেকে শচীন যাবেন অনুষ্ঠানে।

  • অঞ্জলি-সারা ও সেই সকাল

এতক্ষণ অবধি যে গল্পটা বললাম সেটাতে তেমন কোন বিশেষত্ব নেই। এই গল্প তো অনেকেরই জানা যে শচীন একইসাথে দুই জায়গাতেই নিমন্ত্রণ রক্ষা করেছিলেন। আমার গল্পের মূল ব্যাপারটাই আসলে লুকিয়ে আছে সেদিন সকালে,যে শচীনে চলে গেছেন ভারতের খেলাধুলার সর্বোচ্চ সম্মাননা পুরস্কার নিতে।

শচীন ভালবাসতেন ক্রিকেটকে, অঞ্জলী ভালবাসতেন শচীনকে। শচীনকে ভালবাসার জন্যে শচীনের সবকিছুকেই পরম ভালবাসায় আঁকড়ে রাখতেন অঞ্জলী। শচীনের ছোটখাট থেকে ভীষণ বড় সব অর্জনই আনন্দে ভাসাত অঞ্জলিকে। ঠিক তাই, অঞ্জলি দেখতে চাইছিলেন ডন ব্রাডম্যানের সাথে শচীনকে কেমন লাগছিল । সেই ছবিটি অঞ্জলির কাছে বিশেষ কিছুই ছিল। আর সেদিনে সংবাদপত্রে সেই ছবি ছাপানোরও কথা ছিল।

শচীন অনুষ্ঠানে চলে গেছেন খুব ভোরে। দিল্লীর সেই হোটেলে একা তখন অঞ্জলী আর ছোট্ট সারা। অঞ্জলী ছোট্ট সারাকে কোলে নিয়েই খুব সকালে হোটেলের লবিতে চলে এলেন, সেদিনের সংবাদপত্রের খোঁজ করতে লাগলেন। স্যার ডন ব্রাডম্যানের সাথে তাঁর প্রিয়তম মানুষটাকে কেমন লাগছে দেখার তর সইছিল না তাঁর।

হোটেলের লবি থেকে তাঁকে বলা হল, ডেলিভারিম্যান আজকে আসতে দেরী করছে। তাই এখনও সেদিনের সংবাদপত্র এসে পৌঁছায়নি। তিনি অঞ্জলিকে কিছু সময় অপেক্ষা করতে বললেন।

অঞ্জলী কিছু সময় অপেক্ষাও করলেন। কিন্তু ততক্ষণেও সংবাদপত্র না আসায় অঞ্জলী অস্বস্তিতে ছটফট করতে লাগলেন। তিনি ছোট্ট সারাকে কোলে তুলে নিয়ে হোটেল থেকে বের হয়ে এলেন।

শচীনের একটি অর্জনের ছবি অঞ্জলীর কাছে এতটাই দামী ছিল!

  • সকালের রাস্তায়

ছোট্ট সারাকে কোলে নিয়ে অঞ্জলী একটি সংবাদপত্রের দোকান খুঁজতে লাগলেন। দিল্লীতে এসব খুব বেশি খুঁজতে হয়না, খুব অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই পেয়ে গেলেন অঞ্জলি। সারাকে কোলে নিয়েই তিনি দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে সংবাদপত্র খুলে শচীনকে দেখতে লাগলেন।

সারাও শচীনকে চিনতে ভুল করল না। মায়ের মেলে ধরা পত্রিকাতে সে বাবাকে দেখতে পেয়ে বলে উঠল, ‘বাবা… বাবা…’

আগেই বলেছি, সেসময় ভারতীয় ক্রিকেটের তারকারা মিডিয়ার আলো সেভাবে পেতেন না। দোকানির তাই ধারণাই ছিল না তাঁর সামনে কে দাঁড়িয়ে আছে। সে তাই সারাকে এমন করতে দেখে অঞ্জলিকে বলে, ‘কি তাজ্জব ব্যাপার দেখুন তো ম্যাডাম! এই দেশের একটা ছোট্ট শিশু অবধি শচীনকে চেনে!’

দোকানির যদি জানত কে শচীনকে চিনতে পেরেছে!

অঞ্জলির পত্রিকায় মেলে ধরা সেই ছবিটা । ক্যপশন ছিল : অ্যাডিলেডে স্যার ডন ব্রাডম্যানের জন্মদিনে ওয়ার্ন- ব্রাডম্যান- শচীন

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...