স্টিভ-গিল ও একটি লাল রুমাল

দুটি ভিন্ন দেশ, দু’টি ভিন্ন মহাদেশ, ভিন্ন দু’টি প্রেক্ষাপট কিংবা ভিন্ন দুই প্রজন্ম – মিল শুধু একটাই – একটা লাল রুমাল। না, ভুল বললাম, মিল আরো আছে। শুধু রুমালই নয়, ব্যাটিং চেতনা, দৃঢ়তা চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞা, সাফল্যের আকাশ ছোয়ার সংকল্প – সব কিছুই স্টিভ ওয়াহ’র সাথে একই বিন্দুতে মিলিয়েছে শুভমান গিলকে।লাল রুমাল থাকুক আর নাই থাকুক, হাল না ছাড়ার এই সংকল্পটা যেন থাকে। রুমাল হয়তো পুরনো হলে নষ্ট হয়ে যাবে, কিন্তু গিলের ব্যাটে যেন মরচে না ধরে।

স্টিভ ওয়াহ ও অস্ট্রেলিয়া – দুই পক্ষের সম্পর্কটা জনম জনমের। অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম সেরা অধিনায়কের নাম বলতে গেলে যদি সবার আগেই এই স্টিভের নাম আসে, তাহলে চমকে ওঠার কিছু নেই।

তিনি অস্ট্রেলিয়াকে জিতিয়েছেন ১৯৯৯ বিশ্বকাপের শিরোপা। তবে, স্টিভের বড় কারিশমা ছিল টেস্ট ক্রিকেটে। তার নেতৃত্বে শতকরা ৭২ ভাগ ম্যাচ জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া দল। এই সাফল্যের রহস্যটা কি?

অনেকে বলেন, এর মূলে রয়েছে সামান্য একটা লাল রুমা। অজি এই কিংবদন্তি যখনই মাঠে নামতেন, তার সঙ্গী হত একটা লাল রুমাল। এই রুমালটা তাঁকে দিয়েছিলেন তাঁর দাদু। জনশ্রুতি আছে, এটা নিজের সৌভাগ্যের প্রতীক বলে মানতেন স্টিভ।

কুসংস্কার বলুন কিংবা যাই বলুন না কেন – এই রুমালটা কখনো হাতছাড়া করতেন না স্টিভ। কখনো এই রুমাল দিয়ে ঘাম মুছতেন, কখনো স্রেফ রেখে দিতেন পকেটে। নিজে অবশ্য এই সংস্কার বা অভ্যাস নিয়ে খুব কমই কথা বলেছেন।

২০০৩-০৪ মৌসুমের বোর্ডার গাভাস্কার ট্রফির পরই যখন বিদায়ের ঘোষণা দিয়ে দিলেন, তখন সিডনি শহরের খ্যাতনাম সংবাদপত্র দ্য ডেইলি টেলিগ্রাম এই লাল রুমালের রেপ্লিকা বের করেছিল। সেই রুমাল কেনার জন্য ভক্ত-সমর্থকদের মাঝে হিড়িক লেগে গিয়েছিল – বোঝাই যাচ্ছে স্টিভের ক্যারিয়ারেরই প্রতিশব্দ হয়ে উঠেছিল সেই সামান্য এক লাল রুমাল।

স্টিভ ওয়াহ এখন অতিত। প্রায় দেড় দশকের বেশি সময় হল তিনি মাঠের বাইরে। তবে, আজকাল আরেকজন ক্রিকেটার আছেন যিনি নিজেও একটি লাল রুমাল নিয়ে মাঠে নামেন। তিনি আর কেউ নন, ভারতের ‘ভবিষ্যতের সম্ভাবনা’ খ্যাত শুভমান গিল।

যখন তিনি ব্যাট করতে নামেন, পকেটের ফাঁক গলে দেখা যায় ছোট্ট একটা লাল রুমাল। প্রায় তিন বছর আগে ভারতের অনূর্ধ্ব ১৯ দল নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলছিল – তখন পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে তাঁর পকেটে রুমাল দেখা যায়।

গিল বলেছিলেন, ‘আমি শুরু থেকেই এটা ব্যবহার করি। আগে আমি সাদা একটা রুমাল ব্যবহার করতাম। এরপর অনূর্ধ্ব ১৬ ক্রিকেটের এক ম্যাচে আমি লাল রুমাল নিয়ে মাঠে নামি। সেঞ্চুরি করি। এর পর থেকেই লাল রুমাল রাখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। এটা আমার সাথে অনেকদিন ধরেই আছে।

সময়ের সাথে সাথে গিল আরো বিকশিত হয়েছেন, ব্যাটিংয়ে মনোযোগ বেড়েছে, পরিপক্কতা এসেছে। কিন্তু কৈশোরের অভ্যাসটা যায়নি। ব্রিসবেন টেস্টে অতিমানবীয় জয় পাওয়ার ম্যাচে যখন ইনিংসের ভিতটা গড়েছিলেন – তখনও পকেটে ছিল সেই রুমাল। কে জানে, সেই সৌভাগ্যে ভর করেই কি না ইতিহাস গড়লো ভারত। অজি সৌভাগ্যের ঐতিহ্যই কি অজিদের বিপদ ডেকে আনলো? – কে জানে!

অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট অভিষেক এবারই। তিনটা টেস্ট খেলেছেন, প্রতিটা ম্যাচেই নিজের সামর্থ্যের জানান দিয়েছেন। বড় ইনিংস পাননি – এটা ঠিক, কিন্তু রান তুলেছেন ৫০-এর ওপর গড় নিয়ে। গ্যাবা টেস্টের পঞ্চম দিনে যে ৯১ রানের ইনিংসটা খেললেন তাতেই তো জয়ের ভিত্তিটা গড়ে উঠেছিল ভারতের। কে জানে, এই ইনিংসটা না হলে হয়তো ইতিহাস গড়া হয়ে উঠতো না ভারতের!

দুটি ভিন্ন দেশ, দু’টি ভিন্ন মহাদেশ, ভিন্ন দু’টি প্রেক্ষাপট কিংবা ভিন্ন দুই প্রজন্ম – মিল শুধু একটাই – একটা লাল রুমাল। না, ভুল বললাম, মিল আরো আছে। শুধু রুমালই নয়, ব্যাটিং চেতনা, দৃঢ়তা চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞা, সাফল্যের আকাশ ছোয়ার সংকল্প – সব কিছুই স্টিভ ওয়াহ’র সাথে একই বিন্দুতে মিলিয়েছে শুভমান গিলকে।

লাল রুমাল থাকুক আর নাই থাকুক, হাল না ছাড়ার এই সংকল্পটা যেন থাকে। রুমাল হয়তো পুরনো হলে নষ্ট হয়ে যাবে, কিন্তু গিলের ব্যাটে যেন মরচে না ধরে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...