‘আমি কারো পেছনে লাগি না’

হঠাৎ করেই দেশের দুই সাবেক অধিনায়ক ও কিংবদন্তি খেলোয়াড় মাশরাফি বিন মুর্তজা ও সাকিব আল হাসান, কাকতালীয়ভাবে একই সময় সুজনের ভূমিকার প্রশংসা করলেন। তারা বললেন বর্তমান বোর্ডে সবচেয়ে কর্মঠ ও প্রশংসনীয় কাজের মানুষ এই সুজন।

বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে আলোচিত ও সমালোচিত চরিত্র সম্ভবত খালেদ মাহমুদ সুজন।

অধিনায়ক হিসেবে প্রথম ড্রেসিংরুম কালচার গড়ে তোলার জন্য তাকে সকলে কৃতিত্ব দেন। সীমিত সামর্থ্য নিয়ে সেই যুগে বড় বড় দলের বিপক্ষে লড়াই করার জন্যও কম প্রশংসা পাননি। সেই মানুষটিই আবার সংগঠক ও কোচ হিসেবে তুমুল সমালোচিত। বলা হয়, নিজের লাভের জন্য এক গাঁদা পদ আকড়ে ধরে আছেন। তার কাজ কী, এমন প্রশ্নও তোলেন অনেকে। তাঁর নামের আগে বসানো হয় বাজে ও উদ্ভট সব বিশেষণ।

হঠাৎ করেই দেশের দুই সাবেক অধিনায়ক ও কিংবদন্তি খেলোয়াড় মাশরাফি বিন মুর্তজা ও সাকিব আল হাসান, কাকতালীয়ভাবে একই সময় সুজনের ভূমিকার প্রশংসা করলেন। তারা বললেন বর্তমান বোর্ডে সবচেয়ে কর্মঠ ও প্রশংসনীয় কাজের মানুষ এই সুজন। মাশরাফি বলেছেন, এই একটা লোকের ওপরই ভরসা রাখা যায়।

তাঁকে নিয়ে হওয়া ট্রল, সমালোচনা এবং কাজ নিয়ে কথা বললেন খালেদ মাহমুদ সুজন। সেই সাথে খেলা ৭১ কে দেওয়া দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে সাকিব ও মাশরাফির করা প্রশংসা এবং বোর্ডের বিপক্ষে অভিযোগ নিয়েও কথা বলেছেন তিনি।

ফেসবুকে আপনাকে নিয়ে যেসব কথাবার্তা হয় বা সেসব বাজে বিশেষণ বসানো হয়; এইগুলো কি কখনো দেখছেন?

আমি ফেসবুক তেমন ইউজ করি না আসলে! মানে আইডি একটা আছে। কিন্তু আমি আসলে অ্যাক্টিভ না। ২-৩টা ফ্রেন্ড আছে। ফ্রেন্ডলিস্টে কাউকে নেই না।  মানে আগে ছিলো। কিন্তু পরে বন্ধ করে দিয়েছি। আমার সব বন্ধুরা বলে, ফেসবুকে অ্যাক্টিভ হওয়ার জন্য। আমার ভালো লাগে না। কিন্তু  আমি জানি আমাকে নিয়ে কি লেখা লেখি হয়। সবাই আমাকে  স্কিনশট পাঠায়।  এভাবে আসলে দেখা জানা হয় আর কি। জানি যে ফেসবুকে আমাকে নিয়ে অনেক ট্রল করা হয়, গতিদানব বলা হয়।

এই শব্দটা বলতে আমি লজ্জা পাচ্ছিলাম। আমরা জানি, আপনি খুব গতিশীল পেসার ছিলেন না। তারপরও ওই লিমিটেশন নিয়েই আপনি ১৯৯৯ সালে পাকিস্তানকে হারানো সেরা খেলোয়াড় ছিলেন। মুলতানে টেস্ট জিতিয়ে দিচ্ছিলেন। আপনার এই জায়গাটা নিয়ে যখন ‘গতিদানব’ বলা হয়, তখন মনটা খারাপ লাগে না?

তখন দাদা, আমি ১৩৫ কিলোমিটার গতিতেও বোলিং করেছি। তখন ছিলো আমার পিক টাইম। আমার বল স্কিড করতো বলে সেটা (গতিটা) বোঝা কঠিন ছিলো। সবচেয়ে বড় কথা আমার ওয়ানডে ইকোনমি রেট কিন্তু পাঁচ। এতোগুলো ওয়ানডে খেলেছি, সেখানে এই আমার ইকোনোমি রেট। কিন্তু এটা (গতিদানব ট্রল) তো মানুষের কথা। মানুষ কী বলবে তা নিয়ে বসে থাকলে তো আমার চলবে না। আমার যতোটুকু ক্ষমতা ছিলো, সেটা দিয়ে আমি খেলেছি। ভালো করেছি না খারাপ করেছি, সেটা সবাই দেখেছে। এখন যদি আপনি আমাকে সাইফউদ্দিনের সাথে তুলনা করেন, তাহলে তো ফেয়ার হবে না। আমাদের সময় এই ট্রেইনার, ফিজিও, বোলিং কোচ, পাওয়ার ড্রিংক, এনার্জি ড্রিংক; এতো কিছু ছিলো না। আমরা তো বালতির পানি খেয়ে বড় হয়েছি, দাদা। আমাদের সময় জানতামও না যে জিম কী! জিম কিভাবে করতে হয় সেটাও জানতাম না।

আপনি বলেছিলেন, দুনিয়ার সব কিছু ছাড়তে পারবো, কিন্তু খেলার মাঠ ছাড়তে পারবো না। সেই ভাবনা থেকেই আপনি কোচিং করাচ্ছেন। তারপরও কোচিং নিয়েও সমালোচনা হয়, বিরক্ত লাগে না? মনে হয় না যে, কাদের জন্য এসব করি!

বিরক্তি তো লাগেই। কিন্তু যাদের জন্য কাজ করি, সেই প্লেয়াররা কিন্তু আমাকে সম্মান করে। এটা কিন্তু বড় পাওয়া। বর্তমান খেলোয়াড়রা বলেন, মাশরাফিরা বলেন; সবাই সম্মানটা দেয়। ওরা তো আমার সামনেই বড় হয়েছে। আমাকে তো ওরা প্লেয়ার হিসেবেই পেয়েছে। যারা খেলার সময় আমাকে পায়নি, এখন যারা যুবদলে বা এইচপিতে, তারাও কিন্তু আমাকে সম্মান করে। তাদের যে কোনো সমস্যায় সাপোর্ট করতে চেষ্টা করি। আসলে কী জানেন, আমার আর এসবে বিরক্ত লাগে না। কারণ এতো বেশি সমালোচনা হয়েছে যে, আমি আর গায়ে মাখি না। আমি যখন খেলেছি, তখন সাধারণ মানুষের জন্য খেলেছি। কিন্তু এখনকার কাজ তো তাদের জন্য না। এখন বাংলাদেশের ক্রিকেট উন্নতির জন্য কাজ করি, ক্রিকেটারদের জন্য কাজ করি। সেখানে আমার গ্রহণযোগ্যতা কেমন, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। যদি এমন হতো যে বোর্ড আমাকে পছন্দ করে না, ক্রিকেটাররা আমাকে পছন্দ করে না; তাহলে অন্য রকম হতো। আমার কলিগরা আমাকে সম্মান করেন। আমি সবসময় খেলোয়াড়দের একজন হয়ে থাকতে চেয়েছি। সেটা যে পেরেছি, এতেই খুশি। অন্য মানুষের কথায় আর কিছু ভাবি না। বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার হিসেবে কাজ করার সময় ফুলটাইম ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেছি। তখন ডিরেক্টর ছিলাম, কিন্তু সেটা আমার মধ্যে ছিলো না। আমি বোর্ড ডিরেক্টরের আবরণটা খুলে ফেলতাম ম্যানেজার হিসেবে কাজ করার সময়।

ম্যানেজার হিসেবে আপনার সাথে কোচ চান্দিকা হাতুরুসিংহের একটা ভালো জুটি হয়েছিলো। তখন আমরা বেশ কিছু রেজাল্ট পেয়েছি। এখন সেটা হচ্ছে না। আপনার আবার ম্যানেজার হওয়া উচিত বলে অনেকে মনে করেন। আপনি ফিরবেন?

প্রথমত আমি মনে করি না যে আমি বের হয়েছি বলে এমন (খারাপ রেজাল্ট) হচ্ছে। এটা তো একজনের জন্য হয়নি। আমি খেলোয়াড়দের সাথে সব বিষয় বিস্তারিত আলোচনা করতে পারতাম। চান্দিকা (হাতুরুসিংহে) এটা পছন্দ করতো। খেলোয়াড়দের কোনটা করা উচিত, কোনটা করা উচিত না; এ সব বিষয় নিয়ে কথা বলা, সাপোর্ট করার দায়িত্ব ছিলো আমার। কোচদেরও কিন্তু ভুল হয়। চান্দিকাকে আমি এই সব বিষয়ে হেল্প করতাম। চান্দিকা বলতো বাংলাদেশে আমি তোমার কাজটাই গণ্য করি। আমার অনেক সম্পৃক্ততা থাকতো আসলে। এখন ওই দায়িত্বে ফেরার বিষয়ে বলি। আমি আসলে খুব পেশাদার লোক। আমাকে কাজটা দিলে দীর্ঘ মেয়াদে দিতে হবে। এক সিরিজ করলাম, পরের সিরিজ করলাম না। এভাবে আমি পারবো না। ওতে আমার পেশাগত সমস্যা হয় এবং দলের ওপর কন্ট্রোল থাকে না। কন্ট্রোল বলতে খেলোয়াড়রা ভাবে, উনি তো পরের সিরিজে নাই; ওনাকে এসব বলে লাভ নেই।

আপনি বোর্ড পরিচালক হয়েও ম্যানেজার হিসেবে উচ্চ বেতন নিতেন বলে সমালোচনা আছে।

বোর্ডের অনেকের অনেক ব্যবসা আছে মাশাআল্লাহ। কিন্তু আমাকে চাকরি করেই খেতে হয়। এটা নিয়ে অনেক ট্রল করেছে যে আমি বিসিবি থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে নিচ্ছি। আমি যদি বিসিবির ম্যানেজার হিসেবে আসি, তখন কিন্তু কোম্পানি (কর্মস্থল) আমাকে বেতন দেয় না। আমার আয়ের উৎস হলো এই চাকরিটা। আমার সংসার আছে, বাড়ি ভাড়া আছে, খরচ আছে; আমাকে তো কিছু করে চলতে হবে। আমি এই চাকরিটা করে চলি। এখন সেটা বাদ দিয়ে ম্যানেজার হলে আমাকে টাকা নিতে হবে না? আসলে বাংলা ট্রাকের যে চাকরি করি সেটার বেতনটাই আমি বিসিবি থেকে নিতাম। তারপরও আমার লস হতো। বিসিবি আমাকে যে টাকা দিতো সেটার ট্যাক্স বিসিবি দেয় না, সেটা আমাকেই দিতে হতো। কিন্তু বাংলা ট্রাকের ট্যাক্স তারাই দিতো। আমি ভেঙেচুরে কাজ করার পক্ষে নই। আমাকে দায়িত্ব দিলো, কিছু একটা হলো, মিডিয়ার প্রেশার হলো এবং আমাকে বাদ দিয়ে দিলো; এ রকম হলে নিজেকে ছোট ছোট লাগে। এখন ডেভলপমেন্ট চেয়ারম্যান হিসেবে অনেক প্ল্যান আছে এবং ওখানে অনেক কিছু করতে পারবো। বিসিবি যদি আমাকে ম্যানেজারের দায়িত্ব দেয়, তাহলে আমাকে দীর্ঘ মেয়াদে না দিলে আমি আমার দায়িত্বটা ঠিকভাবে পালন করতে পারবো না। এর মানে হলো একটা সমন্বয় রক্ষা করা।

এইসব সমালোচনা, গালি কখনো মন খারাপ করে দেয় না? কাজের প্রতি আগ্রহ কমিয়ে দেয় না?

না। আমি বরং অল্পে খুশি থাকা মানুষ। এই যে খেলোয়াড়রা আমাকে রেসপেক্ট করে। আমাকে ভালোবাসে। এটা নিয়েই আমি খুশি থাকি। আর ভাবি, যে জন্য কাজ করছি, সেটা হলেই হলো। এই ধরেন বিসিবিতে আমি বোর্ড ডিরেক্টর হওয়ার পর থেকে সবথেকে বেশি গালি খাই। কতো মানুষ কতো অভিযোগ করে-কাজ করতে যাই না, অমুক তমুক। অনেকে অনেক ধরণের কথা বলে। এগুলাকে সব সময়ই এড়িয়ে চলেছি। মানে একটা সময়, প্রথম দিকে তো খুব খারাপ লাগতো, মন খারাপ হতো। পরে আমি ভাবলাম এটাই আমার শক্তি হওয়া উচিত আসলে। আমার তো কাজ করতে হবে। আর আমি তো ধরেন মানুষ দেখানোর জন্য কাজ করি না। আমার তো কাজ ভিতরে। ডেভেলপমেন্ট বিভাগের কাজ আসলে কেউ দেখেনা ।

প্রাপ্তিটা কী এসব করে?

পেপারে যখন কোন ছোট্ট খবরও আসে, খুব ভালো লাগে। আমরা ৬৪ জেলা নিয়ে কাজ করি। এতগুলা ছেলের সাথে কাজ করি।  জেলায় অনুর্ধ্ব-১৪, ১৫ খেলা হয়। যাই হোক আমার সত্যি কথা বলতে, বোর্ড প্রেসিডেন্ট প্লাস বাংলাদেশের ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট সেরা খেলায়াড়রা যখন স্বীকৃতি দেয়, তখন অনেক আনন্দ লাগে। এটাই বড় প্রাপ্তি। আর সাফল্য নিজেই সবচেয়ে বড় প্রেরণা। এই যে বিশ্বকাপটা ওরা জিতে এলো, কেউ আমার নাম না বললেও এটা তো আমার পাওয়া।

ডেভেলপমেন্টে আপনার বড় সাফল্য যুব দলের বিশ্বকাপ জয়। সে জন্য আপনি কী সবার কাছ থেকে স্বীকৃতি পেয়েছেন?

আমি আসলে এভাবে ভাবিইনি। একটা তো যে, বোর্ড প্রেসিডেন্ট নিজে বললেন, সুজনের এটার (বিশ্বকাপ জয়ের) পেছনে অবদান আছে। এটা তো অনেক বড় স্বীকৃতি। আজ মাশরাফি-সাকিব বলছে। এর চেয়ে বেশী স্বীকৃতি আর কী চাইবো? আমি এতেই খুশী। আমাদের ডেভেলপমেন্টের প্রতিটা মানুষ একটা দলটার জন্য কাজ করেছে। তাদেরও অনেক অবদান আছে এবং তারা বরং সেই ক্রেডিট পায়নি। তারা বাসে বাসে ঘুরে ঘুরে প্লেয়ার হান্টিং করেছে। এটা যে কতো বড় একটা কাজ— না করলে আসলে বিশ্বাস করা হয় না। ডেভলপমেন্টের ম্যানেজার ও অন্যরাও খুব পরিশ্রম করেছে। নাভিদ নেওয়াজ আসার পর আমরা অনেক কাজ করেছি। নাভিদ খুবই মিশুক প্রকৃতির লোক। সে আমার সাথে অনেক মিটিং করেছে। অনেক কথাবার্তা হয়েছে। আমি ওকে বলেছি তুমি যা চাও আমাকে পাবা, আমি দিবো। দুই বছরে সে যা চেয়েছে আমি তাই দিয়েছি। বিভিন্ন ট্যুর আমি করিয়েছি। অনেক অনেক টাকা খরচ হয়েছে, কিন্তু পাপন ভাই সমর্থন দিয়েছি। আমরা প্রায় ৩৫টির মতো ম্যাচ খেলিয়েছি। অনেক ট্যুরও করেছি। আমার সবচেয়ে বড় ক্রেডিট হলো দলকে আমরা চ্যাম্পিয়ন করিয়েছি। এখন সবাই বাংলাদেশকে বলা হয় আন্ডার নাইনটিন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন।

ডেভেলপমেন্টে কাজ করাটা আপনার জন্য সহজ হয়েছে। কারণ, আপনি তো আগে থেকেই বাচ্চাদের কোচিং নিয়ে কাজ করেন।

আমি সাত বছর ধরে ডেভলপমেন্টে আছি। এখন চেয়ারম্যান। আগে চাকরিও করেছি। বোর্ডে চাকরি করলে বোর্ডের বিপরীতে কিছু বলা যায় না। তখন আমার চাকরি করার দরকারও ছিলো। চেয়ারম্যান হওয়ার পর আমি অনেক কিছু বদলানো শুরু করি। অনেকেই কাজ করতো। যাকে প্রয়োজন মনে হয়নি, তাকে আমরা রাখতে পারিনি। আমি যাদের উপর ট্রাস্ট করতে পারি, ভরসা করতে পারি তাঁদেরকে রেখেছি। এখানে সবাই ভালো কাজ করে। আমি সেভাবেই পরিবেশ তৈরি করেছি।

এই দলটা বিশ্বকাপ জিতে আসার পর অনেক পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছিলো। সেগুলোর কী অবস্থা? খেলোয়াড়দের অবস্থা কি সন্তোষজনক অবস্থায় আছে?

আসলে অনেক পরিকল্পনা ছিলো। ইংল্যান্ডে পাঠানোর পরিকল্পনা প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছিলাম। দুই মাস তাদের সেখানে থাকার কথা ছিলো। কিন্তু মহামারির কারণে তা সম্ভব হয়নি। ইংল্যান্ড সেভাবে সাড়া দেয়নি। এ বছরও পারা যাচ্ছে না। বোর্ড থেকে খেলোয়াড়দের প্রতি মাসে এক লাখ টাকা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিলো, সেটা দেওয়া হচ্ছে। অনূর্ধ্ব-২১ নামে একটা টিম বানিয়ে এইচপিতে তাদের ডাকা হয়েছে। আগের প্ল্যানগুলো আর বাস্তবায়ন করা হয়নি। আমার বিশ্বাস এই ছেলেরা খুবই সাহসী ও হার্ডওয়ার্কিং। আশা করি ওরা ভালো করবে।

বর্তমান অনূর্ধ্ব-১৯ দলটার কী অবস্থা?

গুছিয়ে এনেছি। খুব কঠিন ছিলো। আফগানিস্তানের সাথে সিরিজ ছিলো। মহামারির কারণে হলো না। কিন্তু এখন পাকিস্তান আসবে। এরপর ইংল্যান্ড যাবে দল। সেখানে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার সাথে সিরিজ হবে। এই দলটা একেবারে আনকোরা। এই দলের কিছু ভালো পেসার আছে। এদের নিয়ে আমি খুব আশাবাদী। ব্যাটিংটা একটু চিন্তার জায়গা। এদেরকে ম্যাচ খেলাতে হবে। ম্যাচ খেললে হয়তো ব্যাটিংটা ভালো হবে।

একটু সাম্প্রতিক বিষয়ে আসি। সাকিব আর মাশরাফি কাছাকাছি সময়ে আপনার কথা বললো। এমনিতে তো আপনার সমালোচনাই বেশি হয়। ওদের মুখে নিজের সম্পর্কে শোনার অনুভূতিটা কেমন?

অবশ্যই, মাশরাফি ও সাকিব যখন প্রশংসা করে, সেটা অনেক বড় ব্যাপার। বাংলাদেশের এমন কোনো মানুষ নাই যারা তাদের নাম জানে না। বিশ্বও তাদেরকে খুব ভালো করে চেনে। তাদের কাছ থেকে প্রশংসা পাওয়া অনেক বড় ব্যাপার। ওরা ডেভলপমেন্ট বিভাগের সাথে সম্পৃক্ত থাকে না, তারপরও ওরা ফলো করে। এটা অনেক বড় ব্যাপার। এ ছাড়া পাপন ভাইও আমাকে অনেক সম্মান দিয়েছেন বিশ্বকাপ জেতার পর। কে কী বললো খুব ভালোভাবে তা ফলো করি না। অনেকে ট্রল করে, অনেকে ভুল বোঝে, আমাকে নিচু দেখানোর জন্য এটা করে; কিন্তু দিন শেষে আমি আমার কাজ নিয়ে খুশি।

মাশরাফি তার সাক্ষাতকারের এক জায়গায় বলেছে, “সুজন ভাইকে কারা কালারিং করছে মানুষের সামনে? তার নেগেটিভ তথ্যগুলো মিডিয়ার কাছে কারা দিচ্ছেন? এটা নিয়েও আমার প্রশ্ন আছে।” মানে, সে ইঙ্গিত করছে যে, আপনার কলিগদের কে বা কারা আপনাকে সাধারণ মানুষের সামনে ভিলেন বানিয়েছে। আপনিও তাই মনে করেন?

এইটা আমি বলতে পারি না। আমি কাউকে ব্লেইম করবো না। আমি জানি না; আমি কাউকে ব্লেইম করি না। মানে সত্যি কথা কি দাদা জীবন তো একটাই। আমাদের তো মৃত্যু আছে, মরে যাবো। তারপর তো আমাদের একটা অন্যজীবন। আমার তো ধরেন, কয় বছর পরই হয়তো মরে যাবো। আমার ধর্ম যেটা আমি মেনে চলার চেষ্টা করি, আমি মানুষে পিছে লাগার চেষ্টা করি না। আমি মানুষকে অপমান করার চেষ্টা করি না। যদি আমার বিরুদ্ধে কেউ এরকম করে, সেটা নিজস্ব ব্যক্তিগত ব্যাপার। যদি কেউ এরকম চায়, আমি আর কী বলতে পারি? আমি কারো পেছনে লাগি না। আমার কোন ইগো প্রব্লেম নাই।  আমি সবার সাথেই মিশতে পারি।

কারো সাথে আপনার কোনো ঝামেলা নেই বলতে চাচ্ছেন?

না, নেই। সেটা একটা বয় হোক, বেয়ারা হোক, যে হোক। আমার ইগো প্রব্লেম কোন সময়ই ছিলো না। থাকবেও না।  আর আমি কাউরেই খারাপ বলি না। আর আমাকে বিসিবিতে যেটুকে জায়গা দেওয়া হইছে, আমি শুধু নিজের মত করে সেই কাজটা করতে চাই।  আমি চেষ্টা করি আমার বেস্ট এফোর্টটা দিতে। আমি যতটুকু পারি, আমি বোর্ডে অনেক সময় দেই; অনেক সময়। যেটা হয়ত আমার কাজের ফাঁকে ফাঁকে দেই। যখন আমি তিন দিন রাজশাহীতে থাকি সপ্তাহের; বাকি চারদিনের মধ্য অ্যাটলিস্ট দুইদিন আমি চেষ্টা করি বোর্ডে যেতে। দুইদিন যাওয়ার চেষ্টা করি। ডেভেলপমেন্টের ছেলেদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করি। কাজ না থাকলেও আমি বোর্ডে যাই। আড্ডা টাড্ডা মারি। যার ফলে যেটা হয় যে আমার সাথে কোন দূরত্ব থাকে না। খেলোয়াড়রা আমার সাথে যে কোন কথা বলতে পারে। নিজের প্রব্লেমের কথা অরা আমাকে বলতে পারে।

সাকিব ও মাশরাফির বেশ কিছু অভিযোগ আছে বিসিবি নিয়ে। এ ব্যাপারে বোর্ডের কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে মনে করেন?

আমি যেটা মনে করি, তারা যা বলেছে, নিশ্চয়ই ক্রিকেটের ভালোর জন্যই বলেছে। আমি মনে করি বোর্ডে যারা আছে সবাই চেষ্টা করেন। অনেক সময় তারা পারেন না। তারপরও চেষ্টা করেন। কমবেশি হয় অনেক সময়। আকরাম ভাইও কাজ করেন। অনেক সময় চোখে পড়ে না। মাশরাফি ও সাকিব তো আমাদেরই লোক। মাশরাফি হয়তো এখন এমপি, কিন্তু লোকে তো তাকে এখনও ক্যাপ্টেন হিসেবেই চেনে। সাকিব তো এখনও খেলছে। ফলে ওরা তো ক্রিকেটের বাইরের কেউ না। ওরা ক্রিকেটের উন্নতির জন্যই কথা বলবে। আর পাপন ভাই এমন একটা লোক যার কাছে কিছু চেয়ে কেউ ‘না’ শোনেনি। পাপন ভাই ক্রিকেটে কোনো সমস্যা থাকতে দেবেন বলে মনে হয় না। আমার মনে হয় পাপন ভাই এগুলো সহজেই সমাধান করবেন। সামনে অনেক ট্যুর আছে, আমাদের মূল উদ্দেশ্য থাকা উচিত এই ট্যুরগুলোতে ভালো খেলা।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...