তামিমের ৩৮ বলে ৩৫, যৌক্তিক?
ফাইনালের আগের দুই ম্যাচে দল থেকে তাকে কি নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল নিশ্চিত নই, তবে খেলা দেখে অনুমান করতে পারি, লাহোর কালান্দার্স তাকে বলেছিল দ্রুত রান তুলতেই এবং ফাইনালেও সেই ভাবনার বদল হয়েছিল বলে মনে হয় না। কেননা ফাইনালে ইমাদ ওয়াসিমের করা প্রথম ওভারেই অন্তত তিনবার তামিম পুরোদস্তুর আক্রমণাত্মক হতে চেয়েছিলেন। যার কেবলমাত্র একটিই চারে রূপান্তর করা গিয়েছিল এবং যে দুটি শট নিষ্ফলা হয়েছিল, তাতেই আজকের তামিমের ভাগ্য লেখা হয়েছিল।
লাহোর কালান্দার্স আগের দুই ম্যাচেই তুলেছিল ১৭০-য়ের বেশি। এ ম্যাচে কোনো ভাবনা-চিন্তা না করেই যে ব্যাটিং নিয়ে নিলেন তারা, তার কারণও ব্যাট হাতে দলটির এই ‘বৃহস্পতি তুঙ্গে’ অবস্থাই। আগের দুই ম্যাচেই তামিম দুর্দান্ত শুরু পেয়েছিলেন, ব্যাটে বলও আসছিল ভালো।
ফাইনালের আগের দুই ম্যাচে দল থেকে তাকে কি নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল নিশ্চিত নই, তবে খেলা দেখে অনুমান করতে পারি, লাহোর কালান্দার্স তাকে বলেছিল দ্রুত রান তুলতেই এবং ফাইনালেও সেই ভাবনার বদল হয়েছিল বলে মনে হয় না। কেননা ফাইনালে ইমাদ ওয়াসিমের করা প্রথম ওভারেই অন্তত তিনবার তামিম পুরোদস্তুর আক্রমণাত্মক হতে চেয়েছিলেন। যার কেবলমাত্র একটিই চারে রূপান্তর করা গিয়েছিল এবং যে দুটি শট নিষ্ফলা হয়েছিল, তাতেই আজকের তামিমের ভাগ্য লেখা হয়েছিল।
তামিম ভাগ্যবিড়ম্বিত যদি না-ই হবেন, তবে এরপরের ওভারে বোলিংয়ে এসে প্রথম বলটাই মোহাম্মদ আমির কেন স্ট্যাম্পের হাত দেড়েক বাইরে করবেন এবং ফখর জামান তাকে প্রাপ্য বুঝিয়ে দেবেন। এবং স্ট্রাইক বদলে তামিম ইকবাল যখন ব্যাটিংপ্রান্তে আসবেন, ঠিক শুরুর বল থেকেই আমির একদম মাপা লাইন-লেংথ খুঁজে পাবেন আর পিচটাও তার খেল দেখাতে শুরু করবে!
আমিরের সে বলটা যে আচমকা নিচু হয়েছিল, তা অবাক করা নয়, বরং আজকের জন্যে এটিই স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিল। কোনো বল হঠাৎ করে উঁচু হয়েছে, কোনো বল নিচু। আর যে বলগুলো ‘করেনি তো ফোঁসফাঁস’, আজকের দিনে সেসব বলও মাঝব্যাটে লাগেনি তামিমের (একরত্তি বাড়িয়ে বলছি না, ইউটিউবে পূর্ণ হাইলাইটস রয়েছে, মিলিয়েই সত্যতা যাচাই করে নেবেন)। তামিম ইকবাল শট খেলতে চেয়েছিলেন ম্যানেজমেন্টের নির্দেশনা মতো, কিন্তু আজকের দিনে কিছুই ঠিকঠাক হয়নি। এবং পাওয়ারপ্লে শেষ ওভারে গিয়ে তামিম ইকবালের রানটাও ২২ বলে ১০-য়ের বেশি হয়নি।
এমনি করে পাওয়ারপ্লে কাটানোর পরে তামিমের পরের বলগুলোতে কি করা উচিৎ ছিল? চার-ছয় মেরে রান-বলের ব্যবধান কমাবেন? নাকি ১-২ নিয়ে আগাবেন? তামিম চার-ছয় মারার চেষ্টা করেছেন ওই পর্যায়ে। কিছু লেগেছে, তাতে রানটা ৩৫-য়ে গিয়েছে। বেশিরভাগটাই লাগেনি, তাই আউট হবার মুহূর্তে রানটা ৩৮ বলে ৩৫-য়ে আটকে গিয়েছে।
কিন্তু, ৩৮-বলে ৩৫ বললে ব্যাটসম্যানের প্রতি যেরকম বিতৃষ্ণা হয়, স্ট্রাইক রেট ১০০-য়ের কমে বলে একটা গা জ্বালা করা ভাব ওঠে, তামিমের ব্যাটিং আজ মোটেও ওরকম কচিহু ছিল না। বরং, কিছুটা নিজের দোষে, খানিকটা বোলারের গুণে আর অধিকাংশটাই উইকেটের আচরণে তামিমের রানটা এর বেশি হয়নি।
কিন্তু উইকেটে কিছুক্ষণ কাটাবার পরে, চার-ছক্কা মারতে গিয়ে বল ব্যাটেই লাগছে না দেখে তামিমের কি এক-দুইতেই সান্ত্বনা খুঁজে নেয়া উচিৎ ছিল না? আমার মতে, সে মুহূর্তে তা-ই সবচেয়ে সেরা সিদ্ধান্ত হতো। আগের দুই ম্যাচের মতো ১৭০ পেরোনো স্কোর হবে না এখানে, উইকেটে কিছুক্ষণ কাটিয়েই তো বোঝার কথা ক্রিকেটারদের৷
কিন্তু কি আশ্চর্য দেখুন, লাহোরের ব্যাটসম্যানদের কেউ-ই বুঝলেন না আমাদের মতো করে৷ তামিম আউট হলেন ১১ নম্বর ওভারের প্রথম বলে, স্লগ করতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে৷ এবং তামিম আউট হবার ছ’বলের মধ্যে ফখর জামান আর মোহাম্মদ হাফিজও ফিরেছিলেন সাজঘরে। দু’জনেই বলকে করাচি থেকে লাহোর পাঠাতে চেয়ে।
উইকেটের চরিত্র বুঝে নিজের ব্যাটিংয়ের চরিত্র বদলাননি, এজন্যে তামিমকে দোষারোপ করতে ইচ্ছে হচ্ছিল। কিন্তু লাহোর কালান্দার্সের সব ব্যাটসম্যানই যখন উইকেটের মন্থরতা আর অসমান বাউন্সের তোয়াক্কা না করে বলকে এলোপাথাড়ি পেটাতে গেলেন, তখন প্রশ্নটা জাগলো, তবে কি এমন ‘পরিস্থিতি যা-ই হোক, আক্রমণ করে যেতে হবে’ ব্যাটিংয়ের নির্দেশনা কালান্দার্সের টিম ম্যানেজমেন্ট থেকেই এসেছিল?