মেঘে ঢাকা সূর্য

১৯৯৯ সালের পর সাড়ে চার বছরেরও বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়েছিল একটি জয়ের জন্য। কয়েকবার কাছাকাছি গিয়েও ফিরে আসতে হচ্ছিল। খুব বেশি অভাব ছিল একজন ম্যাচ উইনারের। কিন্তু, বাংলাদেশের যে চট্টগ্রাম আছে! চট্টলা! বীর চট্টলা! ইতিহাস সাক্ষী যখনই বাংলাদেশ সংকটে পড়েছে সে রাজনৈতিক পরাধীনতা হোক বা ক্রিকেট তখনই ঈশ্বর বীর চট্টলার মাটি দিয়ে তৈরি করেছেন বিপ্লবী! এবারও তিনি তাই করলেন। চট্টগ্রামের থেকে মাটি তুলে তাতে প্রাণ দিয়ে বললেন, যাও আফতাব আহমেদ! বাংলাদেশকে ম্যাচ জেতাও! আফতাব আহমেদ ম্যাচ জিতিয়েছিলেন!

আফতাব শব্দের অর্থ হচ্ছে সূর্য। শীতের দেশে যেখানে রাত দীর্ঘ সেখানে দিনের পর দিন চলে সূর্যের প্রতীক্ষা। সূর্যে যখন চমকায়, তখন গ্রীষ্ম আসে। ওই সময় মানুষ ফসল ফলায়,আনন্দ করে। শীতদেশের বাসিন্দারা সারা বছরের হাসি-আনন্দ সেই হীরের টুকরোর মতন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সময়গুলিতেই পেয়ে থাকে! তাঁদের জীবনে সূর্য বাঁধভাঙা উল্লাসের নাম।

বাংলাদেশের ক্রিকেটে এক শীত চলছিল। দীর্ঘ অন্ধকারাচ্ছন্ন তীব্র শীত! জয় নেই বললেই চলে। এ সময় সূর্যের প্রতীক্ষা করতে করতে আমরা হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। তখনই তিনি এলেন। তিনি বলতে আফতাব! আফতাব আহমেদ। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সূর্য।

১৯৯৯ সালের পর সাড়ে চার বছরেরও বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়েছিল একটি জয়ের জন্য। কয়েকবার কাছাকাছি গিয়েও ফিরে আসতে হচ্ছিল। খুব বেশি অভাব ছিল একজন ম্যাচ উইনারের। কিন্তু, বাংলাদেশের যে চট্টগ্রাম আছে! চট্টলা! বীর চট্টলা! ইতিহাস সাক্ষী যখনই বাংলাদেশ সংকটে পড়েছে সে রাজনৈতিক পরাধীনতা হোক বা ক্রিকেট তখনই ঈশ্বর বীর চট্টলার মাটি দিয়ে তৈরি করেছেন বিপ্লবী! এবারও তিনি তাই করলেন। চট্টগ্রামের থেকে মাটি তুলে তাতে প্রাণ দিয়ে বললেন, যাও আফতাব আহমেদ! বাংলাদেশকে ম্যাচ জেতাও!

আফতাব আহমেদ ম্যাচ জিতিয়েছিলেন! তাঁর প্রথম ফিফটি এল ২০০৪ সালে ভারতের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে জয়ের ম্যাচে ৬৭ রান।

২০০৫ সালে বাংলাদেশ প্রথম ওয়ানডে সিরিজ জিতল। প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে। ২-০ তে পিছিয়ে থেকে শেষ তিন ম্যাচে জিতে সিরিজ ঘরে তুললো টাইগার। শেষ ম্যাচ, ২-২ এ সিরিজ, কার্যত ফাইনাল ম্যাচ। সেই ম্যাচে আফতাব খেললেন ৮১ রানের ইনিংস।

বাংলাদেশ শ্রীলংকার বিরুদ্ধে প্রথম জয় পেল ২০০৬ সালে। বগুড়ায় সেদিন জয় থেকে ৬০ রান দূরে, আফতাব আহমেদ অলক কাপালিকে নিয়ে গড়লেন এক দুর্দান্ত পার্টনারশিপ। ও হ্যাঁ, সেদিন পয়েন্টে যে ডাইভিং ক্যাচটি নিয়েছিলেন তা কি ভোলা যায়?

এরকম একটি ঐতিহাসিক ক্যামিও খেললেন ২০০৫ সালে কার্ডিফে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে৷ ১৩ বলে ২১। ৬ বলে ৭ যখন দরকার, তখন ডাউন দ্যাউইকেটে এসে জেসন গিলেস্পিকে মারা ছক্কাটা – উফফ! আজও চোখে লেগ আছে। বাংলাদেশের তখন যে তীরে এসে তরী ডোবানোর ইতিহাস আর অস্ট্রেলিয়ার যেই প্রতাপ এই ৬ বলে ৭ আসলে ১ বলে ৬ এর মতনই ব্যাপার!

২০০৭ এ বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম জয়।  ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথেও যেকোন ক্রিকেটে প্রথম জয়। এখানে আফতাবের ৪৯ বলে ৬২। যদিও আশরাফুলের উন্মাতাল ব্যাটিংয়ের স্মৃতির সামনে অনেক ক্ষেত্রেই আফতাবের স্মৃতি ক্ষীণ হয়ে যায়।

কিন্তু,আফতাব ছিলেন। ওই সময় হুট করে পাওয়া জয়গুলোতে প্রায়ই তিনি ফিনিশার হিসেবে ম্যাচ শেষ করে আসতেন। আমার ব্যক্তিগত ধারণা, যদি আফতাবের মতন একজন ফিনিশার না থাকত তাহলে বোধহয় এরকম কিছু জয় শেষ মূহুর্তে এসে হাতছাড়া হলেও হতে পারতো!

এত কথায় যেটা বলতে ভুলে গিয়েছি তা হল ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম পাঁচ উইকেট কিন্তু আফতাবের হাত ধরেই। ২০০৪ সালে ঢাকায় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৫/৩১!

২০০৮ সালে নিষিদ্ধ ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লিগ (আইসিএল) ঝড়ে বাংলাদেশ অনেক কিছুর সাথে আফতাব আহমেদকেও হারালো। ২০১০ এর দিকে দলে ফিরেছিলেন কিন্তু এই আফতাব আর সেই আফতাব নেই। আফতাব আহমেদ ক্রিকেট থেকেই হারিয়ে গেলেন!

কিন্তু,আফতাবকে কি করে ভোলা যায়!? সেই ভয়ংকর সুন্দর আগ্রাসী ব্যাটিং,পয়েন্টে চিতার মতন ফিল্ডিং,আর নিরীহ দর্শন কিন্তু ক্ষেত্র বিশেষে বিষাক্ত সব ডেলিভারি। আর আমাদের দীর্ঘ শীতের মিষ্টি রোদ্দুর! আমাদের সূর্য!  আমাদের আফতাব। বীর চট্টলার মাটির আরেক উপহার।

পৃথিবীতে মানুষ আসে নির্দিষ্ট কাজের উদ্দেশ্যে! উদ্দেশ্য পূরণ হয়ে গেলে হারিয়ে যান। আফতাব এসেছিলেন হয়তো বাংলাদেশকে জয়ের রাস্তায় হাঁটতে শেখানোর জন্যই। শেখানো-পড়ানো শেষে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে গেছেন।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...