এলিস আচং ও চায়নাম্যান ধাঁধা

খেলা হচ্ছিল ইংল্যান্ডের ওল্ড ট্রাফোর্ডে, সালটা ১৯৩৩। ব্যাট করছিলেন ইংলিশ ব্যাটসম্যান ওয়াল্টার রবিন্স, বোলিং প্রান্তে ছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান বাঁ-হাতি স্পিনার ‘এলিস এডগার আচং’বল করলেন, ব্যাটসম্যান এগিয়ে এসে মোকাবেলা করলেন, কিন্তু অফ ষ্ট্যাম্পের অনেক বাইরে পিচ করা বল কিনা লেগ ষ্ট্যাম্পের বাইরে দিয়ে চলে গেল! ব্যাটসম্যান ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া অবস্থায় স্ট্যাম্পড হয়ে গেলেন!

অস্ট্রেলিয়ার ব্র্যাড হগ, দক্ষিণ আফ্রিকার পল অ্যাডামস, তাবরাইজ শামসি এবং হালে শ্রীলঙ্কার লক্ষ্মণ সান্দাকান এবং ভারতের কুলদীপ যাদব। কোন মিল খুঁজে পাচ্ছেন কি এদের মধ্যে?

এরা প্রত্যেকেই বাঁ-হাতে স্পিন করে থাকেন এটা একটা মিল বটে, তবে আরও একটা মিল আছে, সেটা হল এদেরকে চায়নাম্যান বোলার নামে ডাকা হয়। কিন্তু চায়নাম্যান নামেই কেন? না এদের কেউ চায়নাতে জন্মেছেন, না এদের পিতা মাতা কেউ চাইনিজ! তাহলে, এদেরকে কেন চায়নাম্যান নামে ডাকা হয়? সে কথার উত্তর জানার আগে, আসুন জেনে নেই চায়নাম্যান বোলারের বৈশিষ্ট্য।

চায়নাম্যান বোলার তাদেরকেই বলা হয় যারা বাঁ-হাতে লেগ স্পিন বা রিষ্ট স্পিন করে থাকে। উল্লেখ্য, স্পিন বল সাধারণত দুই প্রকার। অফস্পিন এবং লেগ বা রিষ্টস্পিন। এখন কোন বাঁ-হাতি বোলার যখন লেগস্পিন করে তখন সেটা ডানহাতি ব্যাটসম্যানের জন্য ভেতরের দিকে আসে এবং বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানের জন্য বাইরের দিকে চলে যায়।

ক্রিকেটে বাঁ-হাতি রিষ্ট স্পিনার বেশ বিরল। চার্লি লিউয়েলিন কে বাঁ-হাতি রিষ্ট স্পিনের জনক বলা হয়। যাই হোক, লেগ স্পিন তো ডানহাতি বোলারও করে, তারাও গুগলি, ফ্লিপার ইউজ করে, তাহলে শুধু বাঁ-হাতি লেগ স্পিনারদেরকে চায়নাম্যান বলা হয় কেন! এটার উত্তর জানতে হলে ইতিহাসের আশ্রয় নিতে হবে। চলুন ঘুরে আসি ১৯৩৩ সালের ইংল্যান্ড বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট সিরিজ থেকে।

খেলা হচ্ছিল ইংল্যান্ডের ওল্ড ট্রাফোর্ডে, সালটা ১৯৩৩। ব্যাট করছিলেন ইংলিশ ব্যাটসম্যান ওয়াল্টার রবিন্স, বোলিং প্রান্তে ছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান বাঁ-হাতি স্পিনার ‘এলিস এডগার আচং’বল করলেন, ব্যাটসম্যান এগিয়ে এসে মোকাবেলা করলেন, কিন্তু অফ ষ্ট্যাম্পের অনেক বাইরে পিচ করা বল কিনা লেগ ষ্ট্যাম্পের বাইরে দিয়ে চলে গেল! ব্যাটসম্যান ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া অবস্থায় স্ট্যাম্পড হয়ে গেলেন!

বিস্মিত রবিন্স সাজঘরে ফেরার সময় বলতে থাকেন সেই বিখ্যাত উক্তি ‘ফ্যান্সি বিং ডান বাই অ্যা ব্লাডি চায়নাম্যান।’ উল্লেখ্য বোলার এলিস আচং ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেললেও তিনি ছিলেন চাইনিজ বংশোদ্ভূত! রবিন্সের বলে যাওয়া সেই চায়নাম্যান শব্দটি তখন থেকেই প্রচলিত হয়ে গেল বাঁ-হাতি লেগ স্পিনারদের জন্য।

যার জন্য এই চায়নাম্যান শব্দের প্রচলন শুরু। সেই এলিস আচং পোর্ট অফ স্পেনে জন্মগ্রহন করেন ১৯০৪ সালে। মজার ব্যাপার হল তিনি একজন ফুটবলার ছিলেন, ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোব্যাকোর হয়ে প্রায় ১৩ বছর ফুটবলও খেলেছেন। তবে তিনি বিশ্বে পরিচিতি পান ক্রিকেটার হিসেবে। মূলত বাঁ-হাতি অফস্পিনার ছিলেন, তবে ভ্যারিয়েশন হিসেবে বাঁ-হাতি লেগস্পিনও করতেন, আর এই কারণেই স্ট্যাম্পড হয়ে অবাক হয়েছিলেন ওয়াল্টার রবিন্স, কারণ তিনি ভেবেছিলেন এটা বাঁ-হাতি অফস্পিন বল!

ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে টেস্ট খেলেছেন ছয়টি, উইকেট নিয়েছেন মাত্র আটটি! কিন্তু ইতিহাসে তিনি অমর হয়ে আছেন অন্য কারণে, তিনিই যে একমাত্র চাইনিজ বংশোদ্ভূত টেস্ট ক্রিকেটার।

শেষ করবার আগে আরও একটি মজার তথ্য দিয়ে যাই! আপনারা অনেকেই স্যার গারফিল্ড সোবার্সের নাম জানেন বা শুনেছেন। সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার হিসেবে অনেকেই ওনার নাম বলে থাকেন। মূলত তিনি ছিলেন একজন বাঁ-হাতি অফস্পিনার, তবে বাঁ-হাতি মিডিয়াম পেস বলও করতেন!

৯৩টি টেস্ট ম্যাচ খেলে উইকেট নিয়েছেন ২৩৫টি এবং রান করেছেন ৮০৩২! অবাক হবার মতোই ব্যাপার কিন্তু! এবার মজার তথ্যটা দেই, উনি অফস্পিন, পেস দুটোই করতেন এটা মোটামুটি সবাই জানে, কিন্তু উনি যে চায়নাম্যান লেগস্পিন বলও করতেন এটা অনেকেরই অজানা। ভারত সফরে, স্পিন উইকেটে তিনি চায়নাম্যান বল করে বেশ সফলও হয়েছিলেন।

একটা মানুষের কত গুন ভাবা যায়!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...