বেকায়দায় বায়োবাবল
করোনার নতুন স্ট্রেইনের প্রাদুর্ভাব, বায়োবাবলের মধ্যে কয়েকজন ক্রিকেটারের করোনায় আক্রান্ত হওয়া এবং সারা দেশজুড়ে আইপিএলের ভেন্যু। দেশের বিভিন্ন জায়গায় আইপিএলের ভেন্যুগুলো হবার কারণে এর জন্য প্রয়োজন আছে বিমান ভ্রমণের। এই কারণে আরো বেশি চিন্তার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে আইপিএলের এই বারের বায়োবাবল নিয়ে।
ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) শুরু হতে যাচ্ছে আজকে রাত ৮ টায়। আইপিএলের আগ মুহুর্ত্বে আইপিএলের বায়োবাবল নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন আইপিএল সংশ্লিষ্ট দলগুলো।
করোনার নতুন স্ট্রেইনের প্রাদুর্ভাব, বায়োবাবলের মধ্যে কয়েকজন ক্রিকেটারের করোনায় আক্রান্ত হওয়া এবং সারা দেশজুড়ে আইপিএলের ভেন্যু। দেশের বিভিন্ন জায়গায় আইপিএলের ভেন্যুগুলো হবার কারণে এর জন্য প্রয়োজন আছে বিমান ভ্রমণের। এই কারণে আরো বেশি চিন্তার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে আইপিএলের এই বারের বায়োবাবল নিয়ে।
আইপিএলের গত আসরের থেকে এই আসরের সমস্যা অনেক বেশি গুরুতর। গতবার যখন আইপিএল অনুষ্ঠিত হয় তখন করোনার প্রথম টেউ অনেকটাই কমে এসেছিলো এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত করোনার হটস্পট ছিলো না। কিন্তু এই বারের আইপিএলের সময় পুরো ভারত জুড়ে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। এছাড়া সর্বশেষ দুইদিন পুরো ভারত জুড়ে দিনে এক লক্ষ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়াও পরবর্তীতে মে মাসে এর পরিমাণ আরো বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গত বারের তুলনায় এই বারের আইপিএলের বায়োবাবল ব্যবস্থা কেন ভঙ্গুর সেটা নিয়েই আজকের এই আয়োজন।
- আয়োজক শহর
২০২০ আইপিএলের ভেন্যু ছিলো দুবাই, আবুধাবী এবং শারজাহ এই তিনটি। আইপিএলের ১৩তম আসর শুরু দিনে সংযুক্ত আরব আমিরাতে করোনার সংক্রমণের পরিমাণ ছিলো ৩৭৪। আইপিএলের শুরুর এক সপ্তাহ পর এই সংখ্যা প্রতিদিন ১০০০ এর উপরে ছিলো। আইপিএলের ফাইনালের দিন করোনা আক্রান্ত হবার পরিমাণ ছিলো ১০৯৬ জন।
বিপরীতে এই বারের আইপিএল অনুষ্ঠিত হবে মোট ছয়টি শহরে। এইবারের আইপিএলের ভেন্যুগুলো হলো মুম্বাই, চেন্নাই, আহমেদাবাদ, দিল্লি, কলকাতা এবং ব্যাঙ্গালুরু। এই শহরগুলো শুধু আইপিএলের আয়োজকই নয়, করোনার হটস্পটও বটে।
এপ্রিলের ৬ তারিখে মুম্বাই, দিল্লি এবং ব্যাঙ্গালুরু এই তিন শহরে করোনার আক্রান্তের হার অনেক বেশি ছিলো। কিছুদিনের মধ্যে হয়তো করোনা সংক্রমণ রোধ করার জন্য এই তিন শহরে রাত্রীকালীন কারফিউ জারী হতে পারে। কারফিউ জারী হলে আইপিএল কারফিউয়ের বাইরে থাকবে।
- যাতায়াত
এইবারের আইপিএলে ফ্রাঞ্চাইজিগুলোর জন্য বড় উদ্বেগের জায়গা হলো এই যাতায়াত। গতবারের আইপিএলে দলগুলো সব অবস্থান করেছিলো দুবাই এবং আবুধাবীতে। এখান থেকে নিজস্ব গাড়িতে করে এক ভেন্যু থেকে অন্য ভেন্যুতে গিয়েছিলো। এর ফলে বায়োবাবলের বাইরের কারো সংস্পর্শে আসেনি কোন দল।
এই বছরে আইপিএল ছয়টি ভিন্ন শহরে হবার কারণে এইবারের আইপিএলে দলগুলোকে বিমান ব্যবহার করতে হবে। যদিও দলগুলো চার্টার্ড বিমান ব্যবহার করবে এবং বিমানবন্দরে ঢোকা এবং বের হবার জন্য আলাদা পথ ব্যবহার করবে। এরপরও এখানে চিন্তার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে নিরাপত্তা ইস্যু। কারণ বিমানবন্দরে প্রবেশ এবং ঢোকার সময়ে নিরাপত্তার স্বার্থে নিরাপত্তা চেক করা হয়। এর ফলে ক্রিকেটাররা বায়োবাবলের বাইরের লোকদের সংস্পর্শে আসতে পারে।
মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স টিম ম্যানেজমেন্টের সদস্য ভারতের সাবেক উইকেট রক্ষক কিরণ মোরে আরো উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, কোনো ক্রিকেটার বায়োবাবলে থাকার পরও বিমানবন্দরে করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স দল তাঁদের শিরোপা ধরে রাখার মিশনে মার্চ থেকেই বায়ো বাবলে মধ্যে চেন্নাইয়ে অবস্থান করছে। তাঁরা বায়োবাবল তৈরি করেছিলো ফেব্রুয়ারীতে। এই বায়োবাবলে থাকাকালীন সময়ে মুম্বাই দলের সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলো।
- কোভিড-১৯ শিক্ষা এবং ব্যবস্থাপনা
২০২০ আইপিএলের প্রায় দুই সপ্তাহ আগে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কোভিড- ১৯ বিষয়ক একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। গত বারের আইপিএলে এই বিষয়টা সবার কাছে নতুন একটি বিষয় ছিলো। এই সভা পরিচালনা করেছিলেন বোর্ড অফ ক্রিকেট কন্ট্রোল ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই) এর মেডিকেল এক্সপার্টরা। এছাড়াও এতে উপস্থিত ছিলেন বিসিসিআইয়ের প্রধান চিকিৎসক ডা অভিজিৎ সালভি এবং ভারতীয় দলের ফিজিও নিতিন প্যাটেল।
এই ভার্চুয়াল মিটিংয়ে সবাই শুধু বায়োবাবলে কি করা যাবে এবং যাবেনা সেটা জানেননি; তাঁরা করোনা ভাইরাস কী এবং বায়োবাবলের গুরুত্ব বুঝতে পেরেছেন।
এইবারের আইপিএলের আগে এই এরকম সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। এর ফলে ফ্রাঞ্চাইজিগুলো কোচ এবং ক্রিকেটাররা বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন এবং বায়োবাবলের বাইরের আক্রমণ নিয়ে চিন্তিত।
গত বারের আইপিএলের বাইরে দুইটি নিয়ম এই বারের আইপিএলে থাকছে না। যা ক্রিকেটারদের স্বাস্থ্য নয়, তাঁদের গতিবিধিও নিয়ন্ত্রণ করতো। প্রত্যেক হোটেল থার্মোমিটার এবং অক্সিমিটার রাখা ছিলো। প্রতিদিন সবার শরীরের তাপমাত্রা এবং অক্সিজেন লেভেল মেপে জানাতে হত। কেউ জানাতে ব্যর্থ হলে তাঁদের জন্য জরিমানার ব্যবস্থা ছিলো। এর ফলে কারো করোনার লক্ষণ আছে কিনা তা সহজেই জানা যেত।
- মুভমেন্ট ট্র্যাকার
গত বারের আইপিএলে সবাইকে মুভমেন্ট ট্র্যাকার ব্যবহার করতে হয়েছিলো। যাতে আগে থেকেই জিপিএস এর মাধ্যমে সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিলো এর ফলে দলগুলো কে কোথায় যাচ্ছে সেটা সহজেই জানা যেত। কে কার সংস্পর্ষে আসছে তাও জানা যেত। এছাড়াও কেউ যেসব এলাকায় প্রবেশাধিকার নেই সেখানে যাচ্ছে কিনা সেটাও জানা যেত এই ট্র্যাকারের মাধ্যমে। কিন্তু এই বারের আইপিএলের এই মুভমেন্ট ট্র্যাকার ব্যবহার করা হচ্ছে না।
- বায়োবাবল ম্যানেজার
এইবারের আইপিএলে ট্র্যাকার ব্যবহার করা না হলেও প্রত্যেক দলের সাথে চারজন ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে যারা দলগুলো বায়োবাবল মানছে কিনা সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখবেন। কিন্তু তাঁদের কাজ নিয়ে এখনি কিছুটা বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। একজন বায়োবাবল ম্যানেজার কঠোর কোয়ারেন্টিনে থাকাকালীন সময়ে রুম থেকে বের হয়েছেন। যা কিনা হোটেলের ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। তাই এই বায়োবাবলের ম্যানেজারের কাজ নিয়ে একটু সংশয় থেকে যায়।
- কোয়ারেন্টিন প্রটোকল
যেকোনো ক্রিকেটারকে বায়োবাবলে প্রবেশের আগে সাত দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। এরপর বায়োবাবলে থাকাকালীন সময়ে যদি করোনায় আক্রান্ত হয়, তাহলে তাদেরেকে দলের বায়োবাবলের বাইরে আলাদা কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। এই নিয়ম শুধু ফ্রাঞ্চাইজির স্কোয়াডের জন্য প্রযোজ্য নয়, ফ্রাঞ্চাইজি মালিক এবং তাঁদের পরিবার যদি দলের সাথে থাকতে চায়, তাঁদের জন্যও প্রযোজ্য হবে।
যাই হোক, কোয়ারেন্টিনের বিষয়ে অনেক ফ্রাঞ্চাইজির অনেক আপত্তি আছে। তাঁরা অনেকেই এই কোয়ারেন্টিন মেনে চলতে চান না। এই নিয়মের একটি লুকোচরি করেছিলো রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু। তাঁদের ওপেনার দেবদূত পেদ্দিকাল করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলো, কিন্তু তাঁরা জানায় পেদ্দিকাল সেলফ আইসোলেশনে গিয়েছেন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার দেবদূত পেদ্দিকাল ব্যাঙ্গালুরু থেকে চেন্নাইয়ে আসেন। এসেই দলের সাথে অনুশীলনে যোগ দেন তিনি। সাত দিনের কোয়ারেন্টিন এবং করোনা টেস্ট ছাড়াই দলের সাথে অনুশীলন শুরু করেন তিনি। প্রত্যেক দলকে কোয়ারেন্টিনের নিয়ম মেনে চলানো হবে বিসিসিআইয়ের জন্য চ্যালেঞ্জিং একটি কাজ।
- স্টেডিয়াম
আইপিএল উপলক্ষে বিভিন্ন ধরনের বায়োবাবল তৈরি করেছে বিসিসিআই। এর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত আছে মাঠের মাঠকর্মী এবং স্থানীয় রাজ্য ক্রিকেটে সংস্থার কর্মকর্তারা। তাঁরা নিশ্চিত করেছেন দলগুলো অনুশীলনের সময়ের বায়োবাবলের বাইরের কেউ আসেনি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে মুম্বাইয়ের ওয়ানখেড় স্টেডিয়ামের কয়েকজন মাঠকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। যেখানে আগামী দুই সপ্তাহে আইপিএলের ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে।
এখন মুম্বাইয়ের অন্য মাঠ থেকে মাঠকর্মী এনে কাজ করাচ্ছে মুম্বাই ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন।
দিল্লি এবং চেন্নাইয়ের মাঠের মাঠ কর্মীদের করোনার টিকা দিয়ে বাড়িতে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। এরপরে তাঁরা যখন কাজে ফিরে আসছে তখন সেটা সবার জন্যই ঝুকিপূর্ণ হয়। যদিও স্থানীয় ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন বলছে কয়েক দিন পর পরই তাঁদের করোনা টেস্ট করানো হচ্ছে এবং তাঁরা কেউ ড্রেসিং রুমের দিকে যাচ্ছে না।
এইরকম বিভিন্ন নিয়মের বায়োবাবলের মাধ্যমে আজকে রাত থেকে শুরু হতে যাচ্ছে আইপিএলের ১৪ তম আসর।
ইএসপিএন ক্রিকইনফো অবলম্বনে