উইন্ডিজের অভিজ্ঞতার ‘ঠাকুরমার ঝুলি’

তাঁদের মধ্যে ওয়ানডে খেলার অভিজ্ঞতা আছে মাত্র ৫ জনের! জেসন মোহাম্মদ, সুনীল অ্যামব্রিস, আলজারি জোসেফ, রভম্যান পাওয়েল আর রেমন রেইফারের মধ্যে সবথেকে বেশি ওয়ানডে আবার খেলেছেন ২৭ বছর বয়সী রভম্যান পাওয়েল।তা তাঁর সেই ‘সবথেকে বেশি ওয়ানডে’ খেলার সংখ্যা কত জানেন? মাত্র ৩৪!

উইন্ডিজ বাংলাদেশ সফরে এসেছে -এ খবর তো পুরনো। আগামীকালই তাঁরা খেলতে নামছে সিরিজের প্রথম ওয়ানডে। তবে , দলটার ওয়ানডে অভিজ্ঞতা যে খুব বেশি এমনটা কিন্তু বলা যাবেনা। ১৬ সদস্যের দলের ২ জনের এমনিতেই কোভিড পজিটিভ হওয়ায় দল থেকে বাদ পড়েছেন।

বাকি যারা আছেন তাঁদের মধ্যে ওয়ানডে খেলার অভিজ্ঞতা আছে মাত্র ৫ জনের! জেসন মোহাম্মদ, সুনীল অ্যামব্রিস, আলজারি জোসেফ, রভম্যান পাওয়েল আর রেমন রেইফারের মধ্যে সবথেকে বেশি ওয়ানডে আবার খেলেছেন ২৭ বছর বয়সী রভম্যান পাওয়েল।

তা তাঁর সেই ‘সবথেকে বেশি ওয়ানডে’ খেলার সংখ্যা কত জানেন? মাত্র ৩৪! বাকিদের মধ্যে অধিনায়ক জেসন মোহাম্মদ আর আলজারি জোসেফ ২৮ টি করে ওয়ানডে খেলেছেন। সুনীল অ্যামব্রিসের ঝুলিতে ১৩ ওয়ানডের অভিজ্ঞতা থাকলেও পঞ্চতন্ত্রের মন্ত্রের বাকি সদস্যের ওয়ানডে খেলার অভিজ্ঞতা মাত্র ২! বোঝাই যাচ্ছে, ওয়ানডে খেলার অভিজ্ঞরতার বিচারে এদের ‘ফ্যাব ফাইভ’ না বলে বরং ‘ফ্যান্টাস্টিক ফোর’ বললেই হত- দুই ওয়ানডে খেললেও কি, আর না খেললেও বা কি!

ঘরে অতিথি এলে খোঁজখবর নেওয়া বাঞ্ছনীয়। করোনাকালে জটিল স্বাস্থ্যবিধির প্রটোকল মেনে বাংলাদেশে এসেছে উইন্ডিজ। সেই উইন্ডিজের এই এত ‘অভিজ্ঞ’ দলটার অভিজ্ঞতার ব্যাপারে তাহলে আজকে একটু চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক বরং!

পালের গোদা দিয়ে আলোচনা শুরু করি- জেসন মোহাম্মদ। ২৮ টি ওয়ানডে ম্যাচ খেললেও পরিসংখ্যান জেসনের হয়ে খুব একটা কথা বলছে না। ২৮ ওয়ানডে খেলে তিনি করেছেন সাকল্যে ৫৫১ রান, গড় ২৩.৯৫! গড় আর রান দুই বিচারেই যখন তথৈবচ অবস্থা, উইন্ডিজদের ট্রেডমার্ক স্ট্রাইক রেটেও খুব বেশি ভাল অবস্থা নেই তাঁদের অধিনায়কের, মাত্র ৬৯.৩০!

তবে ওয়ানডেতে এমন হলে কি হবে, উইন্ডিজ যে জেসনের উপর আস্থার ব্যাটন তুলে দিয়েছে তার যথেষ্ট কারণ আছে। লিস্ট-এ ক্রিকেটে এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানের গড় যে ৪১.৭৬! ৯৬ লিস্ট-এ ম্যাচে তিনি করেছেন ২৮৪০ রান, ম্যাচে সর্বোচ্চ-১৪২!

রভম্যান পাওয়েল- দলের সবচাইতে ‘অভিজ্ঞ’ খেলোয়াড় তিনি। তা সেই অমিত অভিজ্ঞতা দিয়ে মিডল অর্ডার এই ব্যাটসম্যান ২৩.৯২ গড়ে করেছেন  ৬৭০ রান। তবে পাওয়েলের নামের পাশে আছে ১ সেঞ্চুরি আর ২ হাফ সেঞ্চুরি। ম্যাচের অভিজ্ঞতার মতই স্ট্রাইক রেটটাও অধিনায়কের চেয়ে ঢের ভাল পাওয়েলের – ৮৩.১২!

আর লিস্ট-এ ক্রিকেট বিবেচনায় নিলে এদিক থেকেও পাওয়েল দারুণ পারফর্মার- ৮১ ম্যাচে ৩২.৪৪ গড়ে ২২০৬ রান, ৩ সেঞ্চুরি আর ১৫ হাফ সেঞ্চুরিতে স্ট্রাইক রেট ১০২.৫৫। বোঝাই যাচ্ছে, উইন্ডিজের মূল দল এলেও তিনি সেখানে থাকতেন বহাল তবিয়তে।

জেসন মোহাম্মদের মতই সমান ২৮ ওয়ানডে খেলার অভিজ্ঞতা আছে আলজারি জোসেফের। তিনিও উইন্ডিজের মূল দলেরই সদস্য হিসেবে থাকতেন। ডানহাতি এই পেসার ২৮ ওয়ানডেতে নিয়েছেন ৪৮ উইকেট। প্রতি উইকেট নিতে প্রায় ২৯(২৮.৫৮) রান খরচ করে ফেললেও জোসেফের মূল দিকটা অন্যখানে। আধুনিক ক্রিকেটের এই যুগে ২৮ ওয়ানডে খেলে ফেললেও তাঁর ইকোনমি রেট ৫.৯০!

সেরা বোলিং ফিগার ৫৬ রানে ৫ উইকেট হলেও ম্যাচে তিনি চার উইকেট পেয়েছেন আরো ৪ বার। প্রতি উইকেট নিতে ২৯ বার বল ছুঁড়তে হলেও এই পেসার ভোগাতে পারে বাংলাদেশকে। লিস্ট-এ ক্রিকেটে ৪১ ম্যাচে ৫.৬৮ ইকোনমিতে ৭০ উইকেট অন্তত সেরকমই কিছুর আভাস দেয়। এতটুকু যখন বললামই, আরেকটু যোগ করি। লিস্ট-এ ক্রিকেটে এই পেসারের বোলিং গড় ২৬.৮৪, স্ট্রাইক রেট ২৮.৩!

ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওপেনিং ব্যাটসম্যান সুনীল অ্যামব্রিস। উইন্ডিজের অনূর্ধ্ব-১৫, অনূর্ধ্ব-১৯, উইন্ডিজ-এ সব ধাপ অতিক্রম করে তারপর তিনি এসেছিলেন জাতীয় দলে। ওপেনার হিসেবে এই ১৩ ম্যাচেই একটা সেঞ্চুরি বাগিয়ে ফেলেছেন তিনি। এই দলটার সবথেকে দারুণ ক্রিকেটারও সম্ভবত তিনিই। স্বল্প অভিজ্ঞতাতেই মাত্র ১৩ ম্যাচ খেলে তিনি করেছেন ৪৪৭ রান! গড়? ৪৪.৭০!

তবে শুধু রান করাতেই মনোযোগ না তাঁর, তিনি রান তুলতে পারেনও দ্রুত- ওয়ানডেতে তাঁর স্ট্রাইক রেট ৯৭.১৭! লিস্ট-এ ক্রিকেটে অবশ্য গড়টা একটু কমে এসেছে (৪০.৫১), তবে এখানেও ৪৭ ম্যাচে ১৪৯৯ রান বলে দেয়, সীমিত ওভারের ক্রিকেটে তিনি দারুণ কার্যকরী!

রেমন রেইফার, ওয়ানডে অভিজ্ঞতা  বলতে যার আছে মাত্র দুটি ম্যাচ। মজার ব্যাপার হল, সেই দুটি ম্যাচের প্রতিপক্ষও আবার বাংলাদেশ। বিশ্বকাপ শুরুর আগে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে বাংলাদেশের বিপক্ষে যে দুটি ম্যাচ খেললেন, এরপর আর দলে ডাক পড়েনি তাঁর। আবার যখন ডাক পড়ল- সেটাও আবার বাংলাদেশের সাথেই! সে দুই ম্যাচের একটাতে ব্যাট হাতে নামা না হলেও আরেকটাতে করেছিলেন ১২ বলে ৭ রান।

রেইফারের ব্যাটি গড়ও তাই মাত্র ৭! বল হাতে অবশ্য ব্যাট হাতে না নামা ম্যাচটাতে ২ উইকেট নিয়েছিলেন ২৩ রানের বিনিময়ে। তবে প্রথম ম্যাচে হাত ঘুরিয়ে ৩১ রান দিয়েও কোন উইকেট পাননি। লিস্ট-এ ক্রিকেটেও যে পরিসংখ্যান রেইফারের পক্ষে খুব একটা কথা বলে এমন নয়। ৬৪ ম্যাচে ৩০.৬৮ গড়ে ৬৬ উইকেট একেবারেই সাদামাটা বলা যায়। তবে রেইফার মাঝের ওভারে রান আটকে রাখতে বেশ পটু, অন্তত ৫.১৮ ইকোনমি সেটাই বলে দেয়!

এই হল উইন্ডিজ দলের অভিজ্ঞতার ঝুলি। তবে অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা ৯ ক্রিকেটারও কিন্তু বিপদ ডেকে আনতে পারেন যেকোন সময়- এটা কি ভুলে গেলে চলবে?

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...