লেটস ট্রাই মাহির সেই ১০ দিন
অত:পর ধোনি ফাইনাল খেলেছিল। ইস্ট জোনের আরেক ব্যাটসম্যান শিব সুন্দরের সাথে ওপেন করেছিল ধোনি। প্রথম ইনিংসে ধোনি মাত্র ২১ রান করেছিল। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে অসাধারণ এক ইনিংস খেলে ধোনি। ৪৭ বলে ৬০ রান করে নর্থ জোনের বোলিং লাইন আপকে হাপিয়ে তুলেছিলেন তিনি। এরপরই কেনিয়ায় ট্রাই নেশন সিরিজ খেলতে যান ধোনি। তারপর প্রথমবারের মত ভারতীয় দলে সুযোগ পান তিনি।
ভারতের ক্রিকেটে সর্বকালের সেরা অধিনায়কদের একজন তিনি। পুরো ক্রিকেট বিশ্ব যার ক্রিকেটবোধের কাছে মাথা নত করেছিল তিনি মহেন্দ্র সিং ধোনি। ভারতকে লড়াই করতে শিখিয়ে গিয়েছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলি। সেই লড়াই করার শক্তিকে সাথে নিয়ে ধোনি ভারতের ক্রিকেটকে নিয়ে গেছেন নতুন উচ্চতায়। সেই ঐতিহ্যই এখন বয়ে চলেছে বিরাট কোহলিরা।
ধোনিকে জাতীয়ে দলে সুযোগ দেয়ার পিছনে সৌরভ গাঙ্গুলির ভূমিকা আমরা সবাই জানি। নির্বাচকদের কাছে কয়েকজন কিপার ব্যাটসম্যান থাকলেও দাদা বলেছিলেন, ‘লেটস ট্রাই মাহি’। তবে ধোনিকে নিয়ে দাদা’র এই আত্মবিশ্বাসের কারণ কী ছিল। ২০০৩-০৪ সালের দুলীপ ট্রফিতে সৌরভের দল ইস্ট জোনের হয়ে খেলেছিল ধোনি। তবে তখন ধোনির প্রতি এতটা আস্থা বোধহয় ছিল না কলকাতার এই বরপুত্রের।
ধোনিকে ইস্ট জোনের হয়ে সুযোগ দেয়া নিয়ে সম্প্রতি একটি ইউটিউব শো-তে কথা বলেছেন ভারতে সাবেক প্রধান নির্বাচক কিরণ মোরে। সৌরভকে বোঝাতে নাকি অনেক সময় লেগেছিল কিরণ মোরের। সেই সময়ে ইস্ট জোনের কিপার ছিলেন কলকাতার আরেক সন্তান দীপ দাসগুপ্ত। দুলীপ ট্রফির ফাইনালে খেলানোর জন্য এই দুই জনকেই নাকি অনেক বুঝিয়ে রাজি করেছিলেন কিরণ মোরে। কেননা সেই সময় ভারত এমন একজন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানকে চাচ্ছিল যে দ্রুত কিছু রান করে দিতে পারবে।
ওই শো-তে কিরণ মোরে বলেন, ‘আমরা একজন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান খুঁজছিলাম। ওই সময়ে ফরম্যাট পরিবর্তন হচ্ছিল এবং ক্রিকেটের ধরণও পাল্টাতে শুরু করেছে। তাই আমাদের একজন পাওয়ার হিটার দরকার ছিল। যে কিনা ৬-৭ এ নেমে আমাদের জন্য দ্রুত ৪০-৫০ রান করে দিতে পারবে। রাহুল দ্রাবিড় সেই সময়ে ৭৫ টা ওয়ানডে ম্যাচ খেলে ফেলেছিল কিপার হিসেবে। ২০০৩ বিশ্বকাপেও খেলেছিল সে। ফলে আমাদের একজন ওরকম উইকেটরক্ষক খুব দরকার ছিল।’
একারনেই দীলিপ ট্রফির ফাইনালে ধোনিকে খেলাতে চাচ্ছিলেন কিরণ মোরে। তবে ফাইনাল ম্যাচে নর্থ জোনের বিপক্ষে সেই ম্যাচে ধোনিকে খেলানোর জন্য প্রথমে রাজি ছিলেন না ভারতের বর্তমান বোর্ড সভাপতি।
কিরন মোরে ধোনিকে নিয়ে আরো বলেন, ‘আমার সহকর্মীরা ধোনিকে প্রথম দেখেছিল। তারপর আমি তাঁর খেলা দেখতে যাই। আমি ওর ব্যাটিং দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। দলের ১৭০ রানের মধ্যে ১৩০ রানই ধোনি করেছিল। সে প্রতিটি বল হিট করছিল। আমরা তাই চাচ্ছিলাম ধোনি যেনো ফাইনাক খেলে। তখনই আমার সৌরভ ও দীপ দাসগুপ্তের সাথে অনেক কথা কাটাকাটি হয়েছিল। দীপ ভারতের হয়েও খেলেছিল। সব মিলিয়ে ওদের রাজি করাতে আমার ১০ দিন সময় লেগেছিল।’
অত:পর ধোনি ফাইনাল খেলেছিল। ইস্ট জোনের আরেক ব্যাটসম্যান শিব সুন্দরের সাথে ওপেন করেছিল ধোনি। প্রথম ইনিংসে ধোনি মাত্র ২১ রান করেছিল। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে অসাধারণ এক ইনিংস খেলে ধোনি। ৪৭ বলে ৬০ রান করে নর্থ জোনের বোলিং লাইন আপকে হাপিয়ে তুলেছিলেন তিনি। এরপরই কেনিয়ায় ট্রাই নেশন সিরিজ খেলতে যান ধোনি। তারপর প্রথমবারের মত ভারতীয় দলে সুযোগ পান তিনি।
কিরণ মোরে ওই ম্যাচের পারফর্মেন্স আরো বলেন, ‘ধোনি কিপিং করেছিল এবং সব বোলারদের মারছিল। তারপর আমরা এ দলের হয়ে তাকে কেনিয়ায় পাঠাই। ভারত, পাকিস্তান ও কেনিয়ার এ দলের সেই সিরিজে ধোনি ৬০০ রান করেছিল। তারপর তো বাকিটা ইতিহাস হয়ে রয়েছে। তাই আপনাকে এমন ক্রিকেটারকে সুযোগ দিতে হবে যার মধ্যে স্পেশাল কিছু আছে, যে আপনাকে ম্যাচ জিতিয়ে দিবে। ধোনির মধ্যে এগুলো ছিল এবং সে ক্লিক করেছে। আমরা ঠিক ঘোড়ায় বাজি ধরেছিলাম ফলে আমরা এর ফল পেয়েছি। আসলে সব কৃতিত্ব ছিল নির্বাচিক কমিটির সদস্য দের।’
ধোনি শুধু ভারতের হয়ে ক্লিকই করেননি। তিনি ভারতের ক্রিকেটটাকেই নতুন করে লিখেছেন।