Social Media

Light
Dark

গ্লেন টার্নার, চাকচিক্যময় ‘যমদূত’

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি, তবে ঘরোয়া ক্রিকেট ভাসিয়েছেন রান বন্যায় – এমন ক্রিকেটারের সংখ্যা অনেক। সেই অসংখ্য ক্রিকেটারের মধ্যে একজন ছিলেন নিউজিল্যান্ডের গ্লেন টার্নার।

ads

নিউজিল্যান্ডের জার্সি গায়ে বেশ সংক্ষিপ্ত এক ক্যারিয়ার; ৪১ টেস্ট ও ওয়ানডে খেলেছেন তিনি। বলা হয় তাঁর সময়ে নিউজিল্যান্ডের অন্যতম ক্রিকেটার ছিলেন টার্নার।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলারদের তিনি ছিলেন যমদূতের মত। ওয়েস হল, মাইকেল হোল্ডিং, চার্লি গ্রিফিথরা যেখানে ব্যাটারদের ঘুম হারাম করেছেন – সেখানে টার্নারের কাছে পাত্তাই পাননি এই ক্যারিবিয়ান তারকারা। ৮ ইনিংসে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে তাঁর ব্যাটিং গড় ৬৬!

ads

১৯৪৭ সালে ওটাগোর ডানেডিনে জন্ম গ্লেন মাইটল্যান্ড টার্নারের। অফ ড্রাইভ আর মিড উইকেটের উপর দিয়ে দুর্দান্ত সব শট তিনি হাঁকাতে পারতেন। প্রথম নিউজিল্যান্ডের ব্যাটার হিসেবে এক টেস্টে দুই সেঞ্চুরির কীর্তি গড়েন তিনি।

১৯৭১-৭২ মৌসুমে নিউজিল্যান্ড তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে। সেখানে টেরি জার্ভিসের সাথে ওপেনিংয়ে ৩৮৭ রানের অনবদ্য এক জুটি গড়েন টার্নার। টার্নারের ২৫৯ রানে সেই টেস্ট পরিণত হয় ড্র’য়ে। গ্যারি সোবার্স, ভ্যানবার্ন হোল্ডারদের বিপক্ষে দুর্দান্ত ব্যাট করেছিলেন তিনি।

১৯৭৩-৭৪ মৌসুমে প্রথমবারের মত অস্ট্রেলিয়াকে হারায় নিউজিল্যান্ড। সেখানে পর পর দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করেন টার্নার। নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসে প্রথম ব্যাটার হিসেবে পর পর দুই সেঞ্চুরির কীর্তি গড়েন তিনি।

১৯৭৫ বিশ্বকাপে বলের হিসেবে সবচেয়ে দীর্ঘ ইনিংস খেলেছিলেন টার্নার। ইস্ট আফ্রিকানদের বিপক্ষে ২০১ বলে ১৭১ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন এই ব্ল্যাকক্যাপ ওপেনার।

১৯৭৬ সালে ভারত সফরে যায় নিউজিল্যান্ড দল। সেই সফরে ছিলেন টার্নার। ওই সফরে ভারতের স্পিন বিভাগের কাছে ধরাশায়ী হয় ব্ল্যাকক্যাপসরা। তবে টার্নারের জন্য ভাল একটি সফর ছিল। ওই সফরেই মুম্বাইয়ে তাঁর ভবিষ্যৎ স্ত্রী সুখবিন্দর কৌরের দেখা পান।

সেই সাক্ষাতের ব্যাপারে টার্নার বলেছিলেন, ‘একটা অফিসিয়াল অনুষ্ঠানে তার সাথে আমার প্রথম দেখা। এরপর তিন বছরের প্রেম। কারণ জানেনই ভারতের অভিভাবকরা এসব কিভাবে দেখে। তার বাবা তাকে বলেছিল পশ্চিমারা এসব মজা হিসেবে নেয়।’

ক্রিকেটীয় প্রতিভা নিয়েই যেন জন্মেছিলেন। রান করার ক্ষুধা ছিল বেশ । রান করাটাই যেন তার নেশা। তবে ক্রিকেট ক্যারিয়ারে টার্নারের ‘সাফল্য’ শব্দটা কাউন্টি দল উস্টারশায়ারের সাথেই ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িত।

কাউন্টিতে সব দলের বিপক্ষেই সেঞ্চুরির কীর্তি আছে টার্নারের। ১৭ টি কাউন্টি দলের বিপক্ষে সেঞ্চুরির কীর্তি আছে এই তারকার। উস্টারশায়ার একমাত্র দল যার পক্ষে খেলার‍ কারণে এই দলের বিপক্ষে সেঞ্চুরির দেখা পাননি; নচেৎ সুযোগ থাকলে সেটিও করে ফেলতেন।

ব্রিটিশ সাংবাদিক ক্রিস্টোফার মার্টিন-জেনকিন্স বলেছিলেন, ‘ফ্যাকাশে মুখের, গম্ভীর মনের একজন ছিলেন টার্নার। ওপেনিংয়ে নামতেন, সোজা ব্যাটে খেলতেন। দৃঢ় টেকনিকে রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলতে পারতেন; যেটা খুব কম জনের মধ্যেই ছিল। তবে ক্যারিয়ারের শুরুতে তার সীমাবদ্ধতা ছিল, প্রতিটা শট প্রয়োজনেই খেলতেন। আবার প্রয়োজনে দ্রুত তিনি রান তুলে ফেলতেন।’

পরিপূর্ণ কোনো ইনিংসে সবচেয়ে বেশি শতাংশ রানের মালিকও তিনি। ১৯৭৭ সালে গ্লামারগনের বিপক্ষে উস্টারশায়ারের হয়ে ১৪১ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি; যেখানে পুরো দলের সংগ্রহ ১৬৯ রান!

টেস্টে ৪৫ গড়ে প্রায় ৩ হাজার রান, ওয়ানডেতে ৪৭ গড়ে প্রায় ১৬০০ রান করেছেন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৪৫৫ ম্যাচে প্রায় ৫০ গড়ে তিনি ৩৪ হাজারের বেশি রানের মালিক; লিস্ট এ ক্রিকেটেও আছে দশ হাজারের বেশি রান। অবাক করা ব্যাপার হল প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তিনি হাঁকিয়েছেন একশোর বেশি সেঞ্চুরি! ক্রিকেট ইতিহাসে সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি করা গুটি কয়েক ক্রিকেটারের একজন এই গ্লেন টার্নার।

স্পিনারদের বিপক্ষে ছিলেন দুর্দান্ত। স্লিপেও বেশ ভাল ফিল্ডিং করতেন। নিজ থেকেই একটা সময়ে প্রথম স্লিপে ফিল্ডিং শুরু করেন। কাউন্টি ইতিহাসের অন্যতম সেরা তারকা তিনি। কাউন্টি খেলা বিদেশি ক্রিকেটার মধ্যে টার্নারকে অনেকে সেরাদের সেরাও মানেন; দক্ষিণ আফ্রিকার মাইক প্রক্টোরও এগিয়ে থাকবেন এদিক থেকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link