অপেক্ষার ফল মধুর হয়

সাল ২০১০। এরপর ২০২২। অপেক্ষাটা দীর্ঘ এক যুগের। এক দম ঠিক ঠিক ১২ বছর ২ দিন পর আবারো ভারতের হয়ে টেস্ট খেলতে নামলেন জয়দেব উনাদকাত। শুধু তাই নয়, ক্যারিয়ারে প্রথম টেস্ট উইকেটটির জন্যও তাঁকে এতগুলো বছর অপেক্ষা করতো হল। ২০১০ সালের ২০ ডিসেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকার সেঞ্চুরিয়নে সেই যে উইকেটশূন্য থেকে ম্যাচ শেষ করছিলেন, এর ঠিক ১২ বছর পর ২০২২ এ এসে মিরপুরে নিজের প্রথম টেস্ট উইকেটের স্বাদ পেলেন বাঁহাতি এ পেসার।

কিছুটা বিস্মিত হওয়ার মতো তথ্য হলো, সেঞ্চুরিয়নের সে টেস্টে উনাদকাতের সতীর্থ থাকা রাহুল দ্রাবিড় মিরপুরের এ ম্যাচে ছিলেন কোচিংয়ের দায়িত্বে। ১২ বছর আগে ঐ ম্যাচ দিয়ে উনাদকাতের অভিষেক হওয়ার পর মোট ১১৮ টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে ভারত। কিন্তু এর মাঝে একটি ম্যাচেও সুযোগ হয়নি তাঁর। সেঞ্চুরিয়নে শুরু, সেঞ্চুরিয়নেই শেষ। অবশেষে নিজের অভিষেকের পর ভারতের ১১৯ নম্বর টেস্টে ভারতের একাদশে সুযোগ মিলল তাঁর।

আর এর মধ্য দিয়ে এক টেস্ট থেকে আরেক টেস্ট খেলার মাঝে দীর্ঘ বিরতির রেকর্ডে নাম লিখিয়ে ফেলেছেন উনাদকাত। সময়ের হিসেবের উনাদকাতের এক টেস্ট থেকে আরেক টেস্ট খেলার মাঝে বিরতি ছিল ১২ বছর ২ দিন।  ভারতের হয়ে সবচেয়ে লম্বা বিরতি হয়েছিল লালা অমরনাথের বেলায়। প্রথম দুই টেস্ট খেলার পর পরের টেস্ট খেলার পথে তাঁর বিরতি ছিল ১২ বছর ১২৯ দিনের। সে হিসেবে দীর্ঘ বিরতির দিক দিয়ে উনাদকাত দ্বিতীয়।

তবে নিজের প্রথম টেস্ট খেলার পর দ্বিতীয় টেস্ট খেলার মাঝে দলের ম্যাচ সংখ্যার দিক দিয়ে তিনি আবার প্রথম। কারণ ইতিহাসে এর আগে কখনোই কোনো ক্রিকেটার অভিষেক টেস্ট খেলার পর শতাধিক টেস্ট মিস করেননি। ইংল্যান্ডের লেস জ্যাকসন তাঁর অভিষেকের পর ৯৬ টি টেস্ট  ম্যাচের পর আবার টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। এবার সেই রেকর্ডটিকেও ছাপিয়ে গেলেন জয়দেব উনাদকাত। নিজের অভিষেকের ১১৮ টি টেস্ট পর তিনি আবার ভারতের হয়ে টেস্ট খেলার সুযোগ পেলেন।

বাংলাদেশের বিপক্ষে জয়দেব উনাদকাতের আবার সাদা জার্সিতে ফিরে আসার দিনে সংখ্যাতত্ত্বে একটি কাকতালীয় ঘটনারও নজির হয়েছে। সেটি হলো- মিরপুরের এ ম্যাচ দিয়ে বাংলাদেশ তাদের ইতিহাসে ১৩৬ তম টেস্ট ম্যাচ খেলছে। মজার ব্যাপার হলো, উনাদকাতের যখন টেস্ট অভিষেক হয় তখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ৬৮ টি টেস্ট খেলেছিল। সেই ধারায় উনাদকাত যখন দীর্ঘ বিরতির পর আবারো টেস্টে ফিরলেন, বাংলাদেশও এই ১২ বছর ২ দিনে ঐ সমান ৬৮ টি টেস্টই খেলেছে।

অবশ্য জয়দেব উনাদকাত অভিষেক টেস্টেই অনন্য এক ইতিহাসের সাক্ষী হয়েছিলেন। প্রথম টেস্টে হার, সাথে উইকেটশূন্য- শুরুটা উনাদকাতের জন্য তিক্ততার হলেও, ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরি করেছিলেন শচীন টেন্ডুলকার। আর সেই সেঞ্চুরিটিই ছিল শচীনের ৫০ তম টেস্ট সেঞ্চুরি! যে কীর্তি শচীন ছাড়া ইতিহাসের আর কারো নেই।

খাতা কলমে এক যুগের টেস্ট ক্যারিয়ারে কোনো উইকেট নেই। এমন পরিসংখ্যানকে সামনে রেখে জয়দেব উনাদকাত মিরপুরের এ টেস্টের নিজের করা প্রথম ওভারের পঞ্চম বলেই উইকেট তুলে নেন। তাঁর শিকার হন আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান জাকির হাসান।

নিজের প্রথম উইকেটের পর দ্বিতীয় উইকেটটিও তুলে নিতে খুব বেশি সময় নেননি উনাদকাত। দারুণ সব শটে ইনিংস এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকা মুশফিককে পরাস্ত করেন দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে। সব মিলিয়ে ইনিংসে দুই উইকেট নিলেও বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপকে প্রথম ভয় ধরানো শুরু করেছিলেন তিনিই। ফলশ্রতিতে বাংলাদেশও তাদের ইনিংস ২২৭ রানের বেশি করতে পারেনি।

আপাতত আরও এক ইনিংস বল করার সুযোগ পাচ্ছেন উনাদকাত। হয়তো ঐ ইনিংসই ঠিক করে দিবে উনাদকাতের টেস্ট ক্যারিয়ার এবার কোন পথে এগোবে। আবারো কোনো লম্বা বিরতি নাকি একবারে ফুলস্টপ-তা এরপর সময়ই বলে দিবে।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link