যদি প্রশ্ন করা হয়, বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা লেগ স্পিনার কে? টুকটাক ক্রিকেট দেখা একজন থেকে শুরু করে ক্রিকেট নিয়ে গবেষণা করেন এমন অধিকাংশ মানুষই উত্তর দিবেন শেন ওয়ার্ন। তবে ইংল্যান্ড এর সাবেক অধিনায়ক গ্রাহাম গুচ বলেছিলেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেছিলেন, ‘আব্দুল কাদির ওয়াজ ফাইনার দ্যান শেন ওয়ার্ন।’
যাকে লেগ স্পিনের সেরা বলা হয় – সেই ওয়ার্নও এই কাদিরের কাছ থেকে তালিম নিয়েছেন। এই নিয়ে হয়তো তর্ক-বিতর্ক হতে পারে। তবে পাকিস্তান ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা লেগ স্পিনার এই আব্দুল কাদির।
১৯৭৭ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হয় এই লেগ স্পিনারের। তারপর থেকে পাকিস্তানের বোলিং আক্রমণের ভরসা হয়ে উঠেন তিনি। ১৯৮৩ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেকেই ঝড় তুলেন এই লেগি। ১২ ওভারে মাত্র ২১ রান দিয়েই তুলে নেন ৪ উইকেট।
ওই টুর্নামেন্টে মোট ১২ উইকেট নিয়েছেলেন আব্দুল কাদির। ১৯৮৭ বিশ্বকাপেও দলের সঙ্গী ছিলেন তিনি। তবে তারপর থেকেই তাঁর ক্যারিয়ারের গ্রাফ ক্রমশ নিচের দিকে নামতে থাকে। ফলে প্রায় এক যুগ ধরে একাদশে একজন লেগ স্পিনার খেলানো পাকিস্তান যেন হঠাৎই বিপাকে পড়ে যায়।
বিশেষ করে ১৯৯২ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে একজন লেগির খোঁজে উঠে পড়ে লেগেছিল পাকিস্তান। ভাগ্যক্রমে বিশ্বকাপের ঠিক আগের বছরই ঘরোয়া ক্রিকেটে এক লেগি মোটামুটি ঝড় তুলে ফেলেন। করাচির এই বোলার পেশোয়ারের বিপক্ষে ৭ রান দিয়েই ৭ উইকেট নিয়ে বসেন।
শোনা যায় আব্দুল কাদিরের এই উত্তরসূরির নাম ইকবাল সিকান্দার। তখন থেকেই সিকান্দারকে নজর রাখে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি। যিনি পরবর্তীকালে বিশ্বকাপ নিয়ে ফিরেন, যদিও সেই জয়ে তাঁর ভূমিকা ছিল সামান্যই।
দলে একজন লেগির অভাব এবং সিকান্দারের সেই সময়োপযোগী বোলিং ফিগার তাকে সরাসরি নিয়ে যায় ১৯৯২ বিশ্বকাপ দলে। তখন তাঁর বয়স ৩৩ বছর। ইমরান খান, ওয়াসিম আকরাম, জাভেদ মিয়াঁদাদদের দলে আনকোড়া এক নাম ইকবাল সিকান্দার। সেই বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অভিষেক হয় তাঁর। অভিষেক ম্যাচে উইকেট না পেলেও ইকোনমিকাল বোলিংই করেছিলেন। ৮ ওভার বল করে খরচ করেছিলেন মাত্র ২৬ রান।
পরের ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এক উইকেট পান তিনি। যথাক্রমে পরে দুই ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও একটি করে উইকেট তুলে নেন। সবমিলিয়ে বিশ্বকাপের চার ম্যাচে সিকান্দারের উইকেট সংখ্যা তিন।
ব্যক্তিগত ভাবে বিশ্বকাপটা ভালো না কাটলেও চ্যাম্পিয়ন হয়েই ফিরেছিল তাঁর দল। বিশ্বকাপ জয়ী সিকান্দারও নিশ্চই ভবিষ্যতে পাকিস্তানের লয়ে লম্বা সময় ক্রিকেট খেলার পরিকল্পনা করছিলেন। হয়তো নিজের ভুল গুলো কীভাবে ঠিক করা যায় তাই নিয়েই ভাবছিলেন।
তবে কী এক অজানা কারণে বিশ্বকাপের পর আর কখনো পাকিস্তানের হয়ে খেলার সুযোগ পননি এই বোলার। অবশ্যই বয়স একটা ব্যাপার ছিল, আর এরপরই দলে জায়গাটা থিতু হয়ে যায় আরেক লেগ স্পিনার মুশতাক আহমেদের। বিশ্বকাপের ওই চারটি ম্যাচ এবং তিনটি উইকেটই তাই সিকান্দারের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। হয়তো সিকান্দার চার ম্যাচে আহামরি কিছু করে দেখাতে পারেননি। তবে আর কখনো সুযোগ না পাওয়ার মত বাজে পারফরমেন্সও বোধহয় করেননি।
বিশ্বকাপ জয়ী দলের একজন ক্রিকেটার হঠাৎ করেই যেনো কোথায় হারিয়ে গেলেন। বিশ্বকাপের আগে ,পরে ক্রিকেট বিশ্বে আর কোথাও কখনো ছিলেন না ইকবাল সিকান্দার। পরে অবশ্য আফগানিস্তান দলের কোচিং করিয়েছেন। সেই ১৯৭৬-৭৭ মৌসুম থেকে শুরু করে ২০০০ সাল অবধি ক্রিকেট খেলেছেন, কখনো পাকিস্তানে – কখনো বা ইংল্যান্ডে।
তবে যতবার ১৯৯২ বিশ্বকাপকে পড়া হবে, ইমরান খানদের গল্প বলা হবে ততবারই পরিবারের সবচেয়ে ছোট সদস্যের মত সিকান্দারের গলা শোনা যাবে। হয়তো তিনি বলবেন, ‘আমিও আছি, বিশ্বকাপ জয়ী সিকান্দার।’