ভারতীয় আধিপত্যের আরেক ফাইনাল

ওই ফাইনালের মধ্যে দিয়ে টানা তিন আসরের ফাইনালে ভারতের কাছে পরাজিত হয় লঙ্কানরা। এশিয়া কাপের প্রথম পাঁচ আসরেই ফাইনাল খেলে শ্রীলঙ্কা। এর মধ্যে চারবারই ভারতের কাছে ফাইনালে হারে দলটি। ১৯৮৬ আসরে পাকিস্তানকে ফাইনালে হারিয়ে প্রথমবার শিরোপা জয় করে লঙ্কানরা।

এশিয়ার দলগুলোর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের লড়াইয়ের টুর্নামেন্ট এশিয়া কাপ। এশিয়ার কাপের জন্মলগ্ন থেকেই আধিপত্য বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম পরাশক্তি ভারতের। এশিয়া কাপের সবচেয়ে সফল দলও তাঁরা। আর এশিয়া কাপের ফাইনাল মানেই যেন ভারত-শ্রীলঙ্কা। কারণ ১৪ আসরে আট আসরেই ফাইনাল খেলেছে ভারত ও শ্রীলঙ্কা!

সাল ১৯৯৫। শারজাহতে এশিয়া কাপের পঞ্চম আসরের ফাইনালে আরও একবার মুখোমুখি ভারত ও শ্রীলঙ্কা। আগের চার আসরের তিনটিতেই শিরোপা জয় করেছে ভারত। অর্জুনা রানাতুঙ্গার নেতৃত্বে অরবিন্দ ডি সিলভা, সনাথ জয়াসুরিয়া, আসাঙ্কা গুরুসিনহা, চামিন্দা ভাস, মুত্তিয়া মুরালিধরনদের নিয়ে গড়া সেসময়ের শ্রীলঙ্কা দলটা ছিল বেশ শক্তিশালী। অপরদিকে, এশিয়ার মাটিতে তখন ভারতের আধিপত্যই সবচেয়ে বেশি।

সেবার এশিয়া কাপের ফাইনালে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামে শ্রীলঙ্কা। ওপেনিং জুটিতে ৪৬ রান করেন রোশান মাহানামা ও জয়াসুরিয়া। এরপর এক ওভারের ব্যবধানে দুই ওপেনারের বিদায়। দুর্দান্ত শুরুর পর হঠাৎ চাপের মুখে তখন লঙ্কানরা। এরপর বেশিদূর যেতে পারেননি অরবিন্দ ডি সিলভা, রানাতুঙ্গারা। এই দুই তারকা দ্রুত বিদায়ে ৮৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে তখন শ্রীলঙ্কা।

ভারতীয় বোলারদের দাপটের সামনে রান বের করতে হিমসিম খাচ্ছিল লঙ্কান ব্যাটাররা। তবে ধ্বংসস্তূপের মাঝেও এক প্রান্তে ঠায় দাঁড়িয়ে গুরুসিনহা। হাসান তিলেকারত্নেকে নিয়ে পঞ্চম উইকেটে গড়লেন ভিত। ৬১ রানের জুটির পথে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিতও দিলেন। হাসান, রমেশ কালুভিতারানাদের সাথে গুরুত্বপূর্ণ জুটির পথে দলকে মোটামুটি একটা শক্ত অবস্থানে নিয়ে গেলেন গুরুসিনহা।

একপ্রান্তে গুরুসিনহা ফিফটি পার করে তখন সেঞ্চুরির দিকে। হাসান, কালুভিতারানা ভিত গড়লেও খেলতে পারেননি বড় ইনিংস। হাসান ২২ ও কালুভিতারানা ফিরেন মাত্র ১৮ রানে। তবুও মাটি কামড়ে ক্রিজে ছিলেন গুরুসিনহা। ১৯২ রানে তখন ৬ উইকেট নেই শ্রীলঙ্কার। সেখান থেকে গুরুসিনহার অসাধারণ ১২২ বলে ৮৫ রানের ইনিংসে দলের সংগ্রহ গিয়ে পৌঁছায় ২৩০ রানে। ৩ ছক্কা ও ২ চারে গুরুসিনহার ৮৫ রানে ভর করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৩০ রান সংগ্রহ করে শ্রীলঙ্কা। ভারতের পক্ষে অনিল কুম্বলে ও ভেঙ্কটেশ প্রসাদ শিকার করেন ২টি করে উইকেট।

গ্রুপ পর্বের ম্যাচেও ভারতের বিপক্ষে পাত্তা পায়নি লঙ্কানরা। অপরদিকে, ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপের সামনে এই লক্ষ্যমাত্রা খুব বেশিও নয়। লঙ্কানদের জয়ের মন্ত্র তখন চামিন্দা ভাস, মুরালিধরনদের কারও ম্যাজিকেল এক স্পেল।

২৩১ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে দুর্দান্ত শুরু করেন শচীন টেন্ডুলকার। এরপর লঙ্কানদের মতোই ওপেনিং জুটি ভাঙে চল্লিশের ঘরে। দলীয় ৪৮ রানে ফেরেন মনোজ প্রভাকর। এরপর দ্রুতই আউট টেন্ডুলকার। ৫৮ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপের মুখে তখন ভারত। নভজ্যোৎ সিং সিধু ও অধিনায়ক মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনকে ফেরাতে পারলে ভারতের টুটি চেপে ধরা যাবে সেটা জানতেন লঙ্কান অধিনায়ক রানাতুঙ্গা।

তবে রানাতুঙ্গার কোনো অস্ত্রই সেদিন আর এই দুই তারকার সামনে পাত্তা পায়নি। লঙ্কান অধিনায়কের সব কৌশল ব্যর্থ করে দিয়ে সিধু ও আজহারউদ্দিনের অনবদ্য ১৭৫ রানের জুটিতে চতুর্থবারের মত এশিয়া কাপের শিরোপা জয়লাভ করে ভারত। ১০৬ বলে ৫ চারে ৮৪ রানে সিধু ও ৮৯ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৯০ রানে অপরাজিত থাকেন আজহারউদ্দিন। ভারতের ৮ উইকেটের জয়ে ওই আসরে এশিয়া কাপের শিরোপা জয়ের স্বপ্নভঙ্গ হয় লঙ্কানদের।

ওই ফাইনালের মধ্যে দিয়ে টানা তিন আসরের ফাইনালে ভারতের কাছে পরাজিত হয় লঙ্কানরা। এশিয়া কাপের প্রথম পাঁচ আসরেই ফাইনাল খেলে শ্রীলঙ্কা। এর মধ্যে চারবারই ভারতের কাছে ফাইনালে হারে দলটি। ১৯৮৬ আসরে পাকিস্তানকে ফাইনালে হারিয়ে প্রথমবার শিরোপা জয় করে লঙ্কানরা।

পরের বছর ১৯৯৬ সালে সিঙ্গাপুরের অনুষ্ঠিত সিঙ্গার কাপে আবারও ভারতের কাছে পরাজিত হয় লঙ্কানরা। যদিও সেবার ফাইনালে ওঠে শ্রীলঙ্কা। কিন্তু দুর্ভাগ্য পিছু ছাড়েনি লঙ্কানদের। ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে হেরে যায় শ্রীলঙ্কা! ওই বছরই প্রথমবার বিশ্বকাপ শিরোপা জয় করে লঙ্কানরা।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...