২-০ ইজ লোডিং ফর অস্ট্রেলিয়া?

গ্যাবার আকাশে ৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যা নামতেই জ্বলে উঠবে ফ্লাডলাইট—আর সেই আলোতেই অ্যাশেজ ২০২৫-২৬ সিরিজ প্রথম বড় মোড় নিতে চলেছে। দিন-রাতের গোলাপি বলের টেস্ট মানেই অনিশ্চয়তা, আর এবার সেই অনিশ্চয়তার মঞ্চে নামছে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড।

পার্থে কঠিন লড়াই জিতে সিরিজে ১-০ এগিয়ে আছে অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু দ্বিতীয় টেস্টেও নেই প্যাট কমিন্স। দলের নেতৃত্বে যথারীতি স্টিভ স্মিথ। অন্যদিকে, পার্থের ভাঙনের দাগ এখনো তাজা ইংল্যান্ড শিবিরে। তবু, বেন স্টোকসের মুখে একটাই মন্ত্র—বাজবলের নিরন্তর আগ্রাসন।

গ্যাবার কিউরেটর ডেভ সান্ডারস্কি জানিয়ে রেখেছেন, উইকেট হবে ভারসাম্যপূর্ণ—ব্যাট ও বল দুপক্ষেরই সুযোগ থাকবে। গরম আবহাওয়ায় পিচ দ্রুত শুকিয়ে যাবে ঠিকই, তবে পাঁচ দিন টিকে থাকার মতো আর্দ্রতা রাখা হয়েছে মাটিতে। কিন্তু খেলার গল্প কি এমনই সোজা?

গোলাপি বলের নিজস্ব রহস্য আছে। লাইট জ্বলে ওঠার ঠিক ওই গোধূলি সময়ে বলটা আচমকাই বাড়তি সুইং করতে শুরু করে। ডিউ পড়লে সে সুইং আরও তীব্র হয়। লাল বলের মতো তাড়াতাড়ি নষ্টও হয় না—উল্টো বরং চকচকে ভাবটা দীর্ঘক্ষণ থাকে, যা স্টার্কের মতো বাঁ-হাতি পেসারকে করে তোলে দারুণ বিধ্বংসী।

গ্যাবা আবার সেই জায়গা, যেখানে অস্ট্রেলিয়া ৩২ বছর হারেনি—২০২১ পর্যন্ত ছিল ‘ফোর্ট্রেস ব্রিসবেন’। দিন-রাতের টেস্ট অবশ্য এখানে বিরল, এটি মাত্র চতুর্থ ম্যাচ। পিচের রূপও দিনে দিনে বদলায়।

প্রথম দিন সাধারণত ব্যাটসম্যানদের স্বর্গ—২৫০-এর বেশি রান হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। অস্ট্রেলিয়ার শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন আপের নজর থাকবে সেদিকেই। কিন্তু, তৃতীয় দিনে ঘাসের শিকড় আলগা হয়ে গেলে ফাটল ধরবে, ভাঙন আর অনিয়মিত বাউন্সে শুরু হয় বোলারদের উৎসব।

রাতে শিশির জমে পিচ নরম হলেও গোলাপি বল ঘাড়ধাক্কা দিয়ে সুইং তুলে আনে। স্টার্ক-বোল্যান্ডের প্রথম দফার আক্রমণের পর দিনের শেষে নাথান লিঁও নিজের স্পিনে কামড় বসিয়ে দেওয়ার সক্ষমতা রাখেন।

ইংল্যান্ডের পেসাররা—আর্চার, উড, কার্স—রিভার্স সুইংয়ের ভরসায় উঠেপড়ে লাগলেও ডিউয়ের কারণে সেই অস্ত্র ভোঁতা হয়ে যেতে পারে। তাদের গোলাপি বলের রেকর্ডও তেমন উৎসাহদায়ক নয়, বিপরীতে স্টার্ক এই ফরম্যাটে ভয়ঙ্কর, গড় ১৭—একাই ত্রাস।

ইংল্যান্ড যদি প্রথমে ব্যাট করে ১৫০ লিড গড়ে নিতে পারে, তবে ম্যাচের আকার পাল্টাতে পারে। কিন্তু সেটিই তাদের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—বাজবল কি এই পরিস্থিতিতে টিকবে? আগ্রাসী ব্যাটিং যে তাদের শক্তি, সেটাই আবার ভেঙে পড়ার উৎস।

২০২৩ অ্যাশেজে এই ঢংয়ে তারা প্রতি ওভারে প্রায় পাঁচ রান তুলেছিল, তাতেই ২-০ পিছিয়ে থেকেও সিরিজ ২-২ করেছে। কিন্তু গোলাপি বলের অধীনে আগ্রাসন মানেই কখনো কখনো আত্মঘাতী ঝুঁকি। আর অস্ট্রেলিয়া সেই ফাঁদ পেতে বসে আছে বহু আগেই।

প্রেডিকশনের দিকে তাকালে ছবি আঁকা যেন আগেই স্পষ্ট। অস্ট্রেলিয়া যদি আগে ব্যাট করে ৩৫০ তোলে, ইংল্যান্ড হয়তো ২৫০-তেই থমকে যাবে—স্টার্ক হয়তো আবার রাতের আলোয় চার উইকেট তুলে নেবেন। তৃতীয় দিনের শেষে অস্ট্রেলিয়া লিড বাড়িয়ে ইংল্যান্ডকে ৩৫০ রানের ধাওয়া দিতে বাধ্য করতে পারে। বাজবলের তাড়াহুড়োয় ইংল্যান্ডের ব্যাটিং ভেঙে পড়লে চতুর্থ দিনের চায়ের আগেই ২-০ হয়ে যেতে পারে সিরিজ।

ইংল্যান্ডের বাঁচার রাস্তা আছে, কিন্তু খুবই বিপজ্জনক রাস্তা। রুটকে বড় ইনিংস খেলতেই হবে, ক্রলি-ডাকেটকে দ্রুত রান তুলতে হবে, আর্চারকে বারবার ছোট ছোট স্পেলে ব্যবহার করতে হবে, আর ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিতে হবে ডিউকে—যেন তা অস্ট্রেলিয়ার ধার কমিয়ে দেয়। কিন্তু গ্যাবার ভূতেরা কি এত সহজে বিদায় নেবে?

শেষ পর্যন্ত, উত্তরটা লুকিয়ে আছে সেই সন্ধ্যার আলো-আঁধারিতে—টিমটিমে আলো কি অ্যাশেজের গল্প ঘুরিয়ে দেবে, নাকি ইংল্যান্ডই উঠবে আগুন হয়ে? সময়ই বলবে।

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Share via
Copy link