সাব্বির রহমানকে নিয়ে কেন এত আলোচনা, কেন এত আক্ষেপ? কেন ফর্মহীনতার চূড়ায় থাকা সাব্বিরকে দলে ভেড়ানোর স্লোগান ওঠে, কেন তাঁর ওপর বার বার বিশ্বাস রাখেন ভক্তরা? অনেকগুলো কারণের মধ্যে একটি, ২০১৬ সালে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের মঞ্চে ঝড় তোলা এক ইনিংস। শেরে-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামের আকাশ-বাতাসে হুঙ্কার তোলা পরাজিত নায়কের এক সেঞ্চুরি।
২০১৬ সাল ক্যারিয়ারের সোনালী সময় পার করছেন তখন সাব্বির। ক্রিকেট পাড়ায় গুঞ্জন, বোলারদের ঘুম হারাম করার জন্য এসেছে সাব্বির নামের এক মূর্তিমান আতঙ্ক। ওমন জাত হিটার এর আগে আসেনি বাংলাদেশে। বিপিএলে বরিশাল বুলসের বিপক্ষে নিজের সেই জাতকে আরও প্রবলভাবে চেনালেন সাব্বির।
রান খরার মধ্যে দিয়ে চলছে বিপিএলের সেবারের আসর। তবে সেদিনই সেই খরার মাঝে রানের অবিরাম বৃষ্টি। প্রতিপক্ষ বরিশাল বুলসের ব্যাটাররা তাণ্ডব চালালেন, স্কোরবোর্ডে তুললেন ১৯২ রান। সাব্বির নিজের চোখের সামনে দেখলেন সে ঝড়। মনের মধ্যে কি একটা ক্ষুধা জেগে উঠল তাঁর। যা বুকের মধ্যে আগুন হয়ে জ্বলতে লাগল, আর স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়ল ব্যাটে।
১৯৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জেতা এক অর্থে অলীক স্বপ্ন। তবে যারা বড় হতে চায় তারা বড় স্বপ্নই দেখে। সাব্বির অসম্ভবকে সম্ভব করতে উঠে পড়ে লাগলেন, বাইশ গজে ব্রত নিয়েই নেমেছেন, আজ সবটা নিজের করে নেবেন। ব্যাটটাকে চার হাত চওড়া বানালেন, ক্রিকেট বলটাকে ফুটবলের মতো দেখলেন। আর মাঠ জুড়ে চলল তাঁর একক আধিপত্য।

ভাগ্য সবসময় সাহসীদের সাথেই থাকে। সাব্বিরেরও এদিন ছিল, ১৪ রানে জীবন পেলেন। এরপর আর পেছনে তাকানোর সময় কোথায়। ২৬ বলে ফিফটি, ৫৩ বলে সেঞ্চুরি, শেষমেষ ৬১ বলে ১২২ রানের ইনিংস। ব্যাট থেকে আসা নয় চার আর নয় ছক্কা এক বার্তা দিল, সাব্বির বড় নাম, এই সাব্বিরকে দমিয়ে রাখা যাবে না।
১৬তম ওভারে ফিরতে হলো তাঁকে। ড্রেসিংরুমে নিজের সাথে নিয়ে গেলেন জয়ের আশাটাও। ২৪ বলে ৩৪ রানের সমীকরণ মেলাতে ব্যর্থ হলো রাজশাহী কিংস। হারতে হলো মাত্র চার রানে। সাব্বির পরাজিতদের দলে নাম লেখালেন। যদিও সেই ম্যাচের নায়ক বানানো হলো তাঁকেই। এমন বিধ্বংসী ইনিংসের পর সাব্বিরকে সবাই চিনল ভিন্ন নামে।
২০১৬ সালটা সাব্বিরের জন্য ছিল এক আশীর্বাদের বছর, নিজেকে চেনানোর বছর। জাতীয় দলের জার্সিতেও আলো ছড়িয়েছিলেন। এশিয়া কাপে ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট, সারা বছর টি-টোয়েন্টিতে ১৬ ম্যাচ খেলে ৪৬৩ রান, হাই স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং, সে সময়ের প্রেক্ষাপটে বিশাল কিছু।
তবে পরিসংখ্যান ছাপিয়ে সাব্বির নজর কেড়েছিলেন ইমপ্যাক্ট দিয়ে। একা হাতে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার সামর্থ্য যে কেবল তাঁরই ছিল। ক্রিকেট ব্যাকরণের পাওয়ার হিটিং চ্যাপ্টারটা তাঁর আয়ত্বে ছিল শতভাগ। তখন চারদিকে একটাই আলোচনা হতো, সাব্বিরের তো বিশ্ব ক্রিকেটের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে হট কেক হওয়ার কথা।

তবে অধারাবাহিকতার আস্তরণে ঢাকা পড়া সাব্বির কেবল আফসোসটাই বাড়িয়ে গেছেন। নিজের সক্ষমতার প্রতি সুবিচার করে উঠতে পারলে হয়তো বিশ্ব ক্রিকেটের বড় নাম হতে পারতেন টি-টোয়েন্টির রমরমা যুগে। সে সব হয়নি, সময়ের স্রোতে হারিয়ে গেছেন, সাধারণ একজন হয়েই তিনি থেকে গেছেন দেশের ক্রিকেট আঙিনায়।
Share via:











