হারের বৃত্তে সাকিবরা

ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের তিনটি ভেন্যুতেই সকাল থেকেই আকাশ মেঘলা ও বৃষ্টি থাকায় আজকের ম্যাচ গুলো শুরু হয় কিছুটা দেরিতে। সকাল থেকে প্রবল বর্ষণের কারণে পঞ্চম রাউন্ডের প্রথম তিনটি ম্যাচ অনুষ্টিত হয় কার্টেল ওভারে। যে তিন ম্যাচে জয় পেয়েছে প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাব, লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ ও ওল্ড ডিওএইচএস স্পোর্টস ক্লাব।

বৃষ্টি বিঘ্নিত তিনটা ম্যাচেই রান উৎসব করেছেন ব্যাটসম্যানরা। প্রথম ইনিংসে ইমরানউজ্জামান, শামিম হোসেন, আনিসুল হক ইমন, মাহমুদুল হাসান ও রায়হান রহমানরা ঝড়ো ইনিংস খেলার পর দ্বিতীয় ইনিংসে রান পেয়েছেন জহুরুল ইসলাম ও ইমতিয়াজ হোসেন।

টানা তিন ম্যাচ জেতার পর গতকাল এবারের আসরে প্রথম হারের স্বাদ পাওয়া মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব আজও বড় ব্যবধানে হেরেছে। প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাবের কাছে ২২ রানে হেরে পয়েন্ট টেবিলের চারে নেমে গেছে সাকিব আল হাসানের দল। আর টানা চার ম্যাচ জিতে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থান মজবুত করেছে প্রাইম দোলেশ্বর।

৬ ওভারে ৭৮ রান তাড়া করতে নেমে যে রকম শুরু প্রয়োজন ছিল সেটা পায়নি মোহামেডান। ইনিংসের প্রথম ওভারেই শফিউল ইসলামের জোড়া আঘাতে রানের খাতা খোলার আগেই ফিরে যান দুই ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন ও শুভাগত হোম। এরপর সাকিব আল হাসান, নাদিফ চৌধুরি ও ইরফান শুকুর চেষ্টা করলেও সেটা জয়ের জন্য যথেষ্ট ছিল না।

১৪ বলে ২২ রান করেন সাকিব ও নাদিফের ব্যাট থেকে আসে ১১ বলে ১৬ রান। আর ৮ বলে ১১ রান করে অপরাজিত থাকেন শুকুর। প্রাইম দোলেশ্বরের বোলারদের ভিতর সবচেয়ে সফল ছিলেন শফিউল ইসলাম। ২ ওভারে ২২ রান দিয়ে ৩ উইকেট শিকার করেন এই পেসার। এছাড়া রেজাউর রহমান পেয়েছেন একটি উইকেট।

এর আগে টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নামা প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাবকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন দুই ওপেনার ইমরানউজ্জামান এবং শামিম হোসেন। মোহামেডানের বোলারদের উপর শুরু থেকেই চড়া হয়ে উদ্বোধনী জুটিতে মাত্র ২৩ বলে দুজন তুলে ফেলেন ৬৮ রান। এই দুই জনকে থামানোর কোন পথই যেন খুঁজে পাচ্ছিলেন না মোহামেডানের বোলাররা।

১৪ বলে ৪১ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলার পর সাকিব আল হাসানকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে আবু হায়দার রনির হাতে ইমরানউজ্জামান ধরা পড়লে ভাঙে এই জুটি। তবে এই জুটি ভাঙার পর দ্রুত আরো ৩ উইকেট হারিয়ে বেশি রান তুলতে পারেনি প্রাইম দোলেশ্বর। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৬ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ৭৮ রান সংগ্রহ করে প্রাইম দোলেশ্বর।

১৬ বলে ২৯ রান করে অপরাজিত থাকেন ওপেনার শামিম হোসেন। মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের পক্ষে আবু জায়েদ চৌধুরি রাহী দুটি ও সাকিব আল হাসান এবং রুয়েল মিয়া একটি করে উইকেট শিকার করেন।

দিনের আরেক ম্যাচে খেলাঘর সমাজ কল্যাণ সমিতিকে ১৬ রানে হারিয়েছে ওল্ড ডিওএইচএস স্পোর্টস ক্লাব। ১২১ রান তাড়া করতে নেমে খেলাঘর শুরুতে রাফসান আল মাহমুদ (৫) ও মেহেদী হাসান মিরাজকে (২) হারালেও তৃতীয় উইকেটে জহুরুল ইসলাম ও ইমতিয়াজ হোসেনের ব্যাটে ম্যাচে ফেরে তারা।

কিন্তু ৩৩ রান করে ইমতিয়াজ ফিরে গেলে ভেঙে যায় ৫৯ রানের জুটি। এরপর মাসুম খানকে নিয়ে জহুরুল ইসলাম চেষ্টা করলেও শেষের সমীকরণ মেলাতে পারেনি খেলাঘর। জহুরুল ইসলাম ৩৭ রান করে অপরাজিত থাকেন। এছাড়া মাসুম করেন ১৬ রান। ডিওএইচএসের পক্ষে দুটি উইকেট শিকার করেন রাকিবুল হাসান।

এর আগে টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে দলীয় ২৭ রানে ওপেনার রাকিন আহমেদ ৫ রান করে ফিরে গেলেও আনিসুল হক ইমনের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে দ্রুত গতিতে রান তুলতে থাকে ডিওএইচএস। তবে আগের ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি করা ইমনকে আজ বেশি দূর যেতে দেননি মেহেদী হাসান মিরাজ।

মিরাজের প্রথম শিকার হয়ে ইমন ফিরে যান ২৭ বলে ৪৪ রান করে। ইমন ফিরে গেলেও রানের গতি থামেনি ডিওএইচএসের। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে মাহমুদুল হাসান ও রায়হান রহমান ২৭ বলে যোগ করেন ৬১ রান। ২১ বলে ৩৭ রান করে রায়হান ফিরে গেলেও ১৪ বলে ২৯ রান করে অপরাজিত থাকেন মাহমুদুল।

নির্ধারিত ১৩ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ১২০ রান সংগ্রহ করে ওল্ড ডিওএইচএস স্পোর্টস ক্লাব। খেলাঘর সমাজ কল্যাণ সমিতির পক্ষে তিনটি উইকেট শিকার করেন খালেদ আহমেদ ও একটি উইকেট শিকার করেন মেহেদী হাসান মিরাজ।

দিনের আরেক ম্যাচে শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাবকে ২০ রানে হারিয়েছে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ। বৃষ্টির কারণে ১২ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে ৮২ রান তাড়া করতে নেমে নাবিল সামাদের বোলিং তোপে শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে শাইনপুকুর। একে একে ফিরে যান তানজিদ হাসান (০), রবিউল ইসলাম (১) তৌহিদ হৃদয় (০) ও সাব্বির হোসেন (৪)।

এরপর ১২ রান করে সুমন খান ফিরে গেলে ২৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে শাইনপুকুর। সেখান থেকে আর ম্যাচে ফিরতে পারেননি তারা। নির্ধারিত ৬ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ৬৭ রান সংগ্রহ করে শাইনপুকুর। রূপগঞ্জের পক্ষে তিনটি উইকেট শিকার করেন নাবিল সামাদ ও দুটি উইকেট শিকার করেন মুক্তার আলী।

এর আগে টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নামা রূপগঞ্জকে শুরু থেকেই চেপে ধরে শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাবের বোলাররা। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে তানভির ইসলামের প্রথম শিকার হয়ে আজমির আহমেদ (৫) ফিরে যাওয়ার পর সুমন খানের জোড়া আঘাতে ফিরে যান মেহেদী মারুফ (১) ও জাকির আলী (০)।

মাত্র ৯ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর সাব্বির রহমান ও সানজামুল ইসলামের ব্যাটে ঘুড়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে রূপগঞ্জ। তবে উইকেটে থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেনি কেউই। ১৬ রান করে সাব্বির ফিরে যাওয়ার পর ২৪ রান করে ফিরে যান সানজামুল।

এরপর শেষের দিকে সোহাগ গাজীর ৭ বলে ১৩ রান ও নাঈম ইসলামের ১৩ বলে ১৮ রানে ভর করে ১২ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ৮১ রান সংগ্রহ করে রূপগঞ্জ। শাইনপুকুরের পক্ষে সুমন খান তিনটি ও রবিউল হক দুটি উইকেট শিকার করেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

  • প্রাইম দোলেশ্বর-মোহামেডান

প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাব: ৭৮/৪ (ওভার: ৬; ইমরানউজ্জামান- ৪১, শামিম- ২৯* (জায়েদ- ১-০-৪-২, সাকিব- ২-০-২৭-১)

মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব: ৫৬/৪ (ওভার: ৬; সাকিব- ২২, নাদিফ- ১৬, শুকুর- ১১) (শফিউল- ২-০-২২-৩, রেজাউর- ২-০-১৯-১)

ফলাফল: প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাব ২২ রানে জয়ী।

  • ওল্ড ডিওএইচএস-খেলাঘর

ওল্ড ডিওএইচএস স্পোর্টস ক্লাব: ১২০/৪ (ওভার: ১৩; আনিসুল- ৪৪, রায়হান- ৩৭, মাহমুদুল- ২৯*) (খালেদ- ৩-০-২৪-৩, মিরাজ- ৩-০-৩৪-১)

খেলাঘর সমাজ কল্যাণ সমিতি: ১০৩/৫ (ওভার: ১৩; ইমতিয়াজ- ৩৩, জহুরুল- ৩৭*, মাসুম- ১৬) (রাকিবুল- ৩-০-১৬-২)

ফলাফল: ওল্ড ডিওএইচএস স্পোর্টস ক্লাব ১৬ রানে জয়ী।

  • রূপগঞ্জ-শাইনপুকুর

লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ: ৮১/৬ (ওভার: ১২; সাব্বির- ১৬, সানজামুল- ২৪, সোহাগ- ১৩*, নাঈম- ১৮*) (সুমন- ৩-০-২০-৩, রবিউল- ২-০-৯-২)

শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব: ৬৭/৬ (ওভার: ৬; মাহিদুল- ৩০, সুমন- ১২, রবিউল- ১৫) (নাবিল- ২-১-১-৩, মুক্তার- ৩-০-১৪-২)

ফলাফল: লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ ১৪ রানে জয়ী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link