ফ্রান্সেসকো আচের্বি! জীবন যেখানে ম্যাচের চেয়েও বড়

ফুটবলের সব গল্প গোল দিয়ে শুরু হয় না। কিছু গল্প শুরু হয় হাসপাতালের বিছানা থেকে, কেমোথেরাপির শূন্য চাহনি থেকে, কিংবা কোনো এক দীর্ঘ রাতে হুইস্কির বোতলের তলায় নিজের ব্যর্থতাকে ডুবিয়ে রাখার চেষ্টায়।

ফুটবলের সব গল্প গোল দিয়ে শুরু হয় না। কিছু গল্প শুরু হয় হাসপাতালের বিছানা থেকে, কেমোথেরাপির শূন্য চাহনি থেকে, কিংবা কোনো এক দীর্ঘ রাতে হুইস্কির বোতলের তলায় নিজের ব্যর্থতাকে ডুবিয়ে রাখার চেষ্টায়।

ফ্রান্সেসকো আচের্বির। আচেরবির গল্পটা ঠিক তেমনই। অবশ্য, ব্যর্থতা বা অপরাগতায় ডুবে থেকে তিলে তিলে শেষ হয়ে যাননি তিনি। তিনি ফিরেছেন ফিনিক্স পাখি হয়ে। ধংস্বস্তুপে দাঁড়িয়ে করেছেন পাল্টা আক্রমণের ঘোষণা। আর অসম সেই জীবন যুদ্ধে বিজয়ী যোদ্ধার নাম আচের্বে।

দুইবার ক্যান্সার তাকে গ্রাস করেছিল। নিজের বাবাকে হারিয়ে ভেঙে পড়েছিল ভিতরে ভিতরে। বিষণ্নতা ছিল তার সবচেয়ে কঠিন প্রতিপক্ষ — এমন প্রতিপক্ষ, যার কোনো অফসাইড নেই, নেই ফাউলের নিয়ম। সে যা চায় তাই করতে পারে। জীবনের মাঠে তখন আচের্বি শুধু রক্ষণেই ছিলেন না, তিনি ছিলেন পরাজয়ের কাছাকাছি, তার ওপর জীবনের রেফারি বারবার হাতের ঘড়িটা দেখছিলেন। এই যেন বেজে উঠল শেষ বাঁশি।

তবু, হার মানেননি। তবুও, একটা স্পট কিং থেকে যেন আলো ফিরে এলো। নিজেকে গড়ে তুললেন নতুন করে — ভাঙা হাড়, ক্লান্ত মন আর এক বুক অভিমান নিয়ে। ৩৭ বছর বয়সে ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় প্রথম গোল করলেন তিনি। শুধু গোলই নয় — ইন্টার মিলানকে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে তোলার সেই গোল। তাও আবার খোদ বার্সেলোনার মত অজেয় এক শক্তির বিপক্ষে। কে বলবে এই মানুষটা একদিন বেঁচে থাকাটাকেই চ্যালেঞ্জ মনে করতেন?

ফ্রান্সেস্কো আচের্বি শুধু একটি নাম নয় — তিনি একটি প্রতীক। যাঁরা অন্ধকারে থেকেও আলো খোঁজেন, তাঁরা জানেন এই নামের ওজন কতখানি। কারণ আচের্বি শুধু একটা ম্যাচ জেতেননি, শুধু জয় এনে দেওয়া একটা গোল করনেনি — তিনি জীবনকে জিতেছেন। তিনি সব জিতে ফেলেছেন। এর চেয়ে বড় কোনো জয় আর হতেই পারে না।

‘হ্যাপি এন্ডিং’ কে না চায় জীবনে! আর আচের্বি সেটা পেয়েছেন হাজারো সংগ্রাম আর নির্ঘুম রাতের বিনিময়ে। আচের্বি কেবল ইন্টার মিলানের হৃদয়ই নন। তিনি প্রতিটা মানুষের ভিতরের সেই সাহস যা বারবার ভেঙে পড়েও উঠে দাঁড়ায়।

আচের্বির এই জীবন অনুপ্রেরণার এক মহাসাগর। সেই মহাসাগরের এক ফোটা জল হল বার্সেলোনার কফিনের আরেকটি পেড়েক, মিলানের মায়াবী রাতের বহুল প্রতিক্ষীত সেই গোল। জীবন যেখানে বড়, গোল সেখানে খুবই ক্ষুদ্র। সব গল্প গোল দিয়ে যাচাই করতে নেই।

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Share via
Copy link