পাঁচ প্রভাবকের চ্যাম্পিয়ন ভারত

১১ বছরের শিরোপা খরা ঘুচেছে। ২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতার পর অপেক্ষা করতে হয়েছে ১৭ বছর। তরুণ রোহিত সেবার দেখেছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্ব। শিরোপা জয়ের জন্যে কি প্রয়োজন, তা নিশ্চয়ই শিখে নিয়েছিলেন। তবে সফলতা পেতে তাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে দীর্ঘকাল।

২০২৪ এ এসে এলো শিরোপা। তবে এতই কি সহজ ছিল যাত্রা? শিরোপা জয়ের কোন যাত্রা সহজ হয় না। ভারতের ক্ষেত্রেও হয়নি। তবে বেশ কিছু বিষয় টিম ইন্ডিয়ার এই শিরোপা জয়কে করেছে প্রভাবিত। গোটা দল হিসেবে পারফরম করা ছাড়াও, ব্যক্তিগত নৈপুন্যের জোরেই বহুকালের অপেক্ষার অবসান হয়েছে।

  • রোহিত শর্মার ইম্প্যাক্ট

অধিনায়ক রোহিত শর্মা টুর্নামেন্টে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এমন উদাহরণ খুঁজে পাওয়া দায়। তাছাড়া তিনি ব্যক্তিগত কলহকে প্রাধান্য দেননি। যোগ্য নেতার মতই দলকে বেঁধেছিলেন এক সুঁতোয়। তাছাড়া সময়ে সময়ে জুয়া খেলেছেন। যার অন্যতম উদাহরণ ফাইনালের মঞ্চে ১৮ তম ওভারেই জাসপ্রিত বুমরাহকে ব্যবহার করে ফেলা। এরপর কি ঘটেছে তা তো সবারই জানা।

তাছাড়া ব্যাটার রোহিত তো রীতিমত ভারত নামক ইঞ্জিনের জ্বালানি ছিলেন। ব্যাটিংয়ের শুরুতেই আগ্রাসী সব ইনিংসে তিনি দলকে এনে দিয়েছেন উড়ন্ত সূচনা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনাল ম্যাচ তো তিনি একাই এনে দিয়েছিলেন ভারতের পক্ষে।

  • জাসপ্রিত বুমরাহর মাস্টারক্লাস 

টুর্নামেন্ট সেরার পুরষ্কারটা উঠেছে জাসপ্রিত বুমরাহর হাতে। তার পারফরমেন্সকে মূল্যায়ন করবার এর থেকে ভাল কোন উপায় হতে পারেনা। প্রতিটা ম্যাচেই তিনি দলের পক্ষে উইকেট এনে দিয়েছেন।

হাড়কিপ্টে বোলিং করে গেছেন। দল যখন যা চেয়েছে তার কাছ থেকে পেয়েছে। ফাইনালে তার করা ১৮ তম ওভারটাই যে ভারতের দিকে ম্যাচ ঘুরিয়ে এনেছে। তারপর হাসিয়েছে শিরোপা জয়ের উল্লাসে।

  • ফ্লোটার অক্ষর প্যাটেল

অক্ষরের মূল দায়িত্বটাই ছিল বল হাতে। কিন্তু তার ব্যাটার সত্ত্বা ভারতের জন্যে ছিল এক আশীর্বাদ। দল ও পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাট করে গেছেন তিনি। কখনো দ্রুত রান তুলেছেন। কখনো আবার হাল ধরে ইনিংস বিল্ডআপ করেছেন।

বোলার কোটায় একজন কার্যকর অলরাউন্ডার পেয়ে ভারতের হয়েছে সোনায় সোহাগা। ফাইনালের মঞ্চেও ব্যাট হাতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ৪৭ রানের একটি ইনিংস খেলেছেন অক্ষর। সেমিফাইনালে আবার একাই গুড়িয়ে দিয়েছেন ইংরেজদের ব্যাটিং অর্ডার।

  • ইফেক্ট অব হার্দিক পান্ডিয়া

বিশ্বকাপের আগে নিদারুণ বাজে সময় পার করেছিলেন হার্দিক পান্ডিয়া। ব্যক্তিগত বা পেশাগত দিক থেকে তিনি ছিলেন সবচেয়ে দূর্বল এক অবস্থানে। তবুও তার উপর ভরসা রেখেছিল ভারতের টিম ম্যানেজমেন্ট। তার থেকে ভাল ফিনিশার পাওয়া সম্ভবত সম্ভব নয়। তিনি সেটাই প্রমাণ করেছেন প্রায় প্রতিটা ম্যাচে।

ব্যাট হাতে ছোট ছোট ক্যামিও খেলে প্রতিপক্ষের ক্ষততে লেপে দিয়েছেন মরিচ বাটা। আবার বল হাতেও সমান কার্যকর ছিলেন। উইকেট বাগিয়েছেন, রান আটকে রেখেছেন। ফাইনাল ম্যাচেও দলের জন্যে তুলে নিয়েছিলেন দু’টো গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। এনরিখ ক্লাসেনকে ফেরাতে না পারলে দৃশ্যপট হয়ত ভিন্ন হতো।

  • ব্লাস্টার সুরিয়া

‘স্কাই ইজ দ্য লিমিট’। কিন্তু ভারত দলের সুরিয়াকুমারের ছিল না কোন লিমিটেশন। ব্যাট হাতে বিধ্বংসী সব ইনিংস উপহার দিয়েছেন। তার ব্যাটে ভর করেই বড় সংগ্রহের দিকে এগিয়েছে। আবার কঠিন ম্যাচগুলোতে জয়ের সমীকরণ সহজ করে দিয়েছেন সুরিয়া। বৈরী উইকেটেও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।

দক্ষতার সবচেয়ে বড় উদাহরণ তিনি দিয়েছেন তো ফাইনালের মঞ্চে। না সেটা ব্যাট হাতে নয়। লং অফে ডেভিড মিলারের প্রায় অসম্ভব একটা ক্যাচ ধরেছেন তিনি। তাতে করেই ম্যাচ পুরোপুরি চলে যায় ভারতের ঝুলিতে। সেই ক্যাচকে চাইলেও তো এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। যে-কোন শিরোপা জয়ের পরিকল্পনায় সুরিয়ার ক্যাচটি থাকবে অনবদ্য ফিল্ডিংয়ের অনন্য উদাহরণ হয়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link