টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২৬ আর দুই মাসেরও কম সময় দূরে। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারতই এই টুর্নামেন্টে ফেভারিট হিসেবে নামছে, তবে শিরোপা ধরে রাখার পথে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ যে সামনে এসে দাঁড়িয়েছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই।
বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ হার ভারতের টিম কম্বিনেশন নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। সেই ম্যাচগুলোতেই স্পষ্ট হয়েছে দলের একাধিক দুর্বলতা, যার কেন্দ্রে আছেন অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়ক—সুরিয়াকুমার যাদব ও শুভমান গিল।
গিল টি–টোয়েন্টি দলে নিয়মিত ছিলেন না এশিয়া কাপের আগে। তবে সুযোগ পাওয়ার পরও নিজেকে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। ২৬ বছর বয়সী এই ডানহাতি ব্যাটার ১৪ টি ম্যাচে করেছেন মাত্র ২৬৩ রান, গড় নেমে এসেছে ২৩.৯০-এ। অন্যদিকে একসময় বিশ্বের এক নম্বর টি–টোয়েন্টি ব্যাটার সুরিয়াকুমার যাদব ২০২৫ সালে ভয়াবহ ফর্মহীনতায় ভুগছেন। ১৭ ম্যাচে তার রান মাত্র ২০১, গড় ১৪.৩৫—যা আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে মোটেই মানানসই নয়।

তবে বিশ্বকাপের এত কাছাকাছি সময়ে এই দু’জনকে বাদ দেওয়া বাস্তবসম্মত নয় বলেই মনে করছে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট। ফলে বড় কোনো পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা কম, অন্তত বিশ্বকাপের আগে। তবে টুর্নামেন্ট শেষ হওয়ার পর নতুন টি–টোয়েন্টি চক্রে গিল ও সুরিয়ার জায়গায় কারা আসতে পারেন, সেই আলোচনা ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে।
এই তালিকায় সবার আগে উঠে আসছে আয়ুষ মাত্রের নাম। মাত্র ১৯ বছর বয়সেই আইপিএল ২০২৫ সালে চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে নজর কাড়েন তিনি। দলের টপ অর্ডারে একমাত্র আগ্রাসী ব্যাটার হিসেবে নিজেকে আলাদা করে তুলে ধরেন মাত্রে। আইপিএলে সাত ইনিংসে ২৪০ রান করেন তিনি, প্রায় ১৮৯ স্ট্রাইক রেটে। এরপর সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফিতে ছয় ইনিংসে ৩২৫ রান করে চমকে দেন সবাইকে। গড় ১০৮-এর বেশি, সঙ্গে দুটি সেঞ্চুরি—এই পরিসংখ্যানই তার সম্ভাবনার প্রমাণ।
এরপর যাঁর কথা না বললেই নয়, তিনি বৈভব সুরিয়াভানশি। বয়স মাত্র ১৪, কিন্তু ইতোমধ্যেই ‘বেবি বস’ নামে পরিচিত হয়ে উঠেছেন ক্রিকেট দুনিয়ায়। আইপিএল ২০২৫-এ সাত ইনিংসে ২৫২ রান, স্ট্রাইক রেট ২০০-এর ওপরে। শুধু আইপিএল নয়, ইংল্যান্ড যুব দলের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ, অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ, রাইজিং স্টার টুর্নামেন্ট—সব জায়গাতেই ধারাবাহিক রান করেছেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। চলতি বছরে সব মিলিয়ে ছয়টি সেঞ্চুরি তার নামের পাশে।

কর্ণাটকের স্মরণ রবিচন্দ্রনও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় বড় নাম হতে পারেন। ২২ বছর বয়সী এই ব্যাটার ঘরোয়া ক্রিকেটে দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন। সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফিতে সাত ইনিংসে ৩১৯ রান করেছেন ৬৩.৮০ গড়ে। শুধু টি–টোয়েন্টিই নয়, রঞ্জি ট্রফিতেও সাত ইনিংসে ৫৯৫ রান করে দেখিয়েছেন লম্বা ইনিংস খেলার সক্ষমতা। তার ব্যাটিং পরিপক্বতা নির্বাচকদের নজর এড়ানোর নয়।
পাঞ্জাব কিংসের হয়ে খেলা প্রিয়ানশ আরিয়াও আলোচনায় রয়েছেন। আইপিএল ২০২৫-এ ১৭ ম্যাচে ৪৭৫ রান করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন ২৪ বছর বয়সী এই ওপেনার। এরপর দিল্লী প্রিমিয়ার লিগ, অস্ট্রেলিয়া ‘এ’ সফর এবং এশিয়া কাপ রাইজিং স্টারস টুর্নামেন্টেও সেঞ্চুরি করে ফর্ম ধরে রেখেছেন। বিশ্বকাপের পর ভারতের নতুন ওপেনার হিসেবে তার নাম জোরালোভাবেই সামনে আসছে।
মিডল অর্ডারের বিকল্প হিসেবে চোখ রাখা হচ্ছে আঙকৃষ রঘুবনশির দিকেও। কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে আইপিএল ২০২৫-এ ১১ ইনিংসে ৩০০ রান করেন তিনি। ২০ বছর বয়সী এই ব্যাটারকে ভবিষ্যতের জন্য ধরে রেখেছে কেকেআর, আর ভারতীয় নির্বাচকরাও তাকে তিন বা চার নম্বর পজিশনের সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে বিবেচনা করছেন।

সব মিলিয়ে, টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২৬-এর আগে বড় পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম হলেও, বিশ্বকাপ-পরবর্তী ভারতের টি–টোয়েন্টি দলে বড় রদবদল যে আসছে, তার ইঙ্গিত স্পষ্ট। গিল-সুরিয়াদের জায়গা নিতে তরুণদের লড়াই শুরু হয়ে গেছে—এখন দেখার বিষয়, কে নিজেকে সবচেয়ে ভালোভাবে প্রমাণ করতে পারেন।










