পরিচিত উপমহাদেশের কন্ডিশনে বিশ্বকাপ; ওয়ানডে সুপার লিগে অবস্থান তৃতীয়। তাই তো বড় এক স্বপ্ন নিয়েই ভারতে পা রেখেছিল বাংলাদেশ। স্বপ্নটা ছিল ইতিহাস গড়ার, স্বপ্নটা ছিল এবারের বিশ্বকাপকে স্মরণীয় করে রাখার। স্মরণীয় অবশ্য হয়েই গিয়েছে, তবে লজ্জা আর ব্যর্থতার বদৌলতে।
২০০৩ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ একটা ম্যাচও জেতেনি; ব্যাটারদের মধ্যে কেবল আশরাফুল একটা হাফসেঞ্চুরি করেছিলেন। তবু সেবারের চেয়ে এই আসরকেই বেশি ব্যর্থ মনে হচ্ছে। অথচ আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ জিতে সেরা চারে থাকার সমীকরণ খুঁজতে শুরু করেছিল টাইগাররা। হঠাৎ করেই এমন ছন্দপতন হলো কেন তাহলে – প্রশ্ন সবার মনেই।
উত্তর হিসেবে সবার আগে আসবে সাকিব আল হাসানের নাম। ব্যাটে বলে সদা উজ্জ্বল সাকিব এই বিশ্বকাপে ছিলেন ছায়া হয়ে। ইংল্যান্ডের মাটিতে ৬০০ এর বেশি রানা এই বাঁ-হাতি এবার একটাও ফিফটি করতে পারেননি; আফগানদের হিসেব বাদ দিলে বাকি চার ম্যাচে পেয়েছেন মাত্র চার উইকেট। অধিনায়কত্ব চলনসই হলেও তাঁর এমন পারফরম্যান্সই পিছনে টেনেছে বাংলাদেশকে।
এছাড়া নাজমুল শান্ত, তাওহীদ হৃদয়, তাসকিন আহমেদরা প্রচন্ডভাবে হতাশ করেছেন। পুরো বছর জুড়ে দুর্দান্ত খেলা এই ক্রিকেটাররা বিশ্ব মঞ্চে এসে ছায়া হয়ে গিয়েছেন। শান্তর অর্জন মোটে একটা পঞ্চাশ, হৃদয়ের তাও নেই। অন্যদিকে তাসকিনও দেখাতে পারেননি নিজের সেরা রূপ।
পুরো পেস ডিপার্টমেন্টই অবশ্য আশাহত করেছে। মুস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলামরা দুই একটা বিচ্ছিন্ন স্পেল বাদ দিলে বাকি সময় তাঁরা পারেননি ব্যাটারদের শক্ত পরীক্ষা নিতে। এছাড়া হাসান মাহমুদ ছিলেন পুরোপুরি ফ্লপ। এমনকি এই বিশ্বকাপে বোলার মিরাজের সার্ভিসও তেমন পায়নি দল।
ওপেনারদের কথা না বললেই নয়; কেবল ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে উড়ন্ত সূচনা পেয়েছিল সাকিবের দল। বাকি সব দিনই ব্যাটিংয়ে নামতে না নামতেই উইকেট হারিয়েছে – পাওয়ার প্লেতে উইকেট হারানোর দিক দিয়ে এই বিশ্বকাপে তাই শিষ্যে আছে টিম বাংলাদেশ।
তবে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে গিয়েছে বোধহয় মানসিকতার দিক দিয়ে। বড় দলগুলোর বিপক্ষে যেখানে আফগানিস্তান, নেদারল্যান্ডস চোখে চোখ রেখে লড়াই করছে; টাইগাররা সেখানে আগেই অসহায় আত্মসমর্পণ করছে। এমনকি চাপের মুহুর্তে স্নায়ু ধরে রাখার সামর্থ্যটুকুও দেখাতে পারেননি মিরাজ, মেহেদীরা।
পর্দার আড়াল থেকে আরেকটা ব্যাপারও বোধহয় ব্যর্থতার দিকে ঠেলে দিয়েছে বাংলাদেশকে, আর সেটা হলো অস্থিতিশীলতা। মাঠ কিংবা মাঠের বাইরে, কোথাও স্থির হতে পারেনি বাংলাদেশ দল। সবকিছু ঠিক থাকলে তামিম ইকবালের নেতৃত্বে বৈশ্বিক মঞ্চে খেলার কথা বাংলাদেশের, অথচ নানান নাটকীয়তায় তিনি দলেই নেই। সেই ইস্যুতে বড়সড় ধাক্কা খেয়েছিল ক্রিকেটাঙ্গন।
আবার কে কোন পজিশনে ব্যাটিং করবেন সেটা নিয়েও অস্থিরতা ছিল। শান্ত কখনো তিনে, কখনো চার; মিরাজ টপ, মিডল, লোয়ার সবখানেই কিংবা হৃদয় সাত নম্বরে – কত পরীক্ষা নিরীক্ষা এই বিশ্বকাপেই করেছে চান্দকা হাতুরুসিংহের ম্যানেজম্যান্ট।
ছয় ম্যাচে পাঁচ হার, বাকি আছে আরো তিন ম্যাচ। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশন এখানেই শেষ, তবু মুখোমুখি হতে শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। কি জানি, টানা পাঁচ হারে বিপর্যস্ত বাংলাদেশের জন্য হয়তো আরো অনেক লজ্জা অপেক্ষা করছে এসব দিনেও।