সম্ভবত পরাজয়ের আগেই পরাজিত হওয়ার একটা ভীতি ভর করেছিল ভারত দলে। ঠিক সে কারণেই হয়ত দূর্দান্ত ছন্দে থাকা দলটাও খেই হারিয়েছে। শিরোপা জেতার সুবর্ণ সুযোগটা হাতছাড়া হয়েছে অপ্রতিরোধ্য ভারত দলের। তবে এমন ঘটনা অবশ্য নতুন নয়।
এক বিংশ শতাব্দীতে এখন অবধি ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ ফাইনাল জেতার রেকর্ড অধিনায়ক হিসেবে দখল করেছেন মোহাম্মদ আজাহারউদ্দিন । অন্তত তিন দলের ওয়ানডে টুর্নামেন্টের ফাইনাল মিলিয়ে তিনি ১১ ম্যাচ জিতেছেন। তার পরের অবস্থানেই রয়েছেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। সাত খানা ফাইনাল জিতেছেন তিনি অধিনায়ক হিসেবে।
ওয়ানডে বিশ্বকাপ ও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ছাড়াও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শিরোপা রয়েছে ধোনির দখলে। ধোনিই অবশ্য একমাত্র অধিনায়ক, যার দখলে বৈশ্বিক আসরের সবগুলো ট্রফি রয়েছে। এছাড়া ভারতের হয়ে ফাইনাল হারের রেকর্ড সবচেয়ে বাজে সৌরভ গাঙ্গুলির অধীনে।
১৪ ম্যাচের বিপরীতে ভারতের জয় একটিতে। স্রেফ ধোনিই সম্ভবত পেরেছিলেন দলের মধ্যে থেকে ফাইনালের ভীতি দূর করতে। এছাড়া আজহারউদ্দিনকেও কোন কোন ক্ষেত্রে সফল বলা চলে। তবে বড় কোন শিরোপা এনে দিতে তিনি সক্ষম হননি। সেই মানদণ্ডে অবশ্য তাকে সফল বলাও চলে না। তাছাড়া তার বিরুদ্ধে নানা সময়ে ফিক্সিংয়ের গুঞ্জন প্রবল হয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেট পাড়ায়।
ফাইনালে পরাজয়ের ভীতি থেকে এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি ভারত দল। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া দল ২০২৩ বিশ্বকাপ ফাইনালেও নিজেদের দৃঢ় মানসিকতার উৎকৃষ্ট উদাহরণই স্থাপন করল। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে দাপট দেখিয়ে বেড়ানো রোহিতের দলের বিপক্ষে রীতিমত পরাজয়ের চাপটা দূরে ফেলে দিয়েছিল প্যাট কামিন্সের দল।
৪৭ রানে তিন উইকেট হারিয়েও ভরকে যায়নি অজিরা। স্নায়ুচাপ কাবু করতে পারেনি ট্রাভিস হেড কিংবা মার্নাস লাবুশেনকে। আর সেখানেই বরং পিছিয়ে পড়ে ভারত। জয়ের তীব্র তৃষ্ণায় একটা পর্যায় পরাজয়ের নিশ্চুপ ভীতি গেঁথে যায় হৃদয় গহীনে।
তখন আর হারতে চায় না কেউ। তবে হারতে না চাওয়া মানে এই নয় যে জিততে চাইছে। তারা বরং পরাজয়ের সময়ের দূরত্ব বাড়াতে চায়। রোহিত শর্মাও ১৯ নভেম্বর ফাইনালে সেটাই করবার চেষ্টা করেছেন। তিনি একটা পর্যায় রানের গতি কমানোর জন্যে রক্ষণাত্মক ফিল্ড সেটআপ করেছেন। এমনকি স্পিনারদের বোলিং স্পেলে একজন স্লিপ ফিল্ডার রাখার কথা চিন্তাও করেননি।
সেখানেই আসলে ফুটে ওঠে পরাজয়ের আগেই পরাজয়ের ভীতি। যখনই রোহিত শর্মা আগ্রাসী এক ইনিংস খেলে আউট হয়ে ফিরলেন, তখনই ভারত যেন নিজেদের পরাজয়ের করুণ সুরের মৃদু আওয়াজ শুনতে শুরু করেছিল। সময় যত গড়িয়েছে, সে আওয়াজ হয়েছে প্রবল। মস্তিষ্ক জুড়ে তখন ভয়ের আনাগোনা। এরপর যা হওয়ার ঠিক তাই হয়েছে।