জাকির-সাদমান, স্বাস্থ্যকর এক প্রতিযোগিতা

করতালিতে অভিবাদন জানালেন সাদমান ইসলাম। সতীর্থ জাকির হাসান যে কিছুক্ষণ আগেই খেলেছেন দারুণ একটি শট। সেই শটের প্রশংসাতেই হাততালি দিয়েছেন সাদমান। অথচ এই দু’জনের মাঝে কিন্তু নিরব এক লড়াই চলমান। সেই লড়াই সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যকর। নিজেদেরকে ছাপিয়ে যাওয়ার লড়াই। জাতীয় দলের একাদশে জায়গা পাওয়া কিংবা থিতু হওয়ার লড়াই।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের আগে দুপুরে অনুশীলন করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। দলে থাকা প্রতিটা সদস্যই নিজেদেরকে ঝালিয়ে নিয়েছেন নেট অনুশীলনে। ব্যতিক্রম নন জাকির হাসান কিংবা সাদমান ইসলাম। এই দুই ক্রিকেটারও নিজেদের প্রস্তুতি সেরে নিয়েছেন।

কিছুদিন আগেই শেষ হওয়া জাতীয় ক্রিকেট লিগে সাদমান হয়েছেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। ৪৫৩ রান নিয়ে তিনি রয়েছেন মুমিনুল হকের ঠিক পেছনে। অন্যদিকে জাকির হাসানও যথেষ্ট ধারাবাহিকভাবে পারফরম করেছেন এবারে এনসিএলে। জাকিরের ব্যাট থেকে এসেছে ৪২২ রান।

ঠিক এরপরই আয়োজিত হয়েছে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ। স্বাভাবিকভাবেই তামিম ইকবাল ও লিটন দাসের অবর্তমানে, ঘরোয়া ক্রিকেটের সেরা পারফরমারদেরই দেওয়া হবে সুযোগ। যদিও লিটন টেস্ট ক্রিকেটে ওপেন করেননা। সে অবশ্য ভিন্ন আলাপ।

সেরা পারফরমার হিসেবেই দলে জায়গা করে নিয়েছেন জাকির ও সাদমান। তবে টিম কম্বিনেশনের কথা মাথায় রেখে দুইজনকে একই সাথে রাখা যাচ্ছে না একাদশে। ঠিক এখানটায় সেই স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগাতির সূত্রপাত। এই দুই ক্রিকেটার বেশ ভাল করেই জানেন, যে একজনের অবর্তমানেই আরেকজনের মিলবে সুযোগ। তবুও যেন নেই কোন বিদ্বেষ।

এমনকি দ্বিতীয় টেস্টেও সাদমান একাদশে সুযোগ পাবেন না। এমন বার্তাই দিয়েছে বাংলাদেশের দলগত অনুশীলন। আগের ম্যাচে একাদশে থাকা ব্যাটাররা এদিন শুরুতেই ব্যাটিং অনুশীলন করেছেন। তবে সাদমানকে নিজের ব্যাটিং অনুশীলনের জন্যে অপেক্ষা করতে হয়েছে। তবে তাতে অবশ্য সাদমান দলছুট হননি। বরং তিনি মাঝে মধ্যেই সতীর্থদের প্রশংসা করেছেন। অভিবাদনের সুরে হাততালি দিয়েছেন।

সাদমান ইসলাম হয়ত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এই যাত্রায় সাদা পোশাকে বাইশ গজে নামবেন না। তবুও একেবারে মৃদু এক আশা কিন্তু জীবত রয়েছে। সে আশার আলো জ্বালিয়েছেন খোদ জাকির নিজেই। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে দুই ইনিংসেই একই ধরণের বলে আউট হয়েছেন জাকির।

দুইবারই তাকে আউট করেছেন কিউইদের বা-হাতি স্পিনার এজাজ প্যাটেল। অফ স্ট্যাম্পের বাইরে পড়ে ভেতরের দিকে বাঁক খাওয়া বলেই পরাস্ত হয়েছেন জাকির। প্রথম ইনিংসে তিনি বোল্ড আউট হয়েছেন। অফ স্ট্যাম্পের মাথায় লেগেছিল সেই বল।

দ্বিতীয় ইনিংসে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েছিলেন জাকির, সেই একই ধরণের ডেলিভারিতে। এই জায়গায় বাংলাদেশের দুশ্চিন্তা হয়ত মাথা চাড়া দিতে পারে। আর সেক্ষেত্রে সাদমান ইসলামকে দেখা যেতে পারে একাদশে। যদিও জাকির নিজের সেই দূর্বলতা ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা ইতোমধ্যেই করেছেন। এমনকি সিলেটের দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি আউট হওয়ার পর, দীর্ঘক্ষণ আউটার স্টেডিয়ামে অনুশীলন করেছেন।

তাছাড়া জাকির বেশ ধারাবাহিক একজন ব্যাটার। সিলেট টেস্টে শুরুটা ভাল করলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। তাতেই অন্তত তার উপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলতে চায় না টিম ম্যানেজমেন্ট। চান্দিকা হাতুরুসিংহে তাইতো অনুশীলনে বাড়তি মনোনিবেশ করেছেন জাকিরের প্রতি। দিয়েছেন টোটকা। এখন দেখবার বিষয় সেই টোটকা কতটুকু জাকির কাজে লাগাতে পারেন, মিরপুর টেস্টে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link