স্পিন স্বর্গে এক দিনে ১৫ উইকেটের পতন

মিরপুরের রহস্যময় উইকেট নিয়ে ক্রিকেট পাড়ায় আলোচনাটা কম হয় না। বাংলাদেশের হোম অব ক্রিকেট নামে পরিচিতি। অথচ এখন এই মাঠের উইকেটের আচরণেই ধাতস্থ হতে পারেননি বাংলাদেশি ক্রিকেটাররাই। নিজেদের পাতা ফাঁদে তাই ধরাশয়ী হতে হয় প্রায়শই।

সিলেট টেস্ট জয়ের পর টাইগারদের চোখ ছিল মিরপুর টেস্ট জিতে প্রথমবারের মতো নিউজল্যান্ডকে সিরিজ হারানো। তবে সেই লক্ষ্যের পথে মিরপুর টেস্টে প্রথম ইনিংসে ১৭২ রানে গুঁটিয়ে গেছে বাংলাদেশ। স্পিনস্বর্গ মিরপুরে তার বিপরীতে নিউজিল্যান্ডও অবশ্য শুরুটা ভাল করতে পারেনি। প্রথম দিন শেষে ৫৫ রানের মাঝেই সাজঘরে ফিরে গেছেন ৫ কিউই ব্যাটার।

মেঘলা মিরপুরে ফ্লাডলাইটের আলোয় এ দিন টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। শুরুতে দুই ওপেনার মাহমুদুল হাসান ও জাকির হাসানের ব্যাটিংয়ে দারুণভাবেই এগিয়েছিল বাংলাদেশের ইনিংস। তবে ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারের পর দুই প্রান্ত থেকে কিউই স্পিনাররা বোলিংয়ে আসতেই বদলে যেতে থাকে দৃশ্যপট।

১১তম ওভারে এসে মিশেল স্যান্টনারের বলে আক্রমণাত্মক শট খেলতে চেয়েছিলেন জাকির হাসান। কিন্তু তা ধরা দেয় কেন উইলিয়ামসনের হাতে। এর পরের ওভারেই এজাজ প্যাটেলের বলে টম ল্যাথামের হাতে ধরা পড়েন ৪০ বলে ১৪ রান করা আরেক ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়।

চারে নামা মুমিনুল হকও ইনিংস লম্বা করতে পারেননি। ১৪তম ওভারে ব্যাকফুট ড্রাইভ খেলতে গিয়ে টম ব্লান্ডের গ্লাভসে বন্দী হন তিনি। মমিনুলেত পত ব্যর্থ হন নাজমুল হোসেন শান্তও।  স্যান্টনারকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লুর ফাঁদে পড়েন তিনি। আর এতেই প্রথম সেশনে ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

এরপর আর ফিরে আসত পারেনি বাংলাদেশ। অবশ্য দ্বিতীয় সেশনে প্রাথমিক ধাক্কা মুশফিকুর রহিম ও শাহাদাত হোসেনের জুটিতে কিছুটা হলেও কাটিয়ে ওঠে বাংলাদেশ। ৫৭ রানের জুটি গড়ে এগোতে থাকে বাংলাদেশের ইনিংস। তবে এখানেই একটি কাণ্ড ঘটিয়ে বসেন মুশফিক। ৪০.৪ ওভারে ‘অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড’ আউট হন মুশফিক। কাইল জেমিসনের করা বলটা ব্যাটে লেগে বেরিয়েই যাচ্ছে স্ট্যাম্পের অনেকটা দূরত্বে। কিন্তু কী ভেবে বলটা হাত দিয়ে ধরেন মুশফিক। আর এরপরই ব্যতিক্রমধর্মী আউটের শিকার হন মুশফিক। বাংলাদেশের ইনিংসে নতুন করে ধ্বসের শুরুও হয় তখন।

মুশফিক আউট হওয়ার পর ৬৮ রান তুলতেই শেষ ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। শাহাদাৎ হোসেন দীপু উইকেটে থিতু হয়ে গিয়েছিলেন। ১০০ টা বলে পেরিয়েছিলেন। তবে ইনিংসটা আর বড় করতে পারেননি। ৩১ রানেই শেষ হয় তাঁর ইনিংস। এরপর মিরাজ, নুরুলরাও বাংলাদেশকে তেমন পথ  দেখাতে পারেনি। ফলত, ১৭২ রানেই সব কটি উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ।

মিরপুরের স্পিন সহায়ক উইকেটে এই লক্ষ্যও যে সহজ হবে না, তা আঁচ করা গিয়েছিল উইকেটের ধরন দেখেই। আর সেই ভাবনাতে অধিনায়ক শান্ত শুরুটা শরিফুল দিয়ে করালেও পরের সব ওভার করিয়েছেন তাইজুল আর মিরাজকে দিয়ে।

এ দুই স্পিনার অধিনায়কের সেই আস্থার প্রতিদানও দেন দ্রুতই। ডেভন কনওয়েকে ফিরিয়ে কিউই ইনিংসে আঘাত হানেন মিরাজ। এরপর তাইজুলও বল হাতে তুলে নেন উইকেট। এ দুই স্পিনারের স্পিনবিষে ২০ রানে ১ উইকেট উইকেট হারানো পরের ৩৫ রান তুলতেই আরো ৪ উইকেট। এরই মধ্যে ফিরে গেছেন কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়াসনও।

মিরপুর টেস্টের প্রথম দিনের ৯০ ওভারের কোটাও পূরণ হয়নি। এরই মধ্যে ১৫ টা উইকেট তুলে নিয়েছে দুই দলের বোলাররা। উইকেটের ধরন যা বলছে, তাতে ৫ দিন নয়, তিন দিনেই হতে পারে এ ম্যাচের ফল ভাগ্য। তবে সেই ভাগ্য কোনদিকে ঝুঁকে সেটিই আপাতত দেখার পালা।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link