পাওয়ার প্লে-তেই পঙ্গু বাংলাদেশ!

পুরোনো সমস্যার জালেই আটকা বাংলাদেশ। সেখান থেকে উত্তরণের পথটাও যেন জানা নেই তাদের। পাওয়ার প্লে-র ব্যর্থতাই যে বিশ্বকাপ দুঃস্মৃতি সঙ্গী হয়েছিল টাইগারদের, সেখান থেকে এখনও বের হতে পারেছে না তাঁরা। বারবার পাওয়ার প্লে-তেই খেই হারিয়ে ফেলছে নাজমুল হোসেন শান্তরা। সিংহভাগ ম্যাচে এই শুরুর ধাক্কাই যে বাংলাদেশকে ছিটকে দিচ্ছে, তা এখন বলাই বাহুল্য।

ডানেডিনে টসে জিতেছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। এবার নেলসনে জিতলেন কিউই অধিনায়ক টম ল্যাথাম। পেস মুভমেন্টের আশায় কিউই কাপ্তানেরও এবার টসে জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত। যদিও বাংলাদেশ অধিনায়ক শান্ত টসের সময়ই জানালেন, টসে জিতলে তিনি ব্যাটিং-ই নিতেন।

টস তাই বাংলাদেশের জন্য ভাগ্য নির্ধারক না হলেও ঠিকই কিউই পেসাররা কন্ডিশনের ফায়দা তুলেছে দারুণভাবে। অ্যাডাম মিলনে আর জ্যাকব ডাফির বোলিং তোপে প্রথম পাওয়ার প্লে-তেই ৪৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ।

ডাফির পেসের সামনে শুরু থেকেই অস্বস্তিতে ভোগা এনামুল মাত্র ২ রানে ফেরেন মিলনের বলে। আর নাজমুল হোসেন শান্ত ও লিটন দাস ধরা দিয়েছেন ডাফির বলে, অনেকটা সফট ডিসমিসালে। বাংলাদেশ ইনিংসের ভঙ্গুরতার শুরু সেখান থেকেই।

পাওয়ার প্লে-তে এমন তাসের ঘরের মতো ব্যাটিং লাইনআপ ভেঙ্গে পড়া অবশ্য বাংলাদেশের জন্য নতুন কিছু নয়। পুরো বছর জুড়েই এই দশার কোনো পরিবর্তন নেই। টপ অর্ডার ব্যাটাররা কখনও প্রতিপক্ষের শুরুর পেসে নুয়ে পড়ছেন, নয়তো স্পিনঘূর্ণির কাছে মাথা নত করছেন। ফলাফল, একই। পাওয়ার প্লে-র ব্যর্থতা থেকে বেরই হতে পারছে না বাংলাদেশ।

চলতি বছরের পরিসংখ্যানটাই সামনে টেনে এনে যাক। এ বছরে বাংলাদেশ ওয়ানডে খেলেছে ২৯ টি। আর এই ২৯ ইনিংসে তাঁরা প্রথম ১০ ওভারে উইকেট হারিয়েছে মোট ৫৫ টা। এ সময়ে তাদের ব্যাটিং গড় ছিল ২৩.৬০। এবারের বিশ্বকাপ খেলা দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের চেয়ে এই চিত্রটা খারাপ শুধু শ্রীলঙ্কারই। ৩১ ম্যাচে প্রথম পাওয়ার প্লে-তে তাঁরা উইকেট হারিয়েছে ৬১ টা। ব্যাটিং গড় ২৩.৫৯।

পাওয়ার প্লে-তে শুধু ব্যাটিং ধ্বস নয়, রান তোলার গতিতেও চলতি বছরে বাংলাদেশ রয়েছে বেশ পিছিয়ে। মারকাটারি ক্রিকেটের যুগে তাঁরা এ বছর পাওয়ার প্লে কাটিয়েছে ৭৪.৬০ স্ট্রাইকরেটে। ভারত বিশ্বকাপ খেলা ১০ দলের মধ্যে বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে শুধু আফগানিস্তান। ২০ ম্যাচে প্রথম ১০ ওভারে তাঁরা রান তুলেছে ৬৭.৫৮ ব্যাটিং স্ট্রাইকরেটে।

পাওয়ার প্লে-তে বাউন্ডারি বের করার দিক দিয়েও বাংলাদেশ অবস্থান করছে রীতিমতো তলানিতে। এ বছরে ন্যূনতম ২৫ ম্যাচ খেলা দলগুলোর মধ্যে প্রথম পাওয়ার প্লে-তে সবচেয়ে কম বাউন্ডারি বের করতে পেরেছে বাংলাদেশ। ২৯ ম্যাচে ১৮৮ টা চারের পাশাপাশি মাত্র ১৪ টা ছক্কা হাঁকাতে পেরেছে বাংলাদেশি ব্যাটাররা। চলতি বছরে পাওয়ার প্লে-তে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ বাউন্ডারি বের করার দিক দিয়ে সবার শীর্ষে রয়েছে ভারত। ৩৪ ম্যাচে ২৮৫ চারের বিপরীতে ৬৩ টা ছক্কা হাঁকিয়েছে তাঁরা।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link