তিনি যখন সান্তোসে ছিলেন, তখন তাঁকে ভাবা হতো কিং পেলের উত্তরসূরী। যখন বার্সেলোনায় আসলেন তখন তাঁকে মনে করা হয়েছিল লিওনেল মেসির পর তিনিই হবে বার্সার রাজা। অত:পর পিএসজির জার্সি গায়ে সিংহাসনে বসতে গিয়েও পারলেন না—নেইমার জুনিয়রের পুরো ক্যারিয়ারের গল্পটা এমনই। যুবরাজ থেকে তাঁর কখনোই রাজা হওয়া হয়নি, অথচ রাজার সব গুণ ছিল এক জোড়া পায়ে।
ইউরোপীয় ফুটবলে আসার আগেই বিশ্বজুড়ে খ্যাতি পেয়েছিলেন নেইমার, সব ফুটবলপ্রেমীর কাছে খবর চলে গিয়েছিলেন নতুন একটা নক্ষত্র উঠে আসছে ব্রাজিলের ক্লাব থেকে। লিওনেল মেসির সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যখন তিনি ব্লাউগানা জার্সিতে নেমেছিলেন তখন তাঁকে ঘিরে সৃষ্ট সব প্রত্যাশা ফুলে ফেঁপে উঠেছিল। কিন্তু এসব এখন বহুদূরের অতীত।
ব্রাজিলিয়ান এই ফরোয়ার্ড এখন ফুটবলের মূল ধারা থেকেই বিচ্ছিন্ন, ইউরোপের আলো ঝলমলে দুনিয়া ছেড়ে চলে গিয়েছেন সৌদি প্রো লিগে। কিন্তু সেখানেও খেলার মাঠে থাকতে পারলেন না। এসিএলের ইনজুরিতে পড়ে ছিটকে গিয়েছেন লম্বা সময়ের জন্য, খুব সম্ভবত ২০২৪ কোপা আমেরিকাতে সেলেসাও জার্সিতে দেখা যাবে না তাঁকে।
বারবার ইনজুরি এই তারকার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় শত্রু, এর থাবা থেকে বাঁচতেই তিনি উপরের সারির লিগগুলোতে খেলেননি। কিন্তু চোট নিস্তার দেয়নি, সেখানে গিয়েও হাজির হয়েছে। ফুটবলে তাঁর ভবিষ্যৎ তাই একেবারে অন্ধকার প্রায়।
এমনিতেও ক্লাব ফুটবলে বড় কিছু জেতার সম্ভাবনা ছিল না আর, তবু ভক্ত-সমর্থকদের বিনোদন দিতে পারতেন; সেটাও এখন সুদূর কল্পনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। একসময় মেসি, রোনালদোর পর তৃতীয় সেরা ফুটবলারের আসনে ছিলেন সাবেক বার্সা সেনসেশন।
এখনও ক্যারিয়ারের পরিসংখ্যান ঘাঁটলে মনে হবে সত্যিই প্রজন্মের অন্যতম সেরা বুঝি তিনি। কিন্তু তাঁর মাঠে ফেরার প্রতীক্ষায় থাকা কোটি সমর্থক জানে পরিসংখ্যান মিথ্যে, নেইমার আসলে নিজের প্রতিভার তুলনায় কিছুই অর্জন করতে পারেননি।
ব্যালন ডি’অর জেতেননি, বিশ্বকাপ জেতেননি এমনকি কোপা আমেরিকার স্বাদও পাননি তিনি। আবার পিএসজিকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতানোর কথা দিয়েও সেটা রাখতে পারেননি – ব্রাজিলের জার্সিতে ঋণ পরিশোধের সুযোগ পাবেন কি না সম্ভাবনা এখন ক্ষীণ, বাকি স্বপ্ন অপূর্ণ-ই থাকছে।
অলিম্পিক জয়, ইউরোপে না থেকেই ব্যালনের সেরা দশে জায়গা করে নেয়া, ২০১৫ চ্যাম্পিয়ন্স লিগে অতিমানবীয় পারফরম্যান্স – লোকে কিছুই মনে রাখেনি। মনে রেখেছে কাতার আর রাশিয়াতে কান্নায় ভেঙে পড়ার দৃশ্য, মনে রেখেছে ডিফেন্ডারের কড়া ট্যাকলে মাটিতে শুয়ে কাতারে থাকা একটা দুর্ভাগাকে।
দুর্ভাগা বটে; ৩২ বছর বয়সে যখন ফুটবল রাজ্য শাসন করার কথা ছিল নেইমার দ্য সান্তোস জুনিয়রের, যখন কথা ছিল প্রজন্ম ছাপিয়ে সর্বকালের সেরাদের তালিকায় নিজের নাম লেখানোর, তখন এই মানুষটাকে বিছানায় শুয়ে ভাবতে হচ্ছে – ‘ভবিষ্যৎ বলে আদৌ কিছু আছে আমার’?