নব্বই দশক ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য খুবই আলোচিত একটা সময় ছিল। দলের মধ্যে অনেক উত্থান পতন হয়েছে। কালক্রমে সেখান থেকে শচীন টেন্ডুলকার, সৌরভ গাঙ্গুলি কিংবা রাহুল দ্রাবিড়ের মত কিংবদন্তি বের হয়ে এসেছেন।
তবে, যতটা আলো বাইরে থেকে দেখা যায় – তারই নিচে আছে ততটাই অন্ধকার। অনেক প্রতিভাবান ক্রিকেটারই এই সময় পথ হারিয়েছেন। জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েও নব্বই দশকে তাঁরা থিঁতু হতে পারেননি আন্তর্জাতিক ময়দানে। তাঁদের নিয়েই আমাদের এবারের আয়োজন।
- দেবাশিষ মোহান্তি
উড়িষা থেকে ভারতীয় জাতীয় দলে খেলা প্রথম ক্রিকেটার তিনি। ডান হাতি পেসার। কানাডার টরন্টোতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিপক্ষে বিধ্বংসী এক স্পেলের জন্য বিখ্যাত তিনি। অভিষেক হয় ১৯৯৭ সালে। খেলতে পারেন মাত্র ২০০১ সাল পর্যন্ত। দুই টেস্টে চারটি ও ৪৫ টি ওয়ানডেতে ৫৭ উইকেট পান। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপও খেলেছেন।
ঘরোয়া ক্রিকেটে তিনি বিখ্যাত ছিলেন। দুলীপ ট্রফির এক ইনিংসে ১০ উইকেট নেন। ৪৬ রান দিয়ে প্রতিপক্ষের সবগুলো উইকেট তুলে নেন। তিনি ২০১১ সাল থেকে সাত বছর উড়িষা রাজ্যদলের কোচিং করান। এখন তিনি বোর্ডে কাজ করেন নির্বাচক হিসেবে।
- আবে কুরুভিল্লা
বিরাট শরীর তাঁর। উচ্চতা ছিল ছয় ফিট পাঁচ ইঞ্চি, ডান হাতি পেসার। নি:সন্দেহে ভারতের ইতিহাসেরই সবচেয়ে লম্বা খেলোয়াড়দের একজন তিনি। কেরালা থেকে এসেছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অভিষেক। বার্বাডোজে তাঁর পাঁচ উইকেট নেওয়ার স্পেলটা খুবই বিখ্যাত। ভারতের প্রথমদিককার স্পিডস্টার তিনি, গতির জন্য ছিলেন বিখ্যাত।
মাত্র এক বছর স্থায়ী হয় তাঁর ক্যারিয়ার, ১৯৯৭ এ শুরু – সে বছরই শেষ। খেলেন, ১০ টেস্ট ও ২৫ ওয়ানডে। সব ফরম্যাট মিলিয়ে পান ৫০ টি উইকেট। তাঁকে আরেকটু সুযোগ না দেওয়াটা বিস্ময়কর। নিন্দুকেরা বলেন, দলীয় রাজনীতির জন্যই নাকি তাঁকে দলে স্থায়ী হতে দেওয়া হয়নি।
অবসর নেওয়ার পর তিনি ক্রিকেটের সাথেই আছেন। তিনি মুম্বাইয়ের ডিওয়াই পাতিল স্টেডিয়ামের অ্যাকাডেমির পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এখন তিনি বোর্ড অব কনট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়ার (বিসিসিআই) নির্বাচক প্যানেলের সদস্য।
- সুনীল যোশি
সাবেক ভারতীয় বাঁ-হাতি স্পিনিং অলরাউন্ডার। তিনি ক্রিকেট বিশ্বে এখন পরিচিত মুখ। বোর্ডের নির্বাচক প্যানেলের সদস্য তিনি। এর আগে বাংলাদেশ দলের স্পিন বোলিং কোচের দায়িত্বে ছিলেন। রঞ্জি কোচিংয়েও সমৃদ্ধ ইতিহাস আছে তাঁর।
তাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার মাত্র পাঁচ বছরের – ১৯৯৬ থেকে ২০০০ সাল অবধি। সেখানে তিনি টেস্টে ৪১ টি ও ওয়ানডেতে ৬৯ টি উইকেট পান। লোয়ার মিডল অর্ডারে ব্যাটসম্যান হিসেবে ছিলেন কার্যকর।
- দোদ্দা গনেশ
কর্নাটকের ক্রিকেটার। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১৯৯৭ সালে অভিষেক হয়। ডান হাতি এই পেসারের প্রথম শিকার ছিলেন স্বয়ং গারি কার্স্টেন। তবে, ক্যারিয়ার খুব লম্বা হয়নি। চারটি টেস্ট খেলে নিতে পেরেছিলেন পাঁচ উইকেট। অন্যদিকে, একটি ওয়ানডেতে উইকেট একটিই। সবগুলো ম্যাচই ১৯৯৭ সালে খেলা।
২০০৭ সালে তিনি অবসরে যান। এরপর বিগ বসের কান্নাড়া ভার্সনে অংশ নিয়েছিলেন। ২০১৭ সালে ভারতের কোচ হওয়ার আবেদন করেছিলেন। সেবার তিনি হারেন রবি শাস্ত্রীর কাছে।
- সদাগোপন রমেশ
তামিল নাড়ুর এই ওপেনার ভারতের হয়ে ভাল কিছু ম্যাচ খেলেছেন। তিনি ১৯ টি টেস্টে ১৩৬৭ রান করেন। অন্যদিকে ২৪ টি ওয়ানডে খেলে করেন ৬৪৬ রান। ওই সময় তিনি শিব সুন্দর দাসের সাথে ভারতের ইনিংসের সূচনা করতেন।
১৯৯৯ সালে অভিষেক। সে বছরের বিশ্বকাপও খেলেছিলেন। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শেষ বছর ২০০১। অবসর নেওয়ার পর তিনি রীতিমত অভিনেতা বনে যান। সুদর্শন চেহারার এই ক্রিকেটারকে তামিল ইন্ডাস্ট্রির ছবি ‘সান্তোষ সুব্রামানিয়াম’ ও ‘পোট্টা পোট্টি ৫০/৫০’-এ দেখা গেছে।