টেস্ট ক্রিকেটে এ পর্যন্ত অভিষেক ম্যাচে ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন সাতজন। সর্বশেষ জনের নাম ডেভন কনওয়ে। ২০২১ সালে কাঁটায় কাঁটায় ২০০ রান করে আউট হয়ে গিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।
এই তালিকার সবার প্রথমে যার নাম, তিনি হলেন ইংল্যান্ডের আর. ই. ফস্টার ওরফে টিপ ফস্টার। ১৯০৩ সালে অভিষেকেই করেছিলেন ২৮৭, যার মানে ডাবল সেঞ্চুরি। আর ১৩টা রান হলেই ইতিহাস হয়ে যেত।
এই ২৮৭’ও করেছিলেন সফরকারী দলের হয়ে, প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়ার মাঠ সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে। অমরত্বের জন্য এটুকুই যথেষ্ট ছিল। বাড়তি প্রলেপ হিসেবে ‘অভিষেকে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ রান’ রেকর্ডটা টিকে আছে আজ ১২০ বছর পরেও!
তালিকার তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠজনের নাম যথাক্রমে ব্রেন্ডন কুরুপ্পু, ম্যাথু সিনক্লেয়ার, জ্যাক রুডলফ ও কাইল মেয়ার্স। এর মধ্যে ব্রেন্ডন কুরুপ্পু ছিলেন আবার উইকেট কিপার। অভিষেকে ডাবল সেঞ্চুরি করার পথে অপরাজিত ছিলেন এই কুরুপ্পু আর জ্যাক রুডলফই।
তালিকার দ্বিতীয় নামটা লরেন্স রো। নিউজিল্যান্ডের সাথে প্রস্তুতি ম্যাচে ডাবল সেঞ্চুরি করার ফলে নির্বাচকরা তাকে বেছে নিলেন টেস্ট দলের জন্যও। নিজের ঘরের মাঠ কিংস্টনে অভিষেকও হয়ে গেল। আর সুযোগ পাওয়ামাত্রই করে বসলেন ডাবল সেঞ্চুরি, করলেন ঝকঝকে ২১৪।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্যাপ্টেন তখন স্যার গ্যারি সোবার্স। রো’র ডাবল সেঞ্চুরি এবং আরেক ওপেনার রয় ফ্রেডরিকসের সেঞ্চুরিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫০৮ রানের পাহাড়ে উঠে গেলে ইনিংস ঘোষণা করলেন স্যার গ্যারি।
ব্যাটিঙে নেমে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে শুরু করলো নিউজিল্যান্ড, এক পর্যায়ে স্কোর দাঁড়ালো ১০৮/৫। ফলো-অন এড়াতেই তখনও লাগে ২০১ রান। সেই অবস্থায় রুখে দাঁড়ালেন ওপেনার গ্লেন টার্নার এবং ওয়ার্ডসওয়ার্থ।
জ্বি না, কবি উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ নন, উইকেটকিপার কেন ওয়ার্ডসওয়ার্থ। এই দুজনের ২২০ রানের পার্টনারশিপে দূর হলো ফলো-অনের শঙ্কা।
ওয়ার্ডসওয়ার্থ ৭৮ রানে আউট হয়ে গেলেও গ্লেন টার্নারকে আর আউট করা গেল না, তিনি অপরাজিত থেকে গেলেন ২২৩ রানে। ‘ক্যারি দ্য ব্যাট থ্রু দ্য ইনিংস’ নামে ক্রিকেটে যে টার্মটা আছে, এই নিয়ে তিনি করলেন দ্বিতীয়বারের মতো। আগের বার করেছিলেন ইংল্যান্ডের সাথে। নিউজিল্যান্ডের ইনিংস শেষ হল ৩৮৬ রানে।
১২২ রানের লিড নিয়ে আবার ব্যাট করতে নামলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শুরু থেকেই চালিয়ে খেলতে লাগলো তারা। ওয়ান ডাউনে আবার নামলেন রো এবং আবার সেঞ্চুরি। তার সেঞ্চুরি হওয়ার সাথে সাথে ২১৮ রানে ইনিংস ঘোষণা করে দিলেন স্যার গ্যারি।
তবে, ম্যাচ জয়ের জন্য তার এই প্রচেষ্টা কাজে এল না। দ্বিতীয় ইনিংসে গ্লেন টার্নার তাড়াতাড়ি ফিরে গেলেও এবার হাল ধরলেন মার্ক বার্জেস। তার সেঞ্চুরিতেই ড্র করতে সমর্থ হলো নিউজিল্যান্ড।
তাতে লরেন্স রো’র ইনিংসদ্বয়ের মাহাত্ম্য কমেনি। টেস্ট ক্রিকেটের বয়স তখন ৯৫ বছর; দুই ইনিংসে জোড়া সেঞ্চুরি, অভিষেকে ডাবল সেঞ্চুরি দেখলেও একই সাথে দুটো জিনিসই দেখেনি কেউ কোনো ক্রিকেটারের ব্যাট থেকে।
লরেন্স রো সেটা করে দেখালেন। দুই ইনিংস মিলে তিনি যে ৩১৪ (২১৪+১০০) করলেন, তা একজন অভিষিক্তের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড হিসেবে টিকে আছে আজও। পরের স্থানে কে আছে, তা তো আগেই বলা হয়েছে। টিপ ফস্টার!
২০০৩ সালে একজন সঙ্গী পান রো। রানে অবশ্যই নয়, কীর্তিতে। ইয়াসির হামিদ বাংলাদেশের সাথে দুই ইনিংসে করেন সেঞ্চুরি (১৭০ ও ১০৫), আর তাতেই তিনি বসে যান লরেন্স রো’র পাশে। ১৪৭ বছর বয়সী টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেকের দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করার কীর্তি শুধুমাত্র এই দুজনেরই!
আশ্চর্য ও দু:খের ব্যাপার হচ্ছে, এত দুরন্ত শুরুর পরেও মাত্র ৩০’এই থেমে গেছে লরেন্স রো’র আন্তর্জাতিক টেস্টের সংখ্যা। অথচ, অভিষেকে সেই জোড়া সেঞ্চুরির পরে তিনি করেছিলেন আরও ৫টা সেঞ্চুরি, যার একটা ছিল আবার ট্রিপল! এরপরেও যে তার ক্যারিয়ার যে ডানা মেলতে পারলো না, তার দায় তার অদ্ভুত অসুখেরই!
ঘাসের প্রতি এলার্জির কারণে বেশিক্ষণ মাঠে থাকতে পারতেন না তিনি!
অদ্ভুত না? একজন অ্যাথলেট, যার খেলার বা কাজের জায়গা হলো ঘাসে ঢাকা মাঠ, তিনি যদি ঘাসেই এলার্জি বোধ করেন, তাহলে তাকে অদ্ভুত ছাড়া আর কী বলা যায়!
বিখ্যাত অভিনেতা পিটার ও’টুলের একটা বিখ্যাত মুভির নাম আছে ‘লরেন্স অব অ্যারাবিয়া’ নামে। আরবের মরুভূমিকে জয় করার কারণে তাকে এই নাম দেয়া গিয়েছিল।
লরেন্স রো আরবের মরুভূমিকে জয় করেননি। তবে তিনি কিংস্টনে যা করেছিলেন, তাতে তাকে ‘লরেন্স অব জ্যামাইকা’ বললে বোধহয় খুব একটা অত্যুক্তি করা হবে না!