সীমিত ওভারের ক্রিকেটে দ্রুত রান তোলাটা এখন আবশ্যকতায় পরিণত হয়েছে। শুরুর ওপেনিং পার্টনারশিপ, মিডল অর্ডারের সঙ্গ দেওয়া- এরপর সব দলই চায় শেষদিকে দলের রানটা ঝড়ের মতো বাড়ুক।
ঝড় তোলার জন্য থাকেন কিছু ‘স্পেশালিস্ট’ – তাঁদের বলা হয় ফিনিশার। ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টিতে এই ফিনিশাররা শেষের দিকের রানটা বাড়িয়ে নেন। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এই ফিনিশারদের কাজ আরো বেশি। শেষ চার ওভারে তো রীতিমত তাণ্ডব চালান তাঁরা। আজকে আমরা আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির সেরকমই সেরা কিছু ফিনিশারের গল্প জেনে নেব।
গ্লেন ম্যাক্সওয়েল (অস্ট্রেলিয়া)
অস্ট্রেলিয়ান অলরাউন্ডার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল এখন বিশ্বজুড়ে টি-টোয়েন্টি লিগগুলোর পরিচিত মুখ। অস্ট্রেলিয়া দলেও তিনি ব্যাট করে থাকেন নিচের দিকে। দলের রান শেষদিকে বাড়িয়ে নেওয়ার দায়িত্বই বর্তায় তাঁর ওপর। সচরাচর লোয়ার অর্ডারে ব্যাট করলেও দল উইকেট না হারালে শেষদিকে ব্যাটিংয়ের জন্যে ম্যাক্সওয়েলকে উপরেও উঠিয়ে নেওয়া হয়। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ৬০ ইনিংসে এই হার্ড-হিটার করেছেন ১৬৮৭ রান; স্ট্রাইক রেট ১৫৭.৯৫! ম্যাক্সওয়েলের চেয়ে বেশি স্ট্রাইক রেট আছে আর মাত্র দুইজনের।
ইয়ন মরগ্যান (ইংল্যান্ড)
প্রথমে আয়ারল্যান্ড এরপর ইংল্যান্ড; মরগানের ক্রিকেটীয় ইতিহাসটা বেশ লম্বাই বলা চলে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটটাও খেলছেন তিনি ১২ বছর হল। আর এখন হল ইংল্যান্ড দলের অধিনায়কই। ম্যাক্সওয়েলের মতই মরগানও ব্যাট করেন লোয়ার অর্ডারে, শেষ দিকে দ্রুত রান তোলার চাপ থাকে তাঁর ওপর। তবে প্রয়োজনে তিনিও নিজেকে উপরে উঠিয়ে আনেন। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ইংলিশ এই অধিনায়কের রান ২২৭৮; স্ট্রাইক রেট ১৩৮.৯৮! এখন অব্দি কোন সেঞ্চুরি না পেলেও নামের পাশে ১৪ হাফ-সেঞ্চুরি আছে তাঁর।
আন্দ্রে রাসেল (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
আন্দ্রে রাসেল এখন আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে তেমন খেলেন না। কিন্তু মেরুন জার্সিতে যখন তিনি খেলতেন আন্দ্রে রাসেলের ফিনিশিং টাচ ছিল চোখধাঁধানো। খুব কম সংখ্যক খেলোয়াড়েরই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি স্ট্রাইক রেট ১৫০ এর ওপরে, আন্দ্রে রাসেল সেই কম সংখ্যকদের দলে। এখন অব্দি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির ৪১ ইনিংসে রাসেলের রান ৫৪০। রানটা একটু কম মনে হলেও ১৪ বার অপরাজিত থাকা তাঁর ফিনিশিং স্বত্ত্বাটাই যেন ফুটিয়ে তোলে। এছাড়া পাঁচ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে রসেলের স্ট্রাইক রেট আছে ২০০ এর ওপর; ভাবা যায়!
বিরাট কোহলি (ভারত)
বিরাট কোহলি ব্যাট করেন একটু ওপরের দিকে। সচরাচর ফিনিশারদের যেমন পজিশনে ব্যাট করতে দেখা যায় বিরাট কোহলি তেমন পজিশনে ব্যাট করেন না। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি ফিনিশারের কাজটা করেছেন অনেকবার, ঐ অব্দি অপরাজিত থেকেই।
রান তাড়া করায় কোহলির এই গুণের জন্যে তাকে ‘চেজ-মাস্টার’ ডাকা হয়। নিজের দিনে তিনি প্রতিপক্ষের হাত থেকে ম্যাচ ছিনিয়ে নিয়ে তিনি যেকোন টি-টোয়েন্টি ম্যাচের গল্পটাই পাল্টে দিতে পারেন। এখন অব্দি ৭৯ টি-টোয়েন্টিতে ব্যাট করে কোহলির গড় ৫০.৪৮! এই ম্যাচগুলির মধ্যে কোহলি অপরাজিতই থেকেছেন ৭৯ ইনিংসে! টপ তিনে ব্যাট হাতে নেমেও এই ফিনিশারের মত পরিসংখ্যান ক্রিকেটে বিরল!
হার্দিক পান্ডিয়া (ভারত)
যদি শেষ ৬ বলে দলের ১৫ রানও লাগে, হার্দিক পান্ডিয়া দলের হয়ে খুব সম্ভবত সেই কাজটাও করে দেবে। শুরুর দিকের চাইতে পান্ডিয়া এখন আরো পরিণত হয়েছেন, মাঠেও তাঁর প্রমাণ মিলছে। এখন অবশ্য তিনি বোলিং করেন না, তবুও দলের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে তিনি সেরা পাফরমারদের একজন। শেষ হওয়া অস্ট্রেলিয়া-ভারত টি-টোয়েন্টি সিরিজেও তিনি জিতেছেন সিরিজ সেরার পুরস্কার। পান্ডিয়ার টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের স্ট্রাইক রেট ১৪৯.২৩!