‘অপরাজেয়’ জয়সওয়ালের জয়ধ্বনি

মাস ছয়েক আগে টেস্ট আঙিনায় পা পড়া জশস্বী জয়সওয়াল অভিষেকেই করেছিলেন বাজিমাত। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকেই তরুণ এ ব্যাটার খেলেছিলেন ১৭১ রানের ইনিংস। যা ভারতীয় হিসেবে শুধু অভিষেকে সেঞ্চুরির কীর্তিতেই নয়, অভিষেকে সবচেয়ে বেশি বল খেলা ও বিদেশের মাটিতে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ডেও তাঁকে বসিয়ে দিয়েছিল।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট দিয়ে পরিচিতি পাওয়া লাল বলের ক্রিকেটেও সক্ষমতার ছাপ রাখেন ওই টেস্ট দিয়েই। এরপর আরো চারটি টেস্ট খেলেছেন। ছন্দচ্যুতি ঘটেনি। পরের ৮ ইনিংসে ২ বার পঞ্চাশও পেরিয়েছেন। তবে শতকের পথে হেঁটেও যেন থেমে যাচ্ছিলেন সেঞ্চুরি না ছোঁয়ার আক্ষেপে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হায়দ্রাবাদ টেস্টে খেলেছিলেন ৮০ রানের ইনিংস।

তবে সেঞ্চুরি মিসের আক্ষেপটা আর দীর্ঘায়িত করলেন না। বিশাখাপত্তনমে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টেই পেরোলেন শতকের তিন অঙ্কের ফিগার। বাঁহাতি এ ব্যাটার যে ভারতের লাল বলের ক্রিকেটে লম্বা রেসের ঘোড়া হওয়ার পথে তার প্রমাণ রাখলেন এ ইনিংস দিয়েই। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বিশাখাপত্তনমে প্রথম দিন শেষে ৬ উইকেট ৩৩৬ রান নিয়ে চালকের আসনে ভারত। আর প্রথম দিনের পুরো তিন সেশন আর ৯৩ ওভার ক্রিজে দাঁড়িয়ে ১৭৯ রানে অপরাজিত রয়েছেন জশস্বী জয়সওয়াল। টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম শতকটিকে রূপান্তর করেছিলেন ১৭১ রানের ইনিংসকে। এবার দ্বিতীয় সেঞ্চুরিটিতে তিনি ছাপিয়ে গেলে প্রথম ইনিংসকেও। প্রথম দিন শেষে এখন রয়েছেন দ্বিশতকের দ্বারপ্রান্তে।

দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিনের সকাল থেকেই ছন্দে ছিলেন জয়সওয়াল। একদিক থেকে রোহিত শর্মা, শুভমান গিল, শ্রেয়াস আইয়াররা কিছু সময় সঙ্গ দিয়ে সাজঘরে ফিরে গেলেও নিজের ইনিংস চালিয়ে যান এ ব্যাটার। তাঁর ব্যাটে ভর করেই বড় রানের পথে এগিয়ে যায় ভারত। তবে পথটা কোনোভাবেই মসৃণ ছিল না। দুর্দান্ত এ ইনিংস খেলার পথে বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হয়েছে জয়সওয়ালকে। কিন্তু ইংলিশ বোলিং আক্রমণের কোনো শক্তিই টলাতে পারেনি তরুণ এ ব্যাটারকে।

প্রথম ম্যাচে স্পিন দিয়ে ভারতকে আটকানোর পর দ্বিতীয় ম্যাচেও ইংল্য়ান্ড পাখির চোখ করেছিল স্পিনকে। সেই ধারাবাহিকতায় ম্যাচের দ্বিতীয় ওভার থেকে স্পিনার আনতে থাকেন অধিনায়ক স্টোকস। অভিষিক্ত স্পিনার শোয়েব বশিরের শিকার হয়ে ফিরে যান রোহিত। রোহিতের পথ ধরে শ্রেয়াস আইয়ার, রজত পাতিদার, অক্ষর প্যাটেলরাও স্পিনজালে আটকা পড়েছেন। কিন্তু ব্যতিক্রম ছিলেন শুধু জয়সওয়াল।

শুরু থেকেই ইংলিশ বোলাদের চাপে রাখার কাজ করে গিয়েছেন। তাঁর পাল্টা আক্রমণে নাভিশ্বাস উঠে গিয়েছিল তরুণ শোয়েব বশির থেকে শুরু করে প্রবীণ জেমস অ্যান্ডারসনেরও। ফ্রন্টফন্ট, ব্যাকফুটের দারুণ মিশেল ঘটিয়ে পুরো ইনিংসেই খেলেছেন চোখ জুড়ানো শট। আর শতকের দ্বারপ্রান্তে থাকা জয়সওয়াল সেঞ্চুরিও পূরণ করেন দারুণ এক প্রতাপে। ৯৪ রানে ব্যাট করা অবস্থাতেই ছক্কা মেরে সেঞ্চুরি পূরণ করেন তিনি।

শতক পূরণের পরই অবশ্য থেমে যায়নি জয়সওয়ালের রানযাত্রা। এরপর দেড়শ রান পূরণ করেছেন। হেঁটেছেন ডাবল সেঞ্চুরির পথেও। দিনের শেষ বেলায় অপরাজেয় হয়েই মাঠ ছেড়েছেন এ ব্যাটার। ১৭৯ রান নিয়ে আবারও দ্বিতীয় দিন শুরু করবেন তিনি। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসটা এখন দ্বিশতকে রূপান্তরিত হয় কিনা সেটিই আপাতত দেখার বিষয়।

 

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link