সকালে মিরপুরে পা রেখে দুপুরেই হাফসেঞ্চুরি!

প্রথম ৩ ম্যাচে মাত্র একটি জয়। সেখান থেকেই এবারের বিপিএলের মাঝ অবধি পর্যন্ত পয়েন্ট টেবিলের চূড়ায় পৌঁছে যায় রংপুর রাইডার্স। উত্তরবঙ্গের দলটার এমন ঘুরে দাঁড়ানোর নেপথ্যে ছিলেন বাবর আজম। কিন্তু পিসিবির দেওয়া এনওসির মেয়াদ যে ছিল ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। টুর্নামেন্টের মাঝ পথেই তাই ফিরে যেতে হয় পাকিস্তানি এ ব্যাটারকে। কপালে চিন্তার ভাঁজ অনুমেয় রাইডার্সদের শিবিরে।

কোনো উপায়ন্তর খুঁজে না পেয়ে বাবরের রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে তাঁরা আনল প্রোটিয়া ব্যাটার রেজা হেনড্রিকসকে। বাবর যখন বাংলাদেশ ছাড়ছেন, তখনও তিনি বিপিএলের চলতি আসরের সর্বোচ্চ। অর্থাৎ রেজা হেনড্রিকস বাংলাদেশে আসলেন বটে। তবে আগেভাগেই পেয়েই গেলেন পারফর্ম করার চাপ কিংবা আভাস।

প্রোটিয়া এ ব্যাটার অবশেষে সব চিন্তার অবসান ঘটিয়ে বাবরের শূন্যস্থান ঠিকভাবেই পূরণ করলেন। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে ম্যাচে এ দিন তাঁর ব্যাটেই বড় সংগ্রহ পেয়েছে রংপুর রাইডার্স। বিপিএলের মঞ্চে প্রথমবারের মতো পা রেখেই খেলেছেন ৪১ বলে ৫৮ রানের একটি ইনিংস। যে ইনিংস খেলার পথে হাঁকিয়েছেন ৫ টি চার ও ৩ ছক্কা।

অথচ দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এ ক্রিকেটার বাংলাদেশে পৌঁছেছিলেন এই সকালেই। ঘন্টা খানেকের ব্যবধানে রংপুরের হয়ে ইনিংসটাও শুরু করলেন তিনি। শুধু শুরুই করলেন না, মিরপুরের পিচে অনভ্যস্ততাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে খেললেন দুর্দান্ত একটি ইনিংস।

উপমহাদেশের ব্যাটাররাই যে পিচে বোলারদের আগ্রাসনে খাবি খায়, সেখানে ভিন্ন মহাদেশের হেনড্রিকস পুরো ইনিংস খেললেন একদম আয়েসি ভঙ্গিতে, সাবলীল ব্যাটিংয়ে। দেখে বুঝার উপায় নেই, বাংলাদেশের মাটিতে প্রথমবারের মতো খেলছেন হেনড্রিকস!

শুরুটা করেছিলেন বিলাল খানের বলে ৩ রান তুলে নিয়ে। তবে এরপর টানা ৫ ডটে কিছুটা অস্বস্তিতেই পড়েছিলেন এ ব্যাটার। তবে সেই অস্বস্তির অবসান তিনি নিজেই পরবর্তীতে ঘটান শহিদুলের টানা দুই বলে ছক্কা ও চার হাঁকিয়ে। এর সালাউদ্দিল শাকিলের বলেও ছক্কা হাঁকান এ ব্যাটার। পাওয়ার প্লে-র পর অবশ্য নিজের ইনিংস বিল্ড আপ করার দিকেই নজর দিয়েছিলেন হেনড্রিকস।

তবে তাঁর ব্যাটিংয়ে সবচাইতে লক্ষণীয় ব্যাপার হয়ে উঠেছিল, পাওয়ার প্লে-র দারুণ স্ট্রাইক রোটেট করে ইনিংস এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা। সেভাবে বাউন্ডারি হাঁকাননি। কিন্তু মাত্র ৩ ডট বলের বিপরীতে সিঙ্গেলস, ডাবলসে নিজের স্ট্রাইকরেট ঠিকই ভদ্রস্থ অবস্থায় রেখেছিলেন। ফলশ্রুতিতে, পাওয়ার প্লে-তে ২১ বলে ২৩ রানে ব্যাট করতে থাকা হেনড্রিকস ৩৬ বলেই পৌঁছে যান ব্যক্তিগত অর্ধশতকে। এরপর যদিও নিজের ইনিংসকে দীর্ঘ রূপ দিতে পারেননি।

তবে ততক্ষণে বড় রানের ভিত্তি পেয়ে যায় রংপুর রাইডার্স। কেননা হেনড্রিকস ফেরার আগে তিনি রনি তালুকদারের ৬১ আর সাকিবের সাথে ৬০ রানের জুটি গড়েন। এরপর সেই রানটাকে আরেকটু উপরে নিয়ে যান নুরুল হাসান সোহান ও জিমি নিশাম। এ দুই ব্যাটারের তাণ্ডবে এবারের বিপিএলে প্রথমবারের মতো কোনো দল দুইশো পেরিয়েছে।

সপ্তাহ দুয়েক আগেই এসএ টি-টোয়েন্টি লিগে ৭৯ রানের দুর্দান্ত একটি ইনিংস খেলেছিলেন রেজা হেনড্রিকস। স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ক্যারিয়ারে রয়েছে ৪ টা শতকসহ পাঁচ হাজারেরও বেশি রান। বোঝাই যাচ্ছে, রংপুর রাইডার্স প্রোটিয়া এ ব্যাটারকে দলে ভিড়িয়ে মোটেই ভুল করেনি।

বরং হেনড্রিকস তাদের প্রত্যাশাকেও ছাপিয়ে গেলেন এ ইনিংস দিয়ে। প্রোটিয়া দূর্গ থেকে মিরপুরের পিচ, অনভ্যস্তাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ফিফটি তুলে নেওয়া নিশ্চয়ই চাট্টিখানি কথা নয়।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link