দুয়োধ্বনি আর বিপরীতমুখী স্লোগান- মিলেমিশে কেমন এক শ্রুতিকটু পরিবেশ। অথচ একটা সময় সমস্বরে ‘সাকিব সাকিব’ কোরাসে গমগম করত গোটা ‘হোম অব ক্রিকেট’। বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভক্তকূল আজ দু’ভাগে বিভক্ত। তব সেই বিভক্তিতে নিশ্চয়ই সত্য বদলে যায় না। সাকিব আল হাসান নামক ক্রিকেটারের সমস্ত ব্যক্তিগত পরিসংখ্যানে ফাটল ধরে না।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের দশম আসর শুরু হতে না হতেই সাকিবকে কেন্দ্র করে নানান ঘটনার সূত্রপাত ঘটে। তার চোখের সমস্যার কারণে তিনি ঠিকঠাক ব্যাটিং করতে পারছিলেন না। ব্যাটিং করবার সময় তার মাথার অবস্থান তাই বাধ্য হয়েই পরিবর্তন করতে হয়েছে সেটার সাথে মানিয়ে নিতেও বেশ খানিকটা সময় ব্যয় করতে হয়েছে।
তবে সাকিব সময়কে হেলা করেননি একবিন্দু। অক্লান্ত পরিশ্রম করে নতুন হেড পজিশনের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে গেছেন। অবশেষে অল্প অল্প করে ফেরার সুবাতাস দিতে শুরু করেছেন, ঠিক গ্রীষ্মের দিনে তালপাতার পাখার মত। তবে একটু ছন্দ খুঁজে নিতেই নতুন এক রেকর্ডে জায়গা করে নিয়েছেন সাকিব আল হাসান।
বিশ্ব ক্রিকেটের সম্প্রসারণের সাথে সাথে, বেড়েছে ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের সংখ্যা। সাকিব খেলেছেনও সকল প্রান্তে। তবে ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটারদের মত কদর তিনি পাননি কোথাও। ম্যাচ খেলার সুযোগই তুলনামূলক কমই পেয়েছেন। তাছাড়া বেশ কিছু ম্যাচে তো ব্যাট হাতে বাইশ গজে নামার সুযোগটুকু মেলেনি তার।
তবুও প্রথম অলরাউন্ডার হিসেবে বিরল এক রেকর্ডে ঠিকই জায়গা করে নিয়েছেন সাকিব আল হাসান। স্রেফ সাকিব যেকোন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ৭০০০ এর বেশি রান করেছেন। এছাড়া ৪৫০টির বেশি উইকেটও শিকার করেছেন তিনি। অলরাউন্ডার হিসেবে এমন রেকর্ডে নাম লেখাতে পারেননি আর কোন ক্রিকেটার।
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে বিপিএলে প্রায় ১৬৮ এর বেশি স্ট্রাইকরেটের ইনিংস খেলেছেন সাকিব। ব্যাট হাতে রান করেছেন ১৬ বলে ২৭। তার মধ্য দিয়েই সাত হাজারি ক্লাবে প্রবেশ করেন বাংলাদেশের ‘পোস্টার বয়’। রান সংগ্রহের দিক থেকে তার পেছনে এখনও রয়েছে বেশ বড় বড় নাম। বোলার হিসেবে উইকেট শিকারে সেরা পাঁচেই রয়েছেন সাকিব।
চট্টগ্রামের বিপক্ষে দুইটি উইকেট শিকার করেছেন অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার। তাতে করে ৪২২ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে এই মুহূর্তে তার উইকেটের সংখ্যা ৪৭৬টি। তাছাড়া ৭০১৯ রানও রয়েছে তার নামের পাশে। দ্বিতীয় বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে সাত হাজারি টি-টোয়েন্টি রানের ক্লাবে প্রবেশ করলেন সাকিব। প্রথম নামটি তামিম ইকবাল খানের। তবে অলরাউন্ড পারফরমেন্সে সাকিব যেন বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে উজ্জ্বল অধ্যায়।
মাঠের ভেতরের সাকিব পুরো আলাদা একটা চরিত্র। তাকে মাঠের বাইরের কোন ঘটনা দিয়েই আসলে পরিমাপ করা অমূলক। কনক্রিটের সিঁড়ি বেয়ে সবুজ ঘাসে পা রাখা মাত্রই সাকিব যেন বনে যান একজন ‘সুপারম্যান’। তিনি বিনোদিত করতে চান গোটা স্টেডিয়ামকে। তিনি জয়ের কারিগর হতে চান নিজ দলের। এসব কিছু নিশ্চয়ই দুয়োধ্বনির ফাঁপা চিৎকারে চাপা পড়ে যায় না।